Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অমেঠীতে পরাজয় রাহুলের, কংগ্রেস অস্তাচলে

এই ভরাডুবির পরে দলের মধ্যে থেকেই রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সে কারণে আজ দুপুরে ফলাফলের ছবিটি কিছুটা স্পষ্ট হওয়ার পরে সনিয়া গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভাপতি।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টক্করে ধরাশায়ী হলেন রাহুল গাঁধী। —ছবি এএফপি।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টক্করে ধরাশায়ী হলেন রাহুল গাঁধী। —ছবি এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে লোকসভায় প্রথম বার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টক্করে ধরাশায়ী হলেন রাহুল গাঁধী। খাস অমেঠীর গাঁধী-গড়েও স্মৃতি ইরানি হারিয়ে দিলেন তাঁকে। কেরলের ওয়েনাড লোকসভা আসন থেকে রাহুল নিজে রেকর্ড চার লক্ষেরও বেশি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারালেও সংসদে এ বারেও বিরোধী দলের মর্যাদা আদায় করে নিতে পারবে না তাঁর দল। জিততে পারেননি কংগ্রেসের ন’জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও।

এই ভরাডুবির পরে দলের মধ্যে থেকেই রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সে কারণে আজ দুপুরে ফলাফলের ছবিটি কিছুটা স্পষ্ট হওয়ার পরে সনিয়া গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভাপতি। দলের এক নেতা জানান, সেখানেই সনিয়ার কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও সনিয়া তাঁকে বিষয়টি দলের ওয়ার্কিং কমিটির কাছে পেশ করার পরামর্শ দেন। হারের দায় ‘একশো শতাংশ’ নিজের কাঁধে নিয়ে সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করতে আসেন রাহুল। সেখানে অবশ্য তাঁর ইস্তফা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘ওয়ার্কিং কমিটি (শনিবার বসবে) সিদ্ধান্ত নেবে। এটি আমার আর ওয়ার্কিং কমিটির বিষয়।’’ পরে কংগ্রেস জানায়, রাহুল ইস্তফা দেননি।

দশ জনপথ থেকে একযোগেই সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা। তবে প্রিয়ঙ্কা মঞ্চে না-উঠে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাহুল বলেন, ‘‘প্রচারের সময়েই বলেছি, জনতা মালিক। জনতা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি-এনডিএকে অভিনন্দন জানাই। ভোটের লড়াই ছিল দু’টি ভিন্ন আদর্শের। প্রচারেই বলেছি, আমার উপরে যে আক্রমণই হোক, আমি ভালবাসায় জবাব দেব। ভালবাসা কখনও হারে না।’’ প্রিয়ঙ্কাও বলেন, ‘‘জনগণের রায় মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি কর্মীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’

মোদী এবং এনডিএ-কে টুইটারেও অভিনন্দন জানান রাহুল। যার উত্তরে মোদী রাহুলকে লেখেন, ‘‘আপনার শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ।’’ তবে রাহুল যতই পরাজয়ের দায় স্বীকার করুন, দলের মধ্যেই তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, মোদী-ঝড়ের মধ্যে মুখ রেখেছে শুধু পঞ্জাব ও কেরল। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় এলেও সেখানে লোকসভা ভোটে ‘হাত’ উধাও। তা ছাড়া, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকের মতো রাজ্য বিজেপি এর পর ছিনিয়ে নেবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে দেশে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে। দলের অনেকেই এখন দাবি করছেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান বুমেরাং হয়েছে। ‘ন্যায়’ প্রকল্পের কথাও মানুষের কাছে সে ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। জোট না করার খেসারত দিতে হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতে। দলের ওই অংশের এ-ও দাবি, সংখ্যালঘু ‘তোষণ’ ও নরম হিন্দুত্বের মিশ্রণও হালে পানি পায়নি। আর সব কিছুর উপরে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিকল্প, শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠতে পারেননি কংগ্রেস সভাপতি। আগেভাগে প্রিয়ঙ্কা-তাস খেলা উচিত হয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

এ দিন রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়, যে সব মৌলিক বিষয় নিয়ে তিনি ভোটে গিয়েছেন, পাল্টা চালে সেগুলিকে কী ভাবে নস্যাৎ করে দিল বিজেপি? কংগ্রেসের কি তবে রণকৌশল বদলানোর সময় এসেছে? কংগ্রেস কোথায় ভুল করল? সরাসরি জবাব এড়িয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আজ জনতার রায় এসেছে। ফলে আজ আমি কী বলছি, তার কোনও অর্থ নেই। তবে এখনও মনে করি, দেশের অনেক মানুষ কংগ্রেসের আদর্শে ভরসা রাখেন। আমি সকলকে ভরসা দিতে চাই, আপনারা ঘাবড়াবেন না, ভয় পাবেন না। আত্মবিশ্বাস হারাবেন না।’’

কংগ্রেস সূত্রের মতে, আগামী শনিবার মধ্যেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে হারের কারণ বিশ্লেষণ হবে। গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘এই ফল আমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয়। ২০১৪ সালের প্রতিশ্রুতি পালন না করেও কী করে বিজেপির ভোট বাড়ল!’’ প্রিয়ঙ্কার প্রচারেও কি কোনও ছাপ পড়ল না? রাজীবের জবাব, ‘‘এ বারের ভোটে প্রিয়ঙ্কাকে কোনও দায়িত্ব তেমন দেওয়াও হয়নি। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার জন্য তিনি লড়বেন!’’ কিন্তু দিল্লি দূর অস্ত্ তো শুধু কথার কথা নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE