E-Paper

‘টেক অফের’ আগে সমস্যা দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা

আমদাবাদের ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বিমান ওড়ার আগে ওই ‘ডিজিটাল চেকলিস্ট’ বিমানচালকরা খতিয়ে দেখেননি, এমনটা হতে পারে না— বলছেন বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টেরা। বস্তুত, বহু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না করলে বিমান নড়ানো সম্ভব নয়, বলছেন তাঁরা।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৮:৩৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বোয়িং সংস্থার ড্রিমলাইনারের মতো আধুনিক উড়ান নিয়ে আকাশে ওড়ার আগে বিমানচালকদের প্রায় ১৪ দফা ‘চেকলিস্ট’ বা বিষয় যাচাই করে দেখতে হয়। তার মধ্যে বিমানের কন্ট্রোল, অগজ়িলিয়ারি ফুয়েল পাম্প, ইঞ্জিন, প্রপেলার, রেডিয়ো, ফিল্টার, ফ্ল্যাপ, ট্রিম-সহ নানা বিষয় থাকে। ট্রিমের মধ্যে আবার বিমানের এলিভেটর, রেডার, ভরকেন্দ্র ঠিক রাখার যন্ত্র উপযুক্ত অবস্থানে আনার মতো বিষয়ও থাকে। এমনকি, বিমানটি ওড়ানোর উপযুক্ত কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রক্ষণাবেক্ষণের বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া লগবুকও খতিয়ে দেখতে হয়।

আমদাবাদের ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বিমান ওড়ার আগে ওই ‘ডিজিটাল চেকলিস্ট’ বিমানচালকরা খতিয়ে দেখেননি, এমনটা হতে পারে না— বলছেন বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টেরা। বস্তুত, বহু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না করলে বিমান নড়ানো সম্ভব নয়, বলছেন তাঁরা। তাই দুর্ঘটনার দিন ড্রিমলাইনার বিমানটির ‘টেক অফের’ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয় বলেই মনেকরছেন বিমানচালক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

বিমানের ‘ল্যান্ডিং’ এবং ‘টেক অফ’ করার সময় ইঞ্জিনে জ্বালানির প্রবাহ ঠিক রাখতে দু’টি আলাদা পাম্প কাজ করে। দু’টি ইঞ্জিনও কাজ করে স্বতন্ত্র ভাবে। ওই পাম্পে সমস্যা হলে ইঞ্জিন জ্বালানি সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত পাম্প থাকে, যাতে সবসময় জ্বালানির প্রবাহ ঠিক রেখে ইঞ্জিন থেকে উপযুক্ত জোর মেলে।

ড্রিমলাইনার বিমানে সুরক্ষার নিখুঁত ব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও দু’টি ইঞ্জিন কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে আচমকা সম্পূর্ণ বিকল হল, তা ভাবাচ্ছে সব মহলকে। একই সঙ্গে বিমানের উন্নত কম্পিউটার এবং বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার সমস্যা এ ক্ষেত্রে কোনও অন্তরায় হল কি না, সে প্রশ্নও উঠছে।

বিমানের বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা মূলত ইঞ্জিনের সচল থাকার উপর নির্ভরশীল। সেখানে আচমকা যে ভাবে র‌্যাম এয়ার টার্বাইন খুলে সচল হয়েছে, তাতে অন্য কোনও কারণে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার তত্ত্বও সামনে আসছে। এ ক্ষেত্রে ওই টার্বাইন নিজে থেকে চালু হয়ে গেলেও চালকরা পরিস্থিতি সামলানোর সময় পাননি বলে মনে করা হচ্ছে। সব কিছু দেখে শুনে ‘টেক অফ’ করার পরেও শুরুতেই এই ভাবে ইঞ্জিনের বিকল হওয়া এই প্রথম, বলছেন বিমানচালকদের বড় অংশ।

ড্রিমলাইনার উড়ানের বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার নানা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গত, ২৯ মে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে মুম্বইগামী ড্রিমলাইনার উড়তে প্রায় ২৮ ঘণ্টা দেরি হয়। উড়ানের সময়ে যাত্রীদের একাংশ বিমানের কেবিনে মধ্যে বৈদ্যুতিক তারের পোড়া গন্ধ পান বলে অভিযোগ। তখন উড়ান মুলতুবি রেখে তা পরীক্ষা করে, সমস্যার হদিশ পান কর্তৃপক্ষ। তা মেরামত করে পরের দিন বিমানটি মুম্বই রওনা হয়। যাত্রীদের এ জন্য ক্ষতিপূরণও দেন কর্তৃপক্ষ।

এ দিন বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার হয়েছে। ওই যন্ত্রের তথ্য যাচাই করলে ককপিটের মধ্যে অস্বাভাবিক শব্দ, বিমানের ঝাঁকুনি, বিভিন্ন অ্যালার্ম, চালকদের কথাবার্তা সংক্রান্ত তথ্য থেকে দুর্ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিন বোয়িং কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। বিমান মন্ত্রকের পৃথক তদন্তকারী কমিটিও এ দিন বৈঠক করেছে বলে খবর। তবে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পর দুই যন্ত্রের তথ্য যাচাই করতে অন্তত ২০ দিন লাগতে পারে বলে সূত্রের দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ahmedabad Plane Crash Air India Plane Accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy