হেফাজতে অকথ্য নির্যাতন চালানো হত তাঁর উপর। এমনকি, মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ আরও অনেকের নাম নিতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে এ বার এমনটাই দাবি ভোপালের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞার।
২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় সম্প্রতি প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর ওরফে সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাত জনকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে মুম্বইয়ের বিশেষ এনআইএ আদালত। ছাড়া পেয়েই বিস্ফোরক দাবি করেছেন প্রজ্ঞা। তাঁর দাবি, ২৪ দিন হেফাজতে থাকাকালীন সন্ত্রাসদমন শাখার (এটিএস) আধিকারিকেরা তাঁর উপর নির্যাতন করতেন। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী, যোগী আদিত্যনাথ, আরএসএস-এর প্রধান মোহন ভাগবত-সহ তাবড় নেতাদের নাম নিতেও বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘ওরা আমাকে অনেকের নাম নিতে বাধ্য করেছিল। ওরা বার বার বলত, এঁদের নাম বলুন, তা হলে আমরা আপনাকে মারব না। প্রথমে বর্ষীয়ান নেতা রাম মাধব, যোগী আদিত্যনাথ, মোহন ভাগবত, ইন্দ্রেশ কুমারের নাম নিতে বলা হয়। রাজি না হলেই চলত অকথ্য অত্যাচার। আমার শরীর ভেঙে গিয়েছিল। এর পর ওরা আমাকে হাসপাতালেও বেআইনি ভাবে আটকে রাখে।’’
আরও পড়ুন:
-
মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাত অভিযুক্তকেই মুক্তি দিয়ে দিল এনআইএ কোর্ট
-
সমবায় ব্যাঙ্কের টাকা নয়ছয় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদের! তদন্তে সাগর পেরিয়ে আন্দামানে ইডি, অভিযান কলকাতায়ও
-
চেয়েও পাননি বুলেটপ্রুফ গাড়ি! ১৭ মাস ধরে সাধারণ গাড়িতেই সফর প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের
বেকসুর খালাস পেয়েই প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বৃহস্পতিবার বলেন, “ওরা চক্রান্ত করে গেরুয়ার অবমাননা করেছিল। গেরুয়ার জয় হয়েছে, হিন্দুত্বের জয় হয়েছে, সনাতন ধর্ম ও রাষ্ট্রের জয় হয়েছে। যাঁরা দোষী, ঈশ্বর তাঁদের শাস্তি দেবেন।” শনিবার সে সব কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, গোটা ঘটনাটিই ছিল কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র। প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আমি যেহেতু গুজরাতে থাকতাম, সেই কারণে আমাকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাম নিতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি তাঁদের নাম নিইনি।’’ এ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বিস্তারিত লিখবেন বলেও জানিয়েছেন প্রজ্ঞা।
২০০৮-এর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে এক বিস্ফোরণে সাত জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ১০০রও বেশি। তদন্তে জানা যায়, মালেগাঁও শহরে মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানে একটি মোটরসাইকেলে দু’টি বোমা রাখা ছিল। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার তদন্তে নামে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। তদন্তে জানা যায়, ঘটনার নেপথ্যে ছিল একটি একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ক্রমে গ্রেফতার হন প্রজ্ঞা এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত। পরে অবশ্য দু’জনেই জামিন পান। ২০১১ সালে মামলার তদন্তভার যায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে। দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৮ সালে শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া। এ হেন বিতর্কিত প্রজ্ঞাকে ২০১৯ সালে ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তিনি জয়ীও হয়েছিলেন। এ বার মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন তিনি।