Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধী আশ্রমের বাইরে অনশনে মহাদেবের পৌত্র

মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ব্যক্তিগত সহকারী, সাবরমতী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক মহাদেব দেশাইয়ের পৌত্র।

সাবরমতী আশ্রমের বাইরে নচিকেতা দেশাই। নিজস্ব চিত্র

সাবরমতী আশ্রমের বাইরে নচিকেতা দেশাই। নিজস্ব চিত্র

স্নেহাংশু অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

দু’টো থিন অ্যারারুট, আর বড় এক কাপ চা। এটাই ব্রেকফাস্ট। ইদানীং তাঁর সারা দিনের রসদও। এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বড়দিন থেকে রোজ বারো ঘণ্টা করে অনশন করছেন গুজরাতের প্রাক্তন সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী নচিকেতা দেশাই। অনশনের আজ পঞ্চম দিন। ডায়াবেটিক শরীর নিয়ে আজও সকাল ঠিক ৮টায় তিনি পৌঁছে গিয়েছেন সাবরমতী গাঁধী আশ্রমের গেটে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ‘অনুমতি’ নেই। তাই আশ্রম চত্বরের বাইরে ফুটপাতের কনকনে ‘ভিসিটর্স বেঞ্চে’ আস্তানা গেড়েছেন বছর আটষট্টির নচিকেতা।

মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ব্যক্তিগত সহকারী, সাবরমতী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক মহাদেব দেশাইয়ের পৌত্র।

প্ল্যাকার্ড, ব্যানার কিছুই নেই। ছোট্ট ব্যাগে শুধু মোবাইল-চার্জার-হেডফোন। হাতে জলের বোতল আর বগলদাবা করা প্রায় হাজার পাতার বই— রামচন্দ্র গুহের ‘ইন্ডিয়া আফটার গাঁধী।’ ১৯ ডিসেম্বরের সকালে বেঙ্গালুরুর বিক্ষোভ জমায়েত থেকে রামচন্দ্রকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে আটক করেছিল পুলিশ। ঠিক সাত দিনের মাথায় আমদাবাদের পুলিশ মামলা রুজু করেছে নচিকেতার নামে।

বাবা নারায়ণ দেশাই আশ্রমেরই প্রাক্তন ট্রাস্টি-সদস্য। এলাকায় ঘুরে ঘুরে ‘গাঁধী-কথা’ শোনাতেন। নচিকেতার অভিযোগ, বড়দিনে অনশন শুরুর ঘণ্টাখানেকের মাথায় আশ্রমের ডিরেক্টর তাঁকে বাধ্য করেন আশ্রম থেকে বেরিয়ে ফুটপাতে গিয়ে চাটাই পেতে বসতে। একবগ্গা প্রবীণ সে দিন পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘আমি আশ্রম ছেড়ে যাচ্ছি না। শুধু পুলিশ কেন, আপনি চাইলে আমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীকেও ফোন করতে পারেন।’’

শেষ পর্যন্ত আশ্রমের বাইরে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ তাঁকে ঘণ্টা তিনেক আটকে রাখে থানায়। ছাড়ার আগে মুচলেকা চেয়েছিল। দেননি নচিকেতা। বছরখানেকও হয়নি ওপেন-হার্ট সার্জারি হয়েছে। অভুক্ত শরীর দুপুর হলেই বাগড়া দিচ্ছে। অথচ বিকেলে বাড়ি ফিরে লেবু-চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফোনে বেশ জোর গলাতেই বললেন, ‘‘আশ্রমে না-ই বা হল, অনশন তবু চালিয়ে যাবই। নিজের মতো করেই লড়তে হবে। শরীর আমার দিব্যি আছে। কাল একটু খারাপ লাগছিল। আশ্রমের পাশে হরিজন কলোনির লোকেরা নুন-চিনির জল খাওয়ালেন। আর কী চাই!’’

২৩ ডিসেম্বর ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন নচিকেতা। মাউথঅর্গানে বাজাচ্ছিলেন ‘না মাঙ্গু সোনা চান্দি...’। অনশন-বোমাটা ফাটালেন পরের দিন, ২৪ ডিসেম্বর বাবার জন্মদিনে। আশ্রমে গিয়ে সটান জানিয়ে দিলেন, কাল থেকেই তিনি অনশনে বসবেন। নচিকেতার কথায়, ‘‘অনুমতি চাইনি তো। আমি শুধু আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়েছিলাম।’’

আশ্রমে রোজ হাজার তিনেক দর্শনার্থী আসেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের আশঙ্কায় নচিকেতাকে আশ্রম চত্বরে অবস্থান-অনশনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সুদর্শন আয়েঙ্গারও ফোনে বললেন, ‘‘সে দিন ডিরেক্টর সাহেবের সঙ্গে ওঁর কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আজ নচিকেতা ভাইকে অনুমতি দিলে কাল হয়তো অন্য কেউ আশ্রমে আন্দোলন করতে চাইবেন। তখন? ব্যক্তিগত ভাবে আমিও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে আমায় নিয়মটাও মানতে হবে।’’

আজকাল আশ্রমের বাইরে ‘ভিসিটর্স বেঞ্চেই’ নচিকেতার সঙ্গে দেখা করে যাচ্ছে নানাবিধ সংগঠনের নেতারা। ছাত্র-যুবারা এসে বলছেন, পাশে আছি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সাড়া পেয়েছেন বিস্তর। ‘‘ভয়ডরহীন এই তরুণ প্রজন্মই ভরসা জোগাচ্ছে,’’ নইলে ‘ইন্ডিয়া আফটার গাঁধী’ যে আসলে কী, হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE