Advertisement
E-Paper

সরকারি হাসপাতাল অ্যাম্বুল্যান্স দেয়নি, সদ্যোজাত সন্তানের দেহ প্লাস্টিকে ভরে বাসে বাড়ি ফিরলেন মহারাষ্ট্রের যুবক!

সখারাম বলেন, ‘‘বাধ্য হয়েই ২০ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের একটি ব্যাগ কিনে আনি। তার পর আমার সন্তানের দেহ কাপড়ে মুড়িয়ে ওই ব্যাগে ভরে সরকারি বাসে উঠে পড়ি।’’

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ১১:২৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বাসে বসে রয়েছেন এক যুবক। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ ধরা। শুকনো মুখ। কান্না চেপে রাখার অনবরত চেষ্টা করছিলেন। হাতে ধরে রাখা সেই প্লাস্টিকের ব্যাগের দিকে বার বার তাকাচ্ছিলেন, আর চোখের কোনা জলে ভিজে উঠছিল তাঁর। যাত্রীদের কয়েক জন বিষয়টি লক্ষ করেছিলেন। কৌতূহলী চোখগুলির নজর প্লাস্টিকের ব্যাগে পড়তেই চমকে উঠেছিলেন যাত্রীরা। কোনও জিনিস নয়, প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা ছিল এক সদ্যোজাত।

বাসের ভিতরে তখন হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল। যুবক তখন জানান, ব্যাগের মধ্যে তাঁরই সদ্যোজাত সন্তানের দেহ। হাসপাতাল থেকে ফিরছেন। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর সন্তানের। তা হলে এ ভাবে সন্তানের দেহ নিয়ে যাচ্ছেন কেন? এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন কয়েক জন। তখন ওই যুবক জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্সেরই ব্যবস্থা করে দিতে চাননি বলে অভিযোগ। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সন্তানের দেহ প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে বাসে করে বাড়ি ফিরছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে তাঁর বাড়ি ৯০ কিলোমিটার দূরে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় মহারাষ্ট্রের নাসিকে।

মুম্বইয়ের বাসিন্দা সখারাম কাভার। তিনি কাটকারি আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তিনি পালঘর জেলার জোগালওয়াড়িতে থাকেন। ঠাণের বদলাপুরে ইটভাটায় কাজ করেন সখারাম এবং তাঁর স্ত্রী। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সপরিবার গ্রামে ফিরে এসেছিলেন সখারাম। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১১ জুন সখারামের স্ত্রী অবিতার প্রসবযন্ত্রণা ওঠে। সখারামের দাবি, ‘‘আমরা অ্যাম্বুল্যান্স ডাকি, কিন্তু কেউ আসেনি। তার পর এক আশাকর্মীকে ডাকা হয়। তিনি ১০৮ নম্বরে ডায়াল করেন। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। তার পরই একটি গাড়ি জোগাড় করে স্ত্রীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই।’’

সখারাম জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয় স্ত্রীকে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয় নাসিক সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেখানেও অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়নি। শেষে ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসা হয়। নাসিকে পৌঁছোতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওই দিন রাত দেড়টা নাগাদ এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সখারামের স্ত্রী। অভিযোগ, পর দিন সকালে তাঁকে জানানো হয়, সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়েন সখারাম। তাঁর হাতে সন্তানের দেহ তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সখারামের অভিযোগ, হাসপাতালের কাছে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কারণ তাঁর বাড়ি হাসপাতাল থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। হাতে পর্যাপ্ত টাকাও ছিল না তাঁর। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেননি।

সখারাম বলেন, ‘‘বাধ্য হয়েই ২০ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের একটি ব্যাগ কিনে আনি। তার পর আমার সন্তানের দেহ কাপড়ে মুড়িয়ে ওই ব্যাগে ভরে সরকারি বাসে উঠে পড়ি।’’ এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Maharashtra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy