রামিয়া হরিদাস
নাম যখন ঘোষণা হয়েছিল, ভোটের আর বেশি দেরি নেই। এলাকা তাঁর দলের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ প্রচারের কাজ অনেকটা সেরেও ফেলেছেন। তাঁর নাম ঘোষণা হল, তিনি প্রচারে নামলেন এবং সর্বত্র মঞ্চে উঠে গান গাইতে শুরু করলেন। প্রশ্নের ঝড় উঠল— ইনি গাইতে এসেছেন না সাংসদ হতে?
শেষ পর্যন্ত ঝড় তুলেই আলাতুর থেকে লোকসভায় পৌঁছে গিয়েছেন রামিয়া হরিদাস! কেরল থেকে এ বার লোকসভায় একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি। দক্ষিণী ওই রাজ্যের ইতিহাসে সাবিত্রী লক্ষ্মণের পরে দ্বিতীয় দলিত মহিলা সাংসদ। সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি আলাতুরে তাদের দু’বারের সাংসদ পি কে বিজুকে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ভোটে হারিয়েছেন রামিয়া। রাজনীতিতে তাঁর উঠে আসার কাহিনি, তাঁর প্রচারের ধরন রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে কেরলে।
কোথা থেকে কী ভাবে এলেন রামিয়া? বাড়ি তাঁর কোঝিকোড় জেলায়। কমিউনিস্ট আন্দোলন ও সংগঠনের শক্ত জমি পালাক্কাড জেলার একটি কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করার প্রস্তাবে সরাসরি সায় ছিল স্বয়ং রাহুল গাঁধীর। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১০ সালে রাহুলের উদ্যোগেই ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস। সেই সময়েই প্রথম নজরে আসেন রামিয়া। তখন তিনি কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন কেএসইউ করেন। কংগ্রেস তাঁকে তুলে এনে যুব সংগঠনে জড়িয়ে দেয়। মাঝে কোঝিকোড় জেলার একটি পুরসভার চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন। এ বার লোকসভা ভোটে আচমকা প্রার্থী হয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি ছিলেন কুন্নামমঙ্গলম ব্লক পঞ্চায়েতের সভানেত্রী। লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরে যে পদ থেকে ইস্তফা দিতে হচ্ছে তাঁকে।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে কোঝিকোড় থেকে পালাক্কাডে পাড়ি দিয়েছিলেন রামিয়া। দিকে দিকে তিনি গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন দেখে মালয়ালম বিদ্বজ্জনেদের কেউ কেউ ভ্রূ কুঁচকেছিলেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন নিজেদের কলমে। রামিয়ার ওই প্রচার সাড়া ফেলছে দেখে স্থানীয় বাম নেতা-সমর্থকেরা তার পরে তাঁকে আক্রমণ শুরু করেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে।
এখন তাঁরা বুঝছেন, শেষ বিচারে সেই আক্রমণ রামিয়ারই পক্ষে গিয়েছে! এমনকি, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বিজয়রাঘবনের একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ঘিরেও বিতর্ক হয়েছিল। যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন রামিয়া।
জনতার রায় তাঁর পক্ষে যাওয়ার পরে রামিয়া অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি গাইব এবং বলব। এটাই আমার অস্ত্র। সমালোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে কী হবে?’’ এমন জয় যে তাঁর কাছে অকল্পনীয় ছিল, তা-ও অস্বীকার করছেন না ৩২ বছরের তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘আলাতুরের মানুষ আমার পাশে যে ভাবে দাঁড়িয়েছেন, তা অভাবনীয়! সব সমালোচনার জবাব ওঁরাই দিয়েছেন। এ বার আলাতুরের মানুষের পাশে আমার দাঁড়ানোর পালা।’’
তবে জয়ের আনন্দের ফাঁকে রামিয়ার একটু দুঃখও আছে। দেশের সব চেয়ে প্রগতিশীল রাজ্য ধরা হয় যে কেরলকে, শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ঘিরে দেশ জুড়ে এত বিতর্ক, এ সব সত্ত্বেও দক্ষিণী ওই রাজ্য থেকে মহিলা সাংসদ হিসাবে তিনিই শুধু দিল্লির উড়ান ধরবেন! বাকি ১৯ জনই পুরুষ। তাঁর দল কংগ্রেস আর যে কেন্দ্রে মহিলা প্রার্থী (শানিমোল ওসমান) দিয়েছিল, সেই আলপ্পুঝা আসনটাই শুধু তারা এ বার সিপিএমের কাছে হেরেছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy