E-Paper

কারখানায় ভাটা, কমল বৃদ্ধির হার

গত অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দেখা গিয়েছিল, অর্থনীতির ইঞ্জিনে বিশেষ গতি নেই। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ ০৬:২৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গত বছর তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদী। কোভিড পরবর্তী সময়কালে সেই বছরেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল সর্বনিম্ন। গত চার বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার কখনও এতটা কমেনি।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বছর বা ২০২৪-২৫-এ আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলত কারখানার উৎপাদনের শ্লথ গতির ফলেই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। বিগত বছরে কারখানার উৎপাদনে বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৫ শতাংশ। এর আগের অর্থ বছর বা ২০২৩-২৪-এ আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৯.২ শতাংশ। সে সময় কারখানার উৎপাদনে বৃদ্ধির হারও ১২.৩শতাংশ ছিল।

গত অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দেখা গিয়েছিল, অর্থনীতির ইঞ্জিনে বিশেষ গতি নেই। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই তুলনায় শেষ তিন মাস বা জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু এই তিন মাসেও কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশে আটকে থেকেছে। এক বছর আগেও এই তিন মাসে কারখানার উৎপাদন ১১.৩ শতাংশ হারে বেড়েছিল। কারখানার উৎপাদনে এই ভাটার টান সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে টেনে নামিয়েছে। ফলে গোটা অর্থ বছরের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশেই থমকে গিয়েছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের প্রাথমিক অনুমান অবশ্য এমনটাই ছিল। কিন্তু বাস্তব হল, কোভিডের বছর ২০২০-২১-এর পরে আর্থিক বৃদ্ধি এতখানি কম হয়নি।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গৃহস্থের খরচ ২০২৪-২৫-এ ৭.২% হারে বেড়েছে। আগের বছরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৬% ছিল। কিন্তু যে মাপকাঠিতে নতুন লগ্নি মাপা হয়, সেই সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র মিলিয়ে নতুন সম্পদ বৃদ্ধির হার বিগত অর্থ বছরে ৭.১ শতাংশে নেমে এসেছে। যা তার আগের বছরে ৮.৮% ছিল।

অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ যুক্তি দিয়েছেন, হতে পারে, চার বছরে বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন। কিন্তু এখনও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি। জানুয়ারি-মার্চে ৭.৪ শতাংশের আর্থিক বৃদ্ধি প্রমাণ করে, অর্থনীতির ইঞ্জিন এখনও জোর গতিতে ছুটছে। কারখানার উৎপাদনের করুণ দশা নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ হয়েছে। তার ফল সময়ের সঙ্গে দেখা যাবে।’’

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘কারখানার উৎপাদনের ছবি উদ্বেগজনক। সেই বাস্তব না মেনে নিয়ে সরকার এখন গল্প বানাচ্ছে। কারখানার উৎপাদন বাড়াতে ১১ বছর আগে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ চালু হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, এর ফল দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।’’

আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে আটকে থাকলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত অর্থনীতির জন্য দু’দশক ধরে টানা ৮% আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন। আজ নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, ২০৪৭-এ দেশের জিডিপি ৩০ লক্ষ কোটি ডলার হতে হলে, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৫% হওয়া প্রয়োজন। কারখানার উৎপাদনে ১৫% বৃদ্ধি প্রয়োজন। জিডিপি-র ২৫% কারখানা থেকে আসতে হবে। এখন জিডিপি-র মাত্র ১৭% মতো কারখানা থেকে আসে।

সরকারের জন্য স্বস্তির কথা হল, গোটা অর্থ বছরেই কৃষিক্ষেত্রের ছবি ভাল ছিল। অর্থ বছরের শেষ বেলায় নির্মাণ ক্ষেত্রেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে গত অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২%, যা আগের বছরের ৯ শতাংশের থেকে কম। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মতে, জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হারে যে গতি দেখা গিয়েছে, তা এপ্রিলেও অব্যহত ছিল। তাঁর মতে, মূল্যবৃদ্ধির হার কমে এসেছে। ঋণে সুদের হার কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক বৃদ্ধি ও কম মূল্যবৃদ্ধির সময়কাল দেখা যাবে। তার সঙ্গে শহরে বেকারত্বের হারও কমছে।

চলতি অর্থ বছরে কী হবে?

আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা আইসিআরএ-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছর শুরুই হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তার মধ্যে। তবে ঘরোয়া অর্থনীতিতে বাজারে কেনাকাটা ও সরকারি খরচ কমছে না। আয়করে ছাড় মিলেছে। বর্ষা স্বাভাবিক হবে। খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার কমছে। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি পরিকাঠামো তৈরিতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করেছে। কিন্তু বেসরকারি লগ্নি, বিশেষ করে রফতানি ক্ষেত্রে বিশেষ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। ফলে আইসিআরএ-র মতে ২০২৫-২৬-এ বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশে নেমে আসবে। যা গত অর্থ বছরের ৬.৫ শতাংশের থেকেও কম। নাগেশ্বরনের অবশ্য মত, চলতি অর্থ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৩ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

industry

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy