রাজ্য সরকারি কর্মীদের পেনশনে কাটছাঁট বোধহয় বিজেপি শাসিত অসম দিয়েই শুরু হল!
আজ অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাজ্যের সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পারিবারিক পেনশনের বয়ঃসীমা ৬৭ বছরে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মচারী স্বামী/ স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী/স্বামী আমৃত্যু আর পারিবারিক পেনশন পাবেন না। পারিবারিক পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা ৬৭ বছর করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
ব্যাপারটা কেমন? ধরা যাক, স্বামী ৬০ বছর বয়সে অবসর নিলেন। ৬৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হল। তখন তাঁর স্ত্রীর বয়স ৬২। এখন থেকে স্ত্রী তাঁর ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত পারিবারিক পেনশন পাবেন। তার পর আর পাবেন না। আর যদি স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রীর বয়স ৬৭ বা তার বেশি হয়, তবে তিনি কখনওই পারিবারিক পেনশনের দাবি জানাতে পারবেন না।
কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সরকারি পেনশন তুলে দিয়ে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের একটি অংশ কেটে নিয়ে জাতীয় পেনশন প্রকল্পে জমার ব্যবস্থা করেছে। ওই টাকা বাজারে খাটিয়ে (শেয়ার বাজার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিতে) কর্মীর পেনশন দেওয়া হবে। সরকার সরাসরি আর পেনশনের দায় নেবে না। রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এখনও এই ধরনের ব্যবস্থা চালু হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ সম্প্রতি আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অসমের বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, এ বারে ধীরে ধীরে অন্য রাজ্য সরকারগুলিও পেনশনের দায় থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে। হিমন্ত এ দিন আরও বলেছেন, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর বয়স ৮০ পেরিয়ে গেলে তাঁর পেনশন ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে।’’
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, অসমের সরকারি কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ৬ হাজার থেকে বেড়ে হবে ১৫ হাজার ৯০০ টাকা। সাধারণ ভাবে কর্মীদের গড় বেতন বাড়বে ১৬.৪৪ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে এই নয়া বেতমক্রম চালু হবে।
কমিশনের রিপোর্টে অবশ্য গ্রেড পে ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৪ শতাংশ করা হয়েছে। বেসিক পের সঙ্গে যুক্ত করা হবে ১২৫ শতাংশ ডিএ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার থেকে সচিবালয় কর্মীদের সঙ্গে জেলা কার্যালয় ও বিভিন্ন ডিরেক্টরেটের কর্মীরাও সমহারে বেতন পাবেন।’’
হিমন্তর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির হার যেখানে ১৪ শতাংশ, সেখানে রাজ্যের কর্মীদের বেতন ১৬.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। বেতন কমিশনের সুপারিশে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ২০১৬-র ১ জানুয়ারির বদলে ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে তা বলবৎ করার সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদ। পরিষদের সভাপতি বাসব কলিতা জানান, ‘‘এর ফলে সরকারি কর্মীরা ১৫ মাসের বকেয়া পাওনা থেকে বঞ্চিত হলেন।’’