Advertisement
E-Paper

ইভিএম কারচুপি জেনে যাওয়াতেই খুন গোপীনাথ, গৌরী? লন্ডনে চাঞ্চল্যকর দাবি মার্কিন বিশেষজ্ঞের

২০১৪ সালের ২৬ মে মোদী সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুন্ডে। এক সপ্তাহ পরেই, ৩ জুন নয়াদিল্লির কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। সৈয়দ সুজার দাবি, ‘‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ‘ফাঁস’ করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:০২
গৌরী লঙ্কেশ এবং গোপীনাথ মুন্ডে। ফাইল চিত্র।

গৌরী লঙ্কেশ এবং গোপীনাথ মুন্ডে। ফাইল চিত্র।

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে গোপন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল। ইভিএমে ‘হ্যাক’ করে বদলে দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনের ফলাফল। প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার গোপন ঘটনা জেনে যাওয়াতেই খুন করা হয়েছিল বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডেকে। সোমবার লন্ডনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা।

যে বিশেষজ্ঞ দলটি ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) সরবরাহ করেছিল, সৈয়দ সুজা সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বলেই দাবি করেছেন এই সাংবাদিক সম্মেলনে। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কী ভাবে কারচুপি করা যায়, তা-ও করে দেখিয়েছেন সৈয়জ সুজা। লন্ডনে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ইউরোপের ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। যদিও এই অভিযোগ ‘উস্কানিমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

২০১৪ সালের ২৬ মে মোদী সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুন্ডে। এক সপ্তাহ পরেই, ৩ জুন নয়াদিল্লির কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। সৈয়দ সুজার দাবি, ‘‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ‘ফাঁস’ করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।’’

শুধু গোপীনাথ মুন্ডে নয়, সৈয়দ সুজার কাছ থেকে ইভিএম দুর্নীতির বিষয়টি জেনেছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। তিনিও বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। এই হত্যাও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন এই মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ।

আরও পড়ুন: মুকেশ অম্বানীর আয় চিকিৎসা-স্বাস্থ্য খাতে কেন্দ্র-রাজ্যের মিলিত বাজেটের চেয়ে বেশি!

শুধু ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনই নয়, ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনেও। লন্ডন থেকে সরাসরি লাইভ সম্প্রচারে সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবি করেন সৈয়দ সুজা। নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেলকে সাহায্য করেছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। ইভিএমে কারচুপি করা যায় কি না তা জানতে চেয়ে আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সুজা।

কী ভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএমের তথ্য বদলে দেওয়া যায়, লন্ডন থেকে সাংবাদিক সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচারে তা হাতেকলমে করে দেখিয়েছেন এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তাঁর দাবি, ব্লু টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমের তথ্য বদলানো সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি ‘ট্রান্সমিটার’-এর মাধ্যমে ইভিএমের তথ্যভাণ্ডার বা ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে এই ট্রান্সমিটারই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সুজার দাবি। ভারতের একের পর এক মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার দাবি করেছেন, কোনও তার বা ওয়্যার ছাড়া ইভিএমের ডেটাবেস-এ অদলবদল ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু সৈয়দ সুজার দাবি, প্রায় সাত হার্টজের নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে ইভিএম ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। একমাত্র বিশেষ সামরিক প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এই নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ সুজা। কিন্তু বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছে এই যন্ত্র ছিল বলেই দাবি সুজার। সারা দেশের ন’টি জায়গা থেকে এই নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ পাঠিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছিল ইভিএমের সমস্ত তথ্য। যাঁরা এই কাজ করেছিলেন, তাঁরা নিজেরাও জানতেন না যে তাঁদের কাজে বদলে যাচ্ছে সমস্ত নির্বাচনী ডেটাবেস।

আরও পড়ুন: ‘#টেনইয়ারচ্যালেঞ্জ’ নিছক নির্দোষ খেলা না পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সংশয়

সৈয়দ সুজার এই চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক বৈঠকের পরই বিবৃতি দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, লন্ডনে বলা হয়েছে আমাদের ব্যবহার করা ইভিএমে কারচুপি করা যায়। এই বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আমাদের ইভিএম বানায় ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড এবং ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। এ জন্য ২০১০ সালেই বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছি আমরা। আমাদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্য করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

নির্বাচন কমিশনের বিবৃতি।

বিজেপির তরফে মুক্তার আব্বাস নকভির মন্তব্য: ‘‘ নরেন্দ্র মোদীকে সরানোর জন্য সব কিছুই করতে পারে কংগ্রেস। এই সাংবাদিক সম্মেলন তারই প্রমাণ। কপিল সিব্বলের মদতেই এই সব চক্রান্ত করা হয়েছে।’’ আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরেই এই ‘হরর শো’- আয়োজন করেছে কংগ্রেস, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: এত দ্রুত আয়োজন সম্ভব নয়, মোদীর ৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সভা বাতিল করল বিজেপি

ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এই খবর সামনে আসার পর টুইট করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিরোধী দলগুলির তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও বিরোধীদের তরফে উঠেছে নানান অভিযোগ। গত শনিবার কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশেও জোর গলায় ইভিএম ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা। ইভিএমকে ‘চোর মেশিন’ বলেও ব্রিগেড সমাবেশে আওয়াজ তুলেছিলেন ফারুক।

ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।

EVM Electronic Voting Machine EVM Tampering Election Commission of India Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy