Advertisement
E-Paper

বুকে আগলে রাখা শিশু! ওয়েনাড়ের পাহাড়ি জঙ্গলে চার আদিবাসী শিশুকে উদ্ধার বনাধিকারিক হরিশের

কালপেট্টা রেঞ্জের বনাধিকারিক হরিশ। ধসের পর আত্তামালার পাহাড়ি এলাকায় হরিশের নেতৃত্বে তল্লাশি অভিযানে বেরিয়েছিলেন চার বনাধিকারিক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ১১:৫২
ওয়েনাড়ের গভীর জঙ্গল থেকে শিশুদের উদ্ধার করছেন বনাধিকারিকেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ওয়েনাড়ের গভীর জঙ্গল থেকে শিশুদের উদ্ধার করছেন বনাধিকারিকেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বুক আর পিঠের সঙ্গে কাপড় দিয়ে বাঁধা নগ্ন একটি শিশু। চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। বৃষ্টিতে গোটা শরীর ভেজা। ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে। কেরলের ওয়েনাড়ে যখন ‘মৃত্যুমিছিল’ চলছে, তখন এমনই একটি ছবি চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।

স্থান আত্তামালার পাহাড়ি ঘন জঙ্গল। নগ্ন সেই শিশুটিকে বুকে আগলে রেখেছেন এক বনাধিকারিক। নাম কে হরিশ। দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে ওই শিশু-সহ মোট ছ’জনকে উদ্ধার করেছেন হরিশ এবং তাঁর দল। কালপেট্টা রেঞ্জের বনাধিকারিক হরিশ। ধসের পর আত্তামালার পাহাড়ি এলাকায় হরিশের নেতৃত্বে তল্লাশি অভিযানে বেরিয়েছিলেন চার বনাধিকারিক।

আত্তামালার পাহাড়ে গভীর জঙ্গলে পনিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার থাকত। বনাধিকারিকেরা সেটা জানতেন। এরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। লোকালয়ে খুব একটা যাতায়াত নেই এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ফলে ধসের পর তারা কেমন আছে, আদৌ কি তারা জীবিত আছে, তা খোঁজ নিতেই গভীর জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালান হরিশেরা। মুষলধারে বৃষ্টি, তার মধ্যে দুর্গম পাহাড়ি পথ, নীচে গভীর খাদ— সব বাধাকে চ্যালেঞ্জ করে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন তাঁরা। হরিশ জানান, সেই সময়েই এক মহিলা এবং তাঁর সঙ্গে বছর দুয়েকের একটি শিশুকে দেখতে পান। ইতস্তত জঙ্গলের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছিলেন । মহিলার চোখমুখে ভয়ের ছাপ ধরা পড়ছিল স্পষ্ট। জঙ্গলের মধ্যে ওই মহিলা এবং শিশুটিকে দেখে হরিশের মনে হয়, তাঁদের সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও কেউ আছেন। স্থানীয় ভাষায় মহিলার সঙ্গে কথা বলে হরিশরা জানতে পারেন, মহিলার স্বামী এবং তাঁর আরও তিন সন্তান পাহাড়ের একটি গুহায় আটকে রয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে হরিশ বলেন, “যে পাহাড়ি গুহায় মহিলার স্বামী এবং সন্তানেরা আটকে ছিলেন, সেটি পাহাড়ের উঁচুর দিকে। অত্যন্ত দুর্গম। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উঠে সেই গুহার কাছে পৌঁছই। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল পিছলে খাদের মধ্যে পড়ে যাব। ঝুঁকি নিয়েই ধারে ধীরে সেই গুহার কাছে পৌঁছই। গুহাতে মহিলার স্বামী তিন বাচ্চাকে নিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসেছিলেন।” উদ্ধার হওয়া শিশুদের এক জনের বয়স চার, এক জনের তিন এবং এক বছরের একটি শিশুও ছিল। হরিশ বলেন, “দেখে মনে হচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরেই ওরা অভুক্ত ছিল।”

হরিশ আরও বলেন, “শিশুগুলি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আমাদের সঙ্গে থাকা খাবার ওদের খাওয়াই। শিশুগুলিকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে আসি। ওদের বাবা-মাকে অনেক বোঝানোর পর আমাদের সঙ্গে আসতে রাজি হন। শিশুগুলিকে নিজেদের শরীরের সঙ্গে কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়েছিলাম। তার পর আবার পাহাড়ি রাস্তা ধরে ফিরেছি।” আদিবাসী পরিবারটিকে আত্তামালার একটি স্থানীয় একটি শিবিরে রাখা হয়েছে। তাদের খাওয়াদাওয়া, পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিজের বুকে আগলে রাখা হরিশের সঙ্গে এক শিশুর সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন হরিশ এবং তাঁর দলের প্রশংসা করেছেন। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “ওয়েনাড়ে আমাদের বাহাদুর বনাধিকারিকরা চার ঘণ্টা পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে এক আদিবাসী বস্তি থেকে ছ’জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। বনাধিকারিকদের এই কাজকে কুর্নিশ জানাই।”

সরকারি সূত্রে খবর, ওয়েনাড়ে ধসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে অসমর্থিত সূত্রে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৩০০ ছাড়িয়েছে। গত সোমবার গভীর রাতে ওয়েনাড়ের চার গ্রামে ধস নামে। সেই ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে চূড়ালমালা, মুন্ডাক্কাই, আত্তামালা এবং নুলপুঝা।

Wayanad Landslide Forest Officer Rescue Operation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy