Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪

লাল ব্যাগেই পালানোর ছক, সঙ্কেত ডেরা-প্রধানের

গত শুক্রবারের অশান্তির পরে আজ দিল্লি এসে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে রিপোর্ট দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বৈঠকের পরে ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে বলেন, তিনি আদালতের নির্দেশ পালন করেছেন। নিজের কাজে তিনি সন্তুষ্ট।

রাম রহিম। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।

রাম রহিম। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৪১
Share: Save:

একটা লাল ব্যাগ। সেটাই ছিল সঙ্কেত। এই সঙ্কেত দিয়ে গন্ডগোল ছড়িয়েই কোর্ট থেকে জেলে যাওয়ার পথে পালাতে চেয়েছিলেন গুরমিত রাম রহিম সিংহ।

গত শুক্রবারের অশান্তির পরে আজ দিল্লি এসে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে রিপোর্ট দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বৈঠকের পরে ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে বলেন, তিনি আদালতের নির্দেশ পালন করেছেন। নিজের কাজে তিনি সন্তুষ্ট।

খট্টরের রিপোর্টেই বলা হয়েছে— গুরমিত বুঝেছিলেন, ধর্ষণ মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন। তাই একটি লাল ব্যাগে জামাকাপড় এনেছিলেন। রায় ঘোষণার পরে আদালত কক্ষে ব্যাগটি চেয়ে পাঠান ডেরা প্রধান। সঙ্গে সঙ্গেই কোর্ট থেকে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চকুলা ও সিরসায় শুরু হয় পরিকল্পিত তাণ্ডব।

আসলে ব্যাগ চেয়ে পাঠানোটাই ছিল সঙ্কেত— খারাপ খবর। হাঙ্গামা শুরু করো। প্রায় একই সময়ে ডেরার বাছাই করা গুন্ডাদের মোবাইলে এসএমএসে পৌঁছয় একটি সাঙ্কেতিক বার্তা— ‘টোম্যাটো ফোড়ো’। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সম্ভবত সিরসায় ডেরার সদর দফতর থেকেই পাঠানো হয়েছিল সেই এসএমএস। মর্মার্থ একই, ‘ভাঙচুরে নেমে পড়ো।’ পার্থক্য শুধু একটাই। ‘লাল ব্যাগ’ ছিল সরাসরি গুরমিতের সঙ্কেত।

আরও পড়ুন: গুরমিতের ছবিতে ছিলেন ‘মোদী’ও!

আর সেই সঙ্কেতের আড়ালেই তৈরি ছিল তাঁর পালানোর ছক। ৮০টিরও বেশি গাড়ির কনভয় নিয়ে আদালতে এসেছিলেন ডেরা প্রধান। অস্ত্র, আগুন জ্বালানোর সরঞ্জামে ঠাসা গাড়িগুলো অপেক্ষা করছিল আদালত থেকে জেলে যাওয়ার রাস্তায়। রিপোর্টের দাবি, গুরমিতকে নিয়ে পুলিশের কনভয় আসা মাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল গাড়ির লোকেদের। ঠিক ছিল, সেই হুলস্থুলের মধ্যেই পগার পার হবেন গুরমিত।

ছক আরও একটা ছিল। সেটা হরিয়ানা পুলিশের আইজি কে কে রাওয়ের। মাত্র চার গাড়ির কনভয়ে গুরমিতকে নিয়ে হঠাৎ উল্টো পথ ধরেন তিনি। এই সময়েই বেঁকে বসেন জেড প্লাস নিরাপত্তা পাওয়া ধর্মগুরুর রক্ষীরা। তাঁরা পুলিশেরই কম্যান্ডো। কিন্তু ‘বাবা’-র অনুগত। হাতে একে-৪৭ ধরা এই কম্যান্ডোরা গাড়ি ঘোরানোয় বাধা দিলে অন্য পুলিশরা তাঁদের পিটিয়ে নিরস্ত করেন।

গাড়ি ঢুকে পড়ে সেনা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। এক কর্নেলের সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলেন আইজি। সেখান থেকেই গুরমিতকে নিয়ে রোহতকের জেলের দিকে উড়ে যায় হেলিকপ্টার। আইজি রাওয়ের কথায়, ‘‘হিংসা ছড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে পালানোর সব ছকই কষা ছিল। কম্যান্ডোরা গুলি চালালে আরও ক্ষতি হতে পারত।’’

এত লোককে জড়ো হতে দিল কেন সরকার? পুলিশের মধ্যেই গুরমিতের ভক্ত— এ কথা আগাম জানা যায়নি কেন? মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, গুরমিতকে কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটাই সরকারের লক্ষ্য ছিল। আদালত আগেই বলেছিল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর হতে। সেই নির্দেশ মেনেই যা করার করেছে রাজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE