Advertisement
E-Paper

যে পঞ্চশরে বিদ্ধ হলেন বাবা রাম রহিম

কিন্তু ‘বাবা’র প্রভাব, হুমকি ও শাসানিকে তোয়াক্কা না করে তাঁর কেলেঙ্কারির খবর জনসমক্ষে আনতে চেষ্টা করেছেন পাঁচ জন। তাঁদের সেই সাহসী পদক্ষেপের কারণেই আজ রাম রহিম জেলে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ১৩:১৯
রামচন্দ্র ছত্রপতি, তাঁর ছেলে অনসুল (ডান দিক উপরে) এবং জগদীপ সিংহ (ডান দিক নীচে)। ছবি: সংগৃহীত।

রামচন্দ্র ছত্রপতি, তাঁর ছেলে অনসুল (ডান দিক উপরে) এবং জগদীপ সিংহ (ডান দিক নীচে)। ছবি: সংগৃহীত।

ধর্ষণ, খুন থেকে শুরু করে লিঙ্গচ্ছেদ— একের পর এক অভিযোগ উঠেছে ‘বাবা’র বিরুদ্ধে। কিন্তু কখনওই তাঁর টিকি ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। বাবার অগুণতি ভক্ত, যাঁদের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। ফলে এ দিক থেকেও ‘বাবা’ রাম রহিম যথেষ্ট প্রভাবশালী বলাই বাহুল্য।

কিন্তু ‘বাবা’র প্রভাব, হুমকি ও শাসানিকে তোয়াক্কা না করে তাঁর কেলেঙ্কারির খবর জনসমক্ষে আনতে চেষ্টা করেছেন পাঁচ জন। তাঁদের সেই সাহসী পদক্ষেপের কারণেই আজ রাম রহিম জেলে।

আরও পড়ুন: ফের ‘পুরা সচ্’ চালুর উদ্যোগ

প্রথম পদক্ষেপটা করেছিলেন ‘বাবা’রই দুই শিষ্যা। ডেরা-র ভিতরের ছবিটা প্রকাশ্যে আনেন তাঁরাই। কী ভবে ধর্মের নামে রাম রহিম তাঁর শিষ্যাদের শোষণ ও শাসন করতেন তুলে ধরেন সেই ছবিটাও। ২০০২-এ ডেরা প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ওই দুই শিষ্যা। ‘বাবা’র বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান ওঁদেরই একজন। নাম প্রকাশ করেননি ভয়ে। কিন্তু আড়ালে থেকেই ‘বাবা’র আসল রূপটা সামনে আনার সাহস দেখিয়েছিলেন। সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়া থেকে ১৫ বছর ধরে মামলাটি চলে। অবশেষে সেই মামলাতেই আজ ‘বাবা’ শ্রীঘরে।

রাম রহিমের বিরুদ্ধে আরও এক ব্যক্তি সুর চড়িয়েছিলেন। তিনি রামচন্দ্র ছত্রপতি। হরিয়ানার দৈনিক পত্রিকা ‘পুরা সচ‌্’-এর সাংবাদিক। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও এই ছত্রপতিই অটলবিহারী বাজপেয়ীকে লেখা রাম রহিমের শিষ্যার চিঠি নিজের সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে এর ‘ফল’ পেতে হয়। ২০০২-এর ২৪ অক্টোবর দুই বাইক আরোহী তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। ২৮ দিন লড়াই করার পর মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর আগে এই ঘটনার জন্য রাম রহিমকেই তিনি অভিযুক্ত করেন।

আরও পড়ুন: ‘উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিজেপির নন’

বাবার মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারেননি অনসুল ছত্রপতি। সত্য উন্মোচন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল রামচন্দ্রকে। অনসুলের বয়স তখন ২১। বাবার অসমাপ্ত লড়াইকে তিনি টেনে নিয়ে যান। বাবার মৃত্যুর সুবিচারের আশায় এবং রাম রহিমকে শ্রীঘরে পাঠানোর পিছনে পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে জুনিয়র ছত্রপতির। পঞ্চকুলা আদালতে রাম রহিমের বিরুদ্ধে দুটো হত্যার মামলা ঝুলছে, তার মধ্যে একটি হল তাঁর বাবার হত্যা। আদালতের রায় শুনে অনসুল বলেন, “বিচারে দেরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিচার যে হয়েছে এটাই যথেষ্ট।” তাঁর বাবার হত্যারও সুবিচার পাবেন এখন সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন অনসুল ও ছত্রপতি পরিবার।

আরও পড়ুন: ভূমিশয্যায় রাম রহিম, আপাতত ক্ষান্ত ভক্তরা

চতুর্থ যে ব্যক্তির জন্য রাম রহিম এখন রোহতকের সুনারিয়া জেলে সাধারণ কয়েদিদের মতো দিন কাটাচ্ছেন, তিনি হলেন বিচারপতি জগদীপ সিংহ। পঞ্চকুলা আদালতে তাঁরই এজলাসে ধর্ষণ মামলার শুনানি হয়। সমস্ত প্রমাণ ও নথি খতিয়ে দেখে রাম রহিমকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। বিচারপতি উপলব্ধি করেছিলেন, রাম রহিমকে জেলে পাঠালে কী ভয়ানক পরিস্থিতি হতে পারে! কিন্তু তিনি দ্বিতীয় বার ভাবেননি রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় দিতে। রায় শোনার পরই গোটা হরিয়ানা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। যে ভাবে দুই শিষ্যা রাম রহিমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, সে পথেই হেঁটে সাহসী পদক্ষেপ করেছেন বিচারপতি জগদীপ।

Rape case Gurmeet Ram Rahim Dera Sacha Sauda রাম রহিম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy