কয়েক ঘণ্টা ট্রাফিক-জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে দু’কিলোমিটারও গাড়ি এগোতে পারেননি। বৃহস্পতি আর শুক্রবার গুরগাঁও-নয়ডার অফিস ফেরত, কলেজ ফেরত নিত্য যাত্রীদের নিদারুণ অভিজ্ঞতা এটাই। বেহাল নিকাশী ব্যবস্থার সাক্ষী এনএইচ-৮। বৃষ্টির জল জমে রাস্তা বেহাল। যার পরিণতিতে হাজার হাজার মানুষ লম্বা ট্রাফিকের সর্পিল রাস্তায় দমবন্ধ করে অপেক্ষা করছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই অপেক্ষমান মানুষদের মধ্যে আমিও ছিলাম। গুরগাঁও-এর হিরোহন্ডা-চকে চার ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে, একটুও আগে পিছে গাড়ি না এগোতে পেরে জানতে পারলাম, প্রায় ২০ কিমিমিটার লম্বা পর্যন্ত যানজট। বিকেল পাঁচটায় কর্মক্ষেত্র থেকে রওনা হয়ে সকাল চারটেয় বাড়ি পৌঁছেছেন অনেকেই। বেশিরভাগ আম-আদমিই তাদের ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দিল্লি-জয়পুর রোডেও আটকে থেকেছে লক্ষাধিক গাড়ি। সম্ভবত এই শতকের সব থেকে বড় যানজটের কবলে পড়লেন এনসিআর (ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন)-এর বাসিন্দারা। দিল্লিকে বাড়িয়ে হরিয়ানার গুরগাঁও আর উত্তরপ্রদেশের নয়ডা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেও গত দু’দিন ধরে বাকি দিল্লি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে এনসিআর থেকে। গত বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল যে পরদিনই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর খট্টর গুরগাঁও-এর সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে দেন। দুঃস্বপ্নের যানজটে বারো-তেরো ঘণ্টা আটকে থাকা ফরচুন ৫০০ কোম্পানির কর্মচারীরাও শুক্রবার রেনি ডে পেয়েছেন। দিল্লি থেকে গুরগাঁওগামী সমস্ত গাড়িকে ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে আজ অবশ্য দাবি করছে হরিয়ানা সরকার। শুক্রবার সন্ধেয় একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়েতে।
গুরগাঁওয়ের রাস্তার জল এখনও নামেনি। পর পর দাঁড়িয়ে গাড়ি। ছবি: পিটিআই।
বৃষ্টি নেমে দিল্লি সহ গোটা উত্তর ভারতকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা আর ভ্যাপসা গরমের থেকে রেহাই দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগের ভাগ পুষিয়ে দিয়েছে ভয়াবহ এই যানজট। সোশাল-মিডিয়ায় হরিয়ানা আর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী গণতোপের মুখে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সকলেরই এক প্রশ্ন- গুরগাঁও থেকে গালভরা গুরুগ্রাম নামকরণ করা হয়েছে বটে, কিন্তু এই গুরুগ্রাম কতটা উন্নয়নের পথে হেঁটেছে! বিশেষত মৌলিক জনজীবনের কোন উন্নতিটা হয়েছে? গত দু’দিন ধরে এনসিআর-বাসী ও নিত্যযাত্রীরা তার মালুম পাচ্ছেন হাড়ে হাড়ে।
এরই সাথে জুড়েছে ব্লেম-গেম। হরিয়ানা সরকার, দিল্লি সরকার ও এনএইচএআই (ন্যাশানাল হাইওয়েজ অথারিটি অব ইণ্ডিয়া) একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। হরিয়ানা সরকারের বক্তব্য- বৃহস্পতিবার দিল্লির নজফগড়ে নালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গুরগাঁও-এর সমস্ত জল নিকাশের জন্য ব্যবহৃত বৃহত্তম নালা বাদশাপুরের জল এই নজফগড় নালার মধ্যে দিয়েই যমুনায় যায়। নজফগড় নালা দিল্লি থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাদশাপুরের নালার জল ওভারফ্লো হয়ে গুরগাঁও-তে জমে যায়। কোথাও কোথাও উপর থেকে জল উপচে পড়ছে এবং সেই উপচে পড়া জলকে কেউ কেউ ‘খট্টর ফলস’ বলে বিদ্রুপ করছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল গুরগাঁও-এর যানজটকে গুরুজ্যাম বলে কটাক্ষ করেছেন। হরিয়ানা আরবান ডেভলপমেন্ট অথরিটি (হুডা)-র প্রশাসনিক অফিসার যশপাল যাদব বলেন, ইঞ্জিনিয়াররা এনএইচআই-এর নিকাশী ব্যাবস্থায় গলদ খুঁজে পেয়েছেন। অন্য দিকে এনএইচআই-এর আধিকারিকরা মনে করছেন, গুরগাঁও এক্সপেসওয়ের অপ্রতুল জলনিকাশী ব্যবস্থার জন্যই অবস্থার অবনতি ঘটেছে। জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি অবশ্য এনএইচআই-এর আধিকারিকদের দ্রুত হরিয়ানা সরকারকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। গুরগাঁও পুলিশ কমিশনার টিএল সত্যপ্রকাশ টুইটারে দিল্লিবাসীকে অনুরোধ করেন আপাতত দিল্লি থেকে গুরগাঁও গাড়ি নিয়ে না যেতে। ২০ ঘণ্টা ট্রাফিক-আতঙ্কের পর এভাবেই চলছে দোষারোপের পালা। যদিও হরিয়ানা সরকারের তরফ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের খবর এসেছে, তবুও প্রতিদিন কর্মসূত্রে এনসিআর-এ আসা সমস্ত নিত্যযাত্রীরা, আম-আদমিরা জানেন না সত্যিই তারা নিত্যদিনের যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন কিনা!
আরও পড়ুন: অসম, বিহারে বন্যার বলি অন্তত ৫২, আক্রান্ত ৪৫ লক্ষ, প্লাবিত ৭ রাজ্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy