E-Paper

‘গাড়ির কাচ ভেঙে বার করলাম গলে যাওয়া দেহ’

আর পুলিশের লাঠি খেতে খেতে বিস্ফোরণস্থলের উল্টো দিকে গৌরীশঙ্কর মন্দির থেকে পিছু হটে শিসগঞ্জ গুরুদ্বারে এসে ঠেকল বিপুল ভিড়।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৫
বিস্ফোরণে ধ্বংস গাড়ি, অটো। উদ্ধারকাজে দমকল কর্মীরা। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে।

বিস্ফোরণে ধ্বংস গাড়ি, অটো। উদ্ধারকাজে দমকল কর্মীরা। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে। ছবি: পিটিআই।

দূষণে এমনিতেই ধোঁয়াচ্ছন্ন রাজধানী। আর আজ রাতের পরে আতঙ্কের বাড়তি ধোঁয়াশায় ঢেকে গেল লাল কেল্লা, চাঁদনি চক চত্বর।

“আকাশে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিল আগুন। পুরোপুরি লাল হয়ে গিয়েছিল আকাশ। বেশ কিছু ক্ষণের জন্য।” বলছেন আজ সন্ধ্যায় গাড়ি বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী আকবর আলম। নিজের ছোট একটি তালা চাবির দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে সামান্য দূরে বাড়ি যাওয়ার পথ ধরতে পা বাড়িয়েছিলেন। আর এগোনো হয়নি। সুভাষ মার্গের সেই রাস্তা সম্পূর্ণ সিল করে দিয়েছে পুলিশ, লাল কেল্লার মেট্রোর গেট এখন বন্ধ। বিস্ফোরণে কিছু ক্ষণ পরে ‘গ্রাউন্ড জ়িরো’তে পৌঁছে দেখি ছোট ছোট জটলায় মানুষ সামনে দেখা আতঙ্কের দৃশ্য একে অন্যকে বলে একটু হালকা হওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে তা বেশিক্ষণ নয়। একের পর এক বাতি জ্বালানো গাড়ি ঢুকতে শুরু করল সুভাষ মার্গে। বিস্ফোরণ হয়ে গেলে তা ভিআইপি জ়োন হয়ে ওঠে রাতারাতি! আর পুলিশের লাঠি খেতে খেতে বিস্ফোরণস্থলের উল্টো দিকে গৌরীশঙ্কর মন্দির থেকে পিছু হটে শিসগঞ্জ গুরুদ্বারে এসে ঠেকল বিপুল ভিড়। সেই ভিড়ে থাকা মানুষই প্রাথমিক উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন। তবে আতঙ্ক, উত্তেজনা, ক্ষোভ মিলেমিশে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের উল্টো দিকের চাঁদনি চক থেকে কাশ্মীরি গেটের রাস্তা আজ রাতে টাল সামলাতে পারছে না। এই এলাকা কলকাতার বড় বাজারের মতো। কেনা-বেচা সেরে পণ্যের বস্তা নিয়ে অনেকেই বাড়ি ফেরেন রাতে, আজ সবাই মাল সমেত রাস্তায় আটকে। আটকে টেম্পো, ভ্যান, ম্যাটাডোর, রিকশা। যত্রতত্র রাস্তা বন্ধকরছে পুলিশ।

“সিলিন্ডার ফেটেছে বলে চালালে তো হবে না। আমরা নিজে হাতে গাড়ির কাচ ভেঙে মানুষের শরীর বার করেছি। গলে গিয়েছে শরীর। বিস্ফোরণটা হয় হুন্ডাই আই-২০ গাড়িতে। তার আগুন ছড়িয়ে যায় সামনের চার-পাঁচটা গাড়িতে।” জানাচ্ছেন সন্ধ্যা থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষগুলি যাঁরা পুলিশ, অ্যাম্বুল্যান্স আসার আগেই স্ট্রেচার জোগাড় করে দেহ বার করেছেন একের পর এক। এমনই এক যুবক শাহনূর আলম বলছেন, “বিস্ফোরণের পরে ছিটকে এসে এখানে পড়েছে মাংস।” অঙ্গুলি নির্দেশ করে যেখানে দেখাচ্ছেন তিনি, দাঁড়িয়ে আছি তার থেকে বড়জোড় দু’শো মিটার দূরে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার উপায় নেই, পুলিশ বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে রাস্তা।

“আমি নিজেই অন্তত পাঁচটা বডি বার করেছি গাড়ি থেকে,” উদভ্রান্তের মতো জানাচ্ছেন স্থানীয় জুতোর দোকানের কর্মী সেলিম। রাতে থাকেন দোকানেরই একটি ঘরে। “এতটা আকাশছোঁয়া আগুন আমরা আগে কখনওই দেখিনি। এখন ভয় হচ্ছে, সিরিয়াল বিস্ফোরণ হবে না তো। যেমনটা হয়েছিল মুম্বইয়ে?” বলছেন, “স্ট্রেচার এল, কোনওমতে এক জনকে বার করলাম গাড়ি থেকে, রাস্তায় এনে শোওয়ালাম আমরা। তখন জোশের মাথায় কাজ করেছি, বুঝতে পারিনি। হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ

করতে গিয়ে দেখি মাথার খুলিটাই উড়ে গিয়েছে আর হাঁটুর নীচ থেকে নেই!” বলতে বলতে গলা ধরে এল সেলিমের। তাঁরই মতো, পুরনো দিল্লির এই ঘিঞ্জি জনবসতির রাতের ঘুম উড়ে গেল আজ থেকে। কত দিনের জন্য? হয়তো অনির্দিষ্ট কাল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Blast

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy