Advertisement
E-Paper

দেরিতে ছোটা থেকে আবর্জনা, ব্যাধিতে জেরবার পুরী-শতাব্দী

পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশনে ঢোকা মাত্র তার উপরে কার্যত আছড়ে পড়ল প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত ভিড়। যেন বনগাঁ লাইনের লোকাল! সকলেই চান অন্যের আগে ট্রেনে উঠতে।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪১

পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশনে ঢোকা মাত্র তার উপরে কার্যত আছড়ে পড়ল প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত ভিড়। যেন বনগাঁ লাইনের লোকাল! সকলেই চান অন্যের আগে ট্রেনে উঠতে। ফলে পুরী থেকে ওই ট্রেনে আসা যাত্রীদের অনেকেই প্ল্যাটফর্মে নামতে পারছেন না। দুই বিপরীতমুখী যাত্রী-স্রোতের সংঘাত চলল প্রতিটি কামরায়।

এক-আধ দিন নয়। এই চিত্র নিত্যদিনের। কারণ, পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস প্রায় প্রতিদিনই দেড় ঘণ্টা বা তার থেকেও বেশি দেরিতে দৌড় শেষ করছে। ট্রেনে নামা এবং ওঠার যুদ্ধ সেই বিলম্বেরই জের।

যাত্রীদের প্রশ্ন, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনেও লোকাল ট্রেনের মতো এই ঝক্কি সহ্য করতে হবে কেন? শতাব্দীর ভাড়া দূরপাল্লার বেশির ভাগ ট্রেনের চেয়ে বেশি। কারণ, ভারতীয় রেলের বিচারে এটি কুলীন ট্রেন। সময় মেনে সফর এবং একটু স্বাচ্ছন্দ্যের প্রত্যাশাতেই তো মানুষ বেশি টাকা দিয়ে সেই ট্রেনের টিকিট কাটেন। কিন্তু তাতেও যাত্রীদের নিত্য ভোগান্তি কেন? শুধু তো দেরিতে চলা নয়। অভিযোগ, ওই ট্রেনের খাবারদাবার থেকে কামরা সাফাই— সবই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। রেল মন্ত্রক অনেক দিন ধরেই রেলের মাধ্যমে পর্যটন ব্যবসার স্বপ্ন দেখছে। ভ্রমণপিপাসু বাঙালিকে সব মরসুমেই টানে পুরী। ভিড় তাই লেগেই থাকে। তা সত্ত্বেও সেখানে
পৌঁছনোর ট্রেনে একটু আরাম মিলবে না কেন?

পুরীযাত্রী অনেকের মতো এই সব প্রশ্ন কলকাতার বাসিন্দা দেবাশিস রায়েরও। সম্প্রতি সপরিবার পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। যাওয়া এবং ফেরা, দুই পথেই কেটেছিলেন শতাব্দী এক্সপ্রেসের টিকিট। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘গত ১৬ ডিসেম্বর হাওড়া স্টেশনে গুঁতোগুঁতি করে ট্রেনে উঠে নিজেদের আসনে বসে দেখি, সামনে কয়েক জন বিদেশি পর্যটক। গোটা কামরা জুড়ে তখনও পুরী থেকে আসা যাত্রীদের ফেলে যাওয়া আর্বজনা।’’ দেবাশিসবাবু জানান, কিছু ক্ষণ পরে দু’জন সাফাইকর্মী কামরা ঝাঁট দিতে আসেন। বাতানুকূল কামরা তখন ধুলো-আবর্জনায় মাখামাখি। বিদেশি পর্যটকেরাও বিরক্ত। মুখে রুমাল চাপা দিয়ে বসে থাকলেন। ফিরতি পথের অভিজ্ঞতাও একই রকম বলে জানান ওই যাত্রী। তাঁর প্রশ্ন, সৈকতশহর পুরী এখন বিদেশিদেরও টানছে। কিন্তু তাঁদের সামনেই রেল পরিষেবার হাল যে এ ভাবে বেআব্রু হয়ে গেল, তার দায় নেবে কে? এমন অবস্থা কেন?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন রেলকর্তারা। তবে যাত্রী ভরা কামরা ঝাঁট দেওয়ার কারণ হিসেবে
তাঁদের কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, ট্রেনটিকে খুব কম সময়ের মধ্যেই ফের পুরী রওনা দিতে হয়। তাই সেটিকে কারশেডে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রীরা ওঠার পরেই কামরা সাফ করতে হচ্ছে। আর ট্রেনটির দেরির দায় কুয়াশার উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন কিছু রেলকর্তা। যদিও যাত্রাপথে কুয়াশার প্রকোপ তাঁরা দেখেননি বলে জানান ওই ট্রেনে হাওড়ায় আসা যাত্রীদের অনেকেই।

পুরীর পথে দুরন্ত এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে চালু হয়েছে শতাব্দী। এবং সূচনা থেকে অধিকাংশ দিন ট্রেনটির এই দশাই দেখছেন যাত্রীরা। ট্রেনটি পূর্ব উপকূল রেলের হলেও যে-হেতু পুরী ও হাওড়ার মধ্যে যাতায়াত করে, তাই পরিষেবার প্রশ্নে দক্ষিণ-পূর্ব রেলেরও দায় থেকে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব রেল অবশ্য সেই দায় নিতে রাজি নয়। এই নিয়ে রেলের দুই জোনের মধ্যে চলছে তরজা। যাত্রীরা রেলের এই বিভাজন মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, রেল তো একটাই। ভারতীয় রেল। যাত্রীদের স্বার্থে, পর্যটনের সূত্রে লক্ষ্মীলাভের স্বার্থে কেন স্বাচ্ছন্দ্য দেবে না রেল?

Shatabdi express
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy