—প্রতীকী ছবি।
জীবনের মাত্র ছয়টি বছর মায়ের নিশ্চিন্ততা পেয়েছিল মেয়েটা। স্বামী আর শ্বশুড়বাড়ির আত্মীয়দের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ছ’বছরের মানবীর মা সীমা কৌশিক। কিন্তু সীমার মৃত্যুতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যাঁদের বিরুদ্ধে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ, তাঁদের গ্রেফতারে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছিল না স্থানীয় পুলিশ। উল্টে ঘুষ চাওয়া হচ্ছিল সীমার বাপের বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকেই। কিন্তু ঘুষের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তাঁদের। শেষ পর্যন্ত মায়ের খুনীদের শাস্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়ে ঘুষ হিসাবে নিজের পিগি ব্যাঙ্কের স্বল্প পুঁজিই পুলিশের হাতে তুলে দিল মানবী।
ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের মেরঠ জেলায়। সাত বছর আগে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সীমার। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই পণ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয় অশান্তি। চলতে থাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বছর চারেক আগে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়ে মানবীকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন সীমা। সীমার বাবা শান্তি স্বরূপ জানান, এরপরেও নানা ভাবে সীমার উপর মানসিক চাপ তৈরি করত সঞ্জীব। এমনকী তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলাও রুজু করেছিল সঞ্জীবের পরিবার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত এপ্রিলে আত্মহত্যা করেন সীমা। এরপরেই সঞ্জীব ও তাঁর দুই ভাই ও সীমার শ্বশুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শান্তি। সঞ্জীবকে আটক করা হলেও তাঁর অভিযোগ, বাকি তিন অভিযুক্তের বিষয়ে তেমন গা করছে না পুলিশ। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানানোয় পুলিশের তরফে তাঁদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরূপ।
আরও পড়ুন: গো-বধের ধুয়ো তুলে গিরিডির গ্রামে হামলা
সীমার ছোট ভাই রোহিত জানালেন, সীমাকে খুবই অত্যাচার করত সঞ্জীব। বিয়ের পর তাঁরা আলাদা বাড়িতে থাকতেন। একবার সেখানেই চারদিন সীমাকে তালাবন্ধ করে রেখে চলে গিয়েছিলেন সঞ্জীব। পরে বাড়িওয়ালার তৎপরতায় উদ্ধার করা হয় সীমাকে। এরপর থেকে বাপের বাড়িতেই থাকতেন সীমা। কিন্তু সঞ্জীব তারপরেও স্ত্রীর পিছু ছাড়ত না।
বাবা চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মী। তিনি নিজেও সদ্য বিয়ে করেছেন। তাই পুলিশের দাবি মতো ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাঁদের নেই বলে জানান রোহিত। কিন্তু ছোট্ট মানবী সব সময়ই চাইত মায়ের খুনীরা শাস্তি পাক। চোখের সামনে সে মাকে কষ্ট পেতে দেখেছে। তাই বাড়িতে এই সমস্ত কথা শোনার পরেই নিজের পিগি ব্যাঙ্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় সে। রোহিত জানান, মাটির একটি পিগি ব্যাঙ্কে খুচরো টাকা জমায় মানবী। টাকা না দিলে মায়ের খুনের বিচার হবে না জেনে সেই সঞ্চয় সে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সঞ্চয় নিয়ে দাদুর সঙ্গে থানায় পৌঁছেও যায় সে।
ঘটনায় হতচকিত হয়ে যান থানার পুলিশকর্মীরা। পরে মেরঠের ইনস্পেক্টর জেনারেল রাম কুমার বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত ঘটনাটির তদন্ত হবে।’’ অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাম কুমার।
আর মানবীর পিগি ব্যাঙ্ক? “থানা থেকে ফেরার সময় মানবীর হাত থেকে পড়ে গিয়ে সেটি ভেঙে যায়। আমি ওকে আর একটা পিগি ব্যাঙ্ক কিনে দিয়েছি”— বললেন রোহিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy