Advertisement
E-Paper

সওয়া পাঁচ ঘণ্টা পর নড়ল পলিটব্যুরো, অনড় শুধু কারাট

সোমনাথ-বিদায়ের দিনে কারাটের জেদকে অবশ্য কিছুটা অতিক্রম করতে পেরেছেন ইয়েচুরি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতায় আসার আগে দৌড়েছিলেন দিল্লির এ কে জি ভবনে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৩

নাহ্! পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকব না!

বাড়ি বয়ে বারংবার অনুরোধ করতে আসা সীতারাম ইয়েচুরিকে বলে দিয়েছিলেন তিনি। দু’লাইনের আবেদনপত্র নিজে হাতে লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন ইয়েচুরি। কাকপক্ষীও জানবে না এ সব কথা, তিনি যেন শুধু ‘হ্যাঁ’ বলে দেন— আর্জি ছিল সিপিএমের তৎকালীন সংসদীয় নেতার। কিন্তু সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ‘হ্যাঁ’ বলেননি। আমৃত্যু সেই মতই বজায় থাকল!

আর উল্টো দিকে ‘না’ থেকে গেল আর এক জনেরও! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, সকলে শোকবার্তা দিচ্ছেন। সোমনাথবাবুর কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ পাথেয় করেই তিনি আজ লোকসভা পরিচালনার দায়িত্বে— এই কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলছেন বর্তমান স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। কিন্তু তিনি নীরব! প্রশ্ন করলেও তাঁর কিছু বলার নেই। শোক, শ্রদ্ধায় একটা শব্দও না! তিনি প্রকাশ কারাট! সিপিএম এবং সোমনাথের মাঝখানে তিনি যেন এক নিরেট দেওয়াল!

সোমনাথ-বিদায়ের দিনে কারাটের জেদকে অবশ্য কিছুটা অতিক্রম করতে পেরেছেন ইয়েচুরি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতায় আসার আগে দৌড়েছিলেন দিল্লির এ কে জি ভবনে। তত ক্ষণে কংগ্রেসের রাহুল থেকে এডিএমকে-র তাম্বিদুরাই শোকপ্রকাশ করে দিয়েছেন। ইয়েচুরির লড়াই ছিল, ‘বহিষ্কৃত’ সোমনাথবাবুর রাজনৈতিক উচ্চতা মনে রেখে দলের পলিটব্যুরোকে বিবৃতি দিতে হবে। এবং সেই বিবৃতিতে কোনও ‘অপ্রিয় শব্দ’ থাকা চলবে না। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের প্রয়াণের অব্যবহিত পরে অন্তত পলিটব্যুরোর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে পাশে পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। সোমনাথবাবুকে বহিষ্কারের সময়ে কারাটের পিছনে দাঁড়িয়েছিল যে কেরল শিবির, তার প্রধান মুখ, অধুনা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন পর্যন্ত গুচ্ছ গুচ্ছ ভাল কথা বলছেন প্রাক্তন স্পিকার সম্পর্কে!

শোক-বিবৃতিতে কী বলল পলিটব্যুরো? বলা হয়েছে, ‘দেশের সাংবিধানিক ভিত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সোমনাথের। বিশেষত, ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষার পক্ষে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন’। দলের এক নেতার মতে, ‘‘আশ্চর্য পরিহাস যে, সাংবিধানিক দায়িত্ব মেনে স্পিকার পদ ছাড়তে না চাওয়ার জন্যই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল!’’ দিল্লি থেকে অন্য এক পলিটব্যুরো সদস্যের গলায় ভেসে এল পরিষ্কার ক্ষোভ, ‘‘ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার ঘিরে সেই বিতর্কের সময়ে সোমনাথদা বলেছিলেন, কংগ্রেস আর বিজেপির বিপদকে এক করে দেখো না তোমরা! কিছু ভণ্ড নেতার চাপে সে দিন কথা শোনা হয়নি। সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবদানের কথা আজ অন্তত রেকর্ডে থাক!’’

আরও পড়ুন: দ্বিধাথরথর সিপিএম, পলিটব্যুরোর শোকবার্তা এল ৫ ঘণ্টা পর

পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে অবশ্য ‘কমরেড’ সম্বোধনটা নেই। যদিও রাজ্য কমিটি তাঁকে ‘কমরেড’ বলেই উল্লেখ করেছে তাদের বিবৃতিতে। আলিমুদ্দিনে ডেকে রাখা রাজ্য কমিটির বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে সোমনাথবাবুকে শ্রদ্ধা জানাতে। মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র সোমবার সকালে বেসরকারি হাসপাতালে অন্য সকলের আগে পৌঁছেছিলেন পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে সোমনাথদা পিতৃসম। সংসদে যেটুকু কাজ করি, তার জন্য ওঁর কাছে কৃতজ্ঞতা অসীম। সংসদে যাঁরাই ওঁকে পেয়েছেন, সকলেই একই কথা বলবেন।’’ পরে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। বিধানসভায় তাঁর মরদেহে কাঁধ দিয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্যের মতো বিধায়ক। দিনভর প্রতিটা মুহূর্তই বুঝিয়ে দিয়েছে, সংসদীয় রাজনীতির আঙিনায় কখনও পা না রাখা কারাটকে শেষমেশ অপ্রাসঙ্গিক করেই দিয়েছেন প্রয়াত সোমনাথ!

আরও পড়ুন: দলের নির্দেশ অমান্য করেছিলেন সংসদীয় দায়িত্ববোধ থেকেই

কিন্তু দেহের উপরে লাল পতাকা? আজীবন কমিউনিস্টের সেই ‘অন্তিম মর্যাদা’ তো সোমনাথবাবুর অধরাই থাকল? সেলিম, নীলোৎপল বসুরা বলছেন, তাঁদের দিক থেকে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু পরিবারের মতের উপরে এমন দিনে কিছু চাপিয়ে দিতে তাঁরা চাননি। শেষ কথাটা সম্ভবত বলছেন ইয়েচুরিই— ‘‘আমাদের বলায় আর কী আসে যায়? সোমনাথদা নিজেকে যে কোনও দলের ঊর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছিলেন। ধাক্কাটা কোথায় লাগছে, বোঝাতে পারব না!’’

আরও পড়ুন: সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল

Somnath Chatterjee Death সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy