Advertisement
E-Paper

চিনের আপত্তি সত্ত্বেও সীমান্তে নির্মাণ কাজ চলবে

সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলিতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য চিনের নাম না-করে তাদের দোষারোপ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। তার পরে আর আজ নয়াদিল্লিতে ভারত-চিন সীমান্ত বিষয়ক আলোচনার শেষে সাউথ ব্লক জানিয়ে দিল বেজিং-এর আপত্তি সত্ত্বেও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ তারা বন্ধ করবে না। এই কাজ চালু রেখেই চিনের সঙ্গে সীমান্তে শান্তিসূত্র খুঁজতে চায় নয়াদিল্লি।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫

সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলিতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য চিনের নাম না-করে তাদের দোষারোপ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। তার পরে আর আজ নয়াদিল্লিতে ভারত-চিন সীমান্ত বিষয়ক আলোচনার শেষে সাউথ ব্লক জানিয়ে দিল বেজিং-এর আপত্তি সত্ত্বেও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ তারা বন্ধ করবে না। এই কাজ চালু রেখেই চিনের সঙ্গে সীমান্তে শান্তিসূত্র খুঁজতে চায় নয়াদিল্লি।

চিনের সীমান্ত আলোচনা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াং শিয়েচি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে গত দু’দিনের বৈঠকে এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করার দাবি তুলে চাপ দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেজিং সফরে যাওয়ার আগেই সীমান্ত সংক্রান্ত একটি আচরণবিধি তৈরি করা হোক। যার অন্যতম শর্ত হবে সীমান্তে পরিকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রাখা।

ঘটনা হল, এই চিনা প্রস্তাবটির একটি বিশেষ প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেটা কী?

মনমোহন জমানায় যখন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে বিতর্কের ফাঁকে চলছে ধারাবাহিক চিনা অনুপ্রবেশ, তখন ব্যতিব্যস্ত ভারত সীমান্তের জট ছাড়ানোর জন্য একটি নতুন মেকানিজমের খসড়া পাঠিয়েছিল বেজিংকে। কিন্তু সেই খসড়াকে কার্যত অমান্য করে চিন একটি পাল্টা খসড়া (যাকে বলা হচ্ছে সীমান্তের আচরণবিধি) ভারতকে পাঠায়। এর পর ভারতে লোকসভা নির্বাচন চলে আসায় গোটা বিষয়টি ঝুলে যায়। ক্ষমতায় আসার পর বেজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই আচরণবিধিটিও খতিয়ে দেখে মোদী সরকার। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করেছেন নতুন বিদেশসচিব জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল। তখনই স্থির হয়, চিনের এই আচরণবিধিটিতে সব চেয়ে বড় আপত্তির জায়গাটি চিহ্নিত করে শিয়েচির সঙ্গে বৈঠকে তা সাফ জানিয়ে দেওয়া হবে।

ওই আচরণবিধিটির এক জায়গায় বলা হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তে কোনও পাকা পরিকাঠামো তৈরি করতে পারবে না দু’দেশের কেউই। মোদী সরকারের বক্তব্য, এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব। কারণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, ধীরে ধীরে সীমান্তে পরিকাঠামোর নাম করে নিজেদের দিকে কার্যত একটি বিশাল প্রতিরক্ষা আয়োজন সম্পূর্ণ করেছে বেজিং। এমন নিখুঁত ভাবে সেই নির্মাণ করা করে হয়েছে যে খুব অল্প সময়েই চিনা সেনা ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছে যেতে পারে। প্রয়োজনে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকেও পড়তে পারে। মোদী সরকারের বক্তব্য, এর আগে সীমান্তে উপযুক্ত সামরিক এবং প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো তৈরির কাজে যথেষ্ট শৈথিল্য দেখিয়েছে আগের সরকার। কাজ শুরু করা হয়েছে অনেক দেরিতে। এখনও বহু কাজ বাকি। চিনের প্রস্তাব মেনে সেই নির্মাণ মাঝপথে বন্ধ করে দিলে কৌশলগত ভাবে বেজিং অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে যাবে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ডোভাল গত দু’দিনের বৈঠকে শিয়েচিকে জানিয়েছেন যে নীতিগত ভাবে একটি সর্বসম্মত মেকানিজমে পৌঁছতে কোনও আপত্তি ভারতের নেই। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার এ পারে কোনও নির্মাণ কাজ হবে কি হবে না, তা স্থির করা ভারতের সার্বভৌম অধিকার।

কূটনীতিকরা বলছেন, গত দশ মাসেই মনমোহন জমানার সঙ্গে নিজেদের বিদেশনীতির অনেকটাই তফাৎ তৈরি করে নিতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী। চিনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হলেও নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে ড্রাগনের চোখে চোখ রাখার কূটনীতিও দাপটের সঙ্গেই বহাল রাখতে চাইছে তাঁর সরকার। মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর চিন সফরের আগে কিছুটা দৃঢ় অবস্থান নেওয়া চিনের মতো সবল ও শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে পাঞ্জা কষতে সুবিধাই করে দেবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

border problem india china agni roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy