খুব খারাপ লাগছে। বৃহস্পতিবারের দুপুরটা যে এমন হয়ে যাবে ভাবিনি। দীর্ঘদিন সরকারি বিমান চলাচল ব্যবস্থায় ‘অপারেশনসে’ কাজ করেছি। তাই কোনওখানে বিমান দুর্ঘটনা বা যাত্রীদের প্রাণহানি শুনলেই ব্যক্তিগত ভাবে খারাপ লাগে। আমদাবাদের দুর্ঘটনার কথা যতটুকু বিভিন্ন মাধ্যমে দেখার এবং খোঁজ করার সুযোগ পেয়েছি, তার ভিত্তিতে জেনেছি, বিমানটি বোয়িং ড্রিমলাইনার সিরিজ়ের ছিল। তা কিন্তু যথেষ্ট ভাল মানের।
তবুও যা বুঝলাম, রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওঠার পরেই কিছু একটা গোলযোগ হয়। তার ফলে এক-দেড় মিনিটের মধ্যে এই মর্মান্তিক ঘটনা। নব্বইয়ের দশকেও গুজরাতে ঠিক একই রকম একটি দুর্ঘটনার কথা শুনেছিলাম। সেখানেও সেই সময় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিল।
এখন সরকারি বিমান সবই দেশের একটি নামী সংস্থা কিনে নিয়ে চালাচ্ছে। কী কারণে দুর্ঘটনা তা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবেন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে আমার দেখে মনে হয়েছে, রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওঠার পরে পর্যাপ্ত উচ্চতায় যেতে পারেনি বিমানটি। শুনলাম, চালক নাকি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ‘মে ডে সিগন্যাল’ অর্থাৎ বিপদ সঙ্কেত ও দিয়েছিলেন।
অসামরিক বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় নিরাপত্তা কড়াকড়ি এবং প্রযুক্তি দিন দিন যথেষ্ট উন্নততর হচ্ছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবায় বিমান চালানোর ক্ষেত্রে যে চালক এবং সহ-চালক ছিলেন, তাঁরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ বলেই শুনেছি। তা ছাড়া, চালকদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
শুধু তাই নয়, যাত্রী নিয়ে ওড়ার আগে এবং নামার পরে বিমানের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি যাচাইয়ের রুটিন কাজ হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর লম্বা বিরতি দিয়ে আরও ভাল করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। কারণ, একটি বিমানে হাজারো রকমের প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করে। সুরক্ষার প্রতিটি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানের হতে হয়। দেশের অসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
যে কোনও রকম ছোটখাটো ত্রুটি থাকলেও বিমানকে আকাশে ওড়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। কিন্তু তার পরেও কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আশা করা যায়, বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার হলে তা থেকে দুর্ঘটনার কারণ আরও অনেকটাই পরিষ্কার হবে।
(প্রাক্তন স্টেশন ইনচার্জ, এয়ার ইন্ডিয়া, বাগডোগরা বিমান বন্দর।)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)