E-Paper

নরিম্যান হাউসের লিফট উড়িয়ে দিয়েছিল জঙ্গিরা

নরিম্যান হাউসের লিফট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিল জঙ্গিরা। আমরা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে জঙ্গিরা গ্রেনেড ছুড়তে শুরু করে।

সন্দীপ সেন, (প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট কর্নেল)

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৬
২৬/১১-এ নরিম্যান হাউস।

২৬/১১-এ নরিম্যান হাউস।

মুম্বই হামলার সময়ে আমি হরিয়ানার মানেসরে এনএসজি-র ঘাঁটিতেই ছিলাম। অন্য সকলের মতোই আমরাও প্রথমে সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছিলাম হামলার কথা। নিয়ম মেনে ২০ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমাদের বাহিনী। কারণ, এই ধরনের অভিযানের জন্যই এনএসজি-র জন্ম। কিন্তু এনএসজি-কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে বেশ কিছুটা সময় নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তার আগে মুম্বই পুলিশের পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন সেনা ও নৌসেনার কমান্ডোরা। বস্তুত তাজ হোটেলে নৌসেনার কমান্ডোদের অভিযানের জন্যই কয়েকশো মানুষ প্রাণে বেঁচে যান। সেই কৃতিত্ব অবশ্যই তাঁদের প্রাপ্য।

এনএসজি-র দ্বিতীয় দলের সদস্য হিসেবে আমি মুম্বই পৌঁছই। আমার নেতৃত্বাধীন দলকে কোলাবায় হাবাদ হাউস বা নরিম্যান হাউসকে জঙ্গিমুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজ সকলেই জানেন, সেখানে র‌্যাবাই (ইহুদি ধর্মগুরু) গ্যাব্রিয়েল হোলৎজ়বার্গ, তাঁর স্ত্রী রিভকা-সহ ছ’জনকে সেখানে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। গ্যাব্রিয়েল-রিভকার দু’বছর বয়সি সন্তান মোশেকে কোনওক্রমে উদ্ধার করতে পেরেছিলেন তার ন্যানি স্যান্ড্রা স্যামুয়েলস।

কিন্তু তখন আমাদের কাছে নরিম্যান হাউস সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য ছিল না। এর একটা বড় কারণ মুম্বই পুলিশের বেশ কয়েক জন অফিসার জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন। শহরের প্রশাসনে নেতৃত্বের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। প্রথমে আমরা ও অন্যান্য বাহিনী নরিম্যান হাউসের চারপাশের বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরাতে শুরু করি। তাঁদের কাছ থেকে কিছুটা তথ্য পাই।

নরিম্যান হাউসের লিফট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিল জঙ্গিরা। আমরা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে জঙ্গিরা গ্রেনেড ছুড়তে শুরু করে। ফলে অন্য উপায়ের কথা ভাবতে শুরু করি। সেই সময়ে নাইট ভিশন ডিভাইসের (রাতে স্পষ্ট দেখার যন্ত্র) অভাব দেখা দিয়েছিল। ফলে পরের দিন সকালের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিই। রাতে নরিম্যান হাউসের পাশের বাড়ি থেকে ৯ জনকে সরিয়ে ফেলি আমরা। নরিম্যান হাউস থেকে ওই বাড়িতে যেতে পারত জঙ্গিরা। তার পরের দিন ভোর পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হেলিকপ্টার থেকে নরিম্যান হাউসের ছাদে নামি আমরা। সবচেয়ে উপরের তলায় কোনও জঙ্গি ছিল না। তার নীচের তলায় নামতেই জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। আহত হন আমাদের কমান্ডো গজেন্দর সিংহ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর দেহ নরিম্যান হাউসের বাইরে নিয়ে আসা হয়। এতে কিছুটা সময় যায়।

পরে ফের অভিযান শুরু করি আমরা। জঙ্গিরা একে-৪৭ রাইফেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করছিল। আমরা বাড়ির ভিতরে সংঘর্ষের জন্য ব্যবহার করছিলাম এমপি-৫ সাবমেশিন গান। সে দিন বিকেল চারটে-সাড়ে চারটে নাগাদ নরিম্যান হাউস জঙ্গিমুক্ত হয়ে যায়। আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় দুই জঙ্গি। শেষ হয় ‘অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো’র একটি অধ্যায়।

আজ আমিও সংবাদমাধ্যমে দেখছি মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানার আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণের খবর। এটা সাফল্যের পথে একটা বড় ধাপ। ওই হামলার চক্রীদের মধ্যে অনেকেই এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানে। তাদের সকলের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্যও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছেআছে বলে মনে হয় না। রানার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাবেন গোয়েন্দারা। তাতে বাকি চক্রীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুবিধে হবে। আর রানা ভারতের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

অনুলিখন: অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

26/11 Mumbai Attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy