Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Afghanistan Crisis

Taliban: তাঁদের নুর তালিবান! দশ বছরেও টের পাননি সঙ্গীরা

নুরের সহযোগী অন্তত ১৭ জনের খোঁজ শুরু করেছে দেশের ‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স উইং’।

নুর মহম্মদ

নুর মহম্মদ ছবি: টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫২
Share: Save:

দু’হাতে আড়াআড়ি ধরা একে-৪৭। ছিমছাম পাগড়ি। পরনে গোড়ালি ছোঁয়া গোলাপি শেরওয়ানি। ঠোঁটে ঠান্ডা হাসি। ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ উজিয়ে দেশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়া লোকটার ছবি দেখে মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল নাগপুরের বিঘোরি এলাকার এক চৌখুপ্পি ঘরের জনা দশেক আফগান কাবুলিওয়ালার। দেশোয়ালি আবেগে দশটা বছর ধরে যার সঙ্গে পেশা এবং এক চিলতে ঘরে পাশাপাশি বিছানা ভাগ করে কাটিয়েছেন, সেই নুর মহম্মদ কিনা তালিবান!

বৈধ কাগজপত্র না-থাকায় সদ্য আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো সেই নুর মহম্মদের ঠিকুজির খোঁজে নেমে দেশের ‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স উইং’ বা ফৌজি গোয়েন্দারা এখন টের পাচ্ছেন, নিছক কাবুলিওয়ালার চেনা পেশা নয়, নুরের অভিসন্ধি ছিল ‘অন্য’ কিছু। তাই নুরের তত্ত্বতালাশ শুরু করে ফৌজি গোয়েন্দা শাখা। আর সেই কাজে নেমেই কপালে ভাঁজ পড়েছে তাদের। তাই এ বার নুরের সহযোগী অন্তত ১৭ জনের খোঁজ শুরু করেছে তারা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, অন্য পেশার আড়ালে এ দেশে ছড়িয়ে থাকা নুরের সেই সহযোগীরা আদতে তালিবানের সমর্থক কিংবা কট্টরপন্থী কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

ফৌজি গোয়েন্দাদের সেই সন্দেহের সুতোয় জড়িয়ে গিয়েছে আরও একটি নাম— ‘শেরু’, একদা তালিবান নেতাদের অন্যতম মগজ শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। তালিবান জমানায় আফগানিস্তান যাকে এক ডাকে চিনত ‘শেরু’ বলেই। ১৯৯০ সাল নাগাদ আফগান ক্যাডেট হিসেবে যার সেনা প্রশিক্ষণ হয়েছিল এ দেশের মাটিতেই, দেহরাদূনের মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে। সেনা বিভাগের নথি সে-কথাই বলছে। ফৌজি গোয়েন্দা শাখার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শেরু অবশ্য নরমপন্থী (মডারেট) তালিবান বলেই পরিচিত ছিল। আফগানিস্তান থেকে রুশ সেনা সরে যাওয়ার পরে তালিবান জমানায় সে ছিল আফগানিস্তানের বিদেশ দফতরের দায়িত্বে।’’ ক্লিন্টন জমানায় তালিবানের যে-প্রতিনিধিদল আমেরিকায় গিয়েছিল, শেরু ছিল তার সদস্য। সেনা সূত্রের খবর, আপাতত আরব দুনিয়ার দোহায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে তালিবানের এই অন্যতম মগজাস্ত্র। এ দেশে তার পা না-পড়লেও ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ‘ছদ্মবেশী’ তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে বলেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ। নুরের গতিবিধির খোঁজে নেমে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে।

তবে ফৌজি গোয়েন্দা নয়, নুরের গতিবিধি যে তেমন সুবিধার নয়, সেটা প্রথম আঁচ করেছিল নাগপুর পুলিশ। কয়েক মাস নজরদারির পরে নাগপুরের পুলিশই তাকে জেরা শুরু করেছিল। আর তখনই টের পাওয়া যায়, নুর মহম্মদ আদতে আব্দুল হক। ২০১০ সালে মাত্র ছ’মাসের টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে এলেও আফগানিস্তানে ফেরার নাম আর করেনি সে। বরং শরণার্থী হিসেবে এ দেশে পাকাপাকি ভাবে ঠাঁই গেড়ে বসার জন্য সে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের কাছেও। যদিও সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। আর্জি বাতিলের পরেও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় গা-ঢাকা দিয়ে নুর এ দেশে কাটিয়ে দিয়েছিল দশ-দশটা বছর। শেষ পর্যন্ত গত ২৩ জুন আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ তাকে আটক করতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে তার আসল পরিচয়— আব্দুল হক। ফৌজি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, তার বাম কাঁধে যে-গভীর ক্ষতচিহ্নের হদিস পাওয়া গিয়েছিল, তা গুলি ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়ার নমুনা। ‘‘ওই পুরনো ক্ষতচিহ্নটি নুর মহম্মদ সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ ওই ধরনের ক্ষত সাধারণ বন্দুকের গুলিতে হয় না,’’ বলেন ফৌজি গোয়েন্দা শাখার এক আধিকারিক।
ক্ষত নিয়ে পর্যালোচনার মধ্যেই গোয়েন্দাদের সুলুকসন্ধানে উঠে আসতে থাকে একের পর এক নাম। তত দিনে ভারত সরকারের নির্দেশে নুরকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় আফগানিস্তানে। পরে জানা যায়, নুরের ভাইও পরিচিত তালিবান যোদ্ধা। তার ঠিকুজি ঘেঁটে একের পর এক চমকে দেওয়া তথ্য সন্ধানের মধ্যেই অগস্টের গোড়ায় নিজের নিভৃত তালিবান যোদ্ধার পরিচয় সামনে আনে নুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Crisis taliban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE