বাংলাদেশের গুলশনে রেস্তোঁরায় জঙ্গিহানার পর থেকেই গুজবে নাজেহাল অসম ও মেঘালয় পুলিশ।
কখনও বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে পাঁচ জঙ্গির মেঘালয়ে প্রবেশ কখনও বা সচিবালয়ের পাশে তিন জঙ্গি যুবকের ঘোরাফেরার খবরে নাকাল পুলিশ। গুলশন-কাণ্ডের সঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়-কাণ্ড মিশে ছড়াচ্ছে জল্পনা। কিন্তু এডিজি আইন-শৃঙ্খলা সত্যেন্দ্র নারায়ণ সিংহ ও বড়োভূমির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইজি এল আর বিষ্ণোই জানান, বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে জঙ্গি ঢোকার খবর রটলেও তার কোনও বাস্তব ভিত্তি মেলেনি। পুলিশ সতর্ক রয়েছে। বর্ধমান বিস্ফোরণের সঙ্গে গুলশন কাণ্ডকে এক করে দেখা ঠিক নয়। আজ সন্ধেয় এক সাংবাদিক বৈঠকে অসম পুলিশের ডিজি মুকেশ সহায় জানান, সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের খবরের কোনও সত্যতা এখনও মেলেনি। তবে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা যৌথ ভাবে বিষয়টির উপর নজর রাখছে।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার মেঘালয় পুলিশ খবর পেয়েছিল— সীমান্ত পেরিয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে ৭ যুবক দক্ষিণ গারো পাহাড়ে ঢুকেছে। তারা গুয়াহাটির রাস্তা জানতে চেয়েছিল। পরে দু’জন বাংলাদেশে ফিরে গেলেও বাকিরা গুয়াহাটি রওনা হয়। কিন্তু চার দিন ধরে সব রাস্তা ও গারো পাহাড়ে তল্লাশি চালিয়েও সন্দেহভাজন কারও খোঁজ মেলেনি। দক্ষিণ গারো হিলের এসপি আনন্দ মিশ্র জানান, ওই যুবকদের নিজের চোখে দেখেছেন, তেমন কারও সন্ধানও মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে খবর ছড়িয়েছে, ওই পাঁচ যুবক গুয়াহাটিতে ঢুকে পড়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা হয়েছে ‘রেড এ্যালার্ট’। এডিজি এসবি পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সতর্কতা রাজ্যে এমনিতেই রয়েছে। মেঘালয় পুলিশ পাঁচ যুবকের খবর আমাদের জানিয়েছিল। আমরাও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থাকে তা জানিয়েছি। চলেছে তল্লাশি। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও খবর নেই।’’ এ দিন, দিসপুরে সচিবালয়ের পাশেই একটি মোবাইল রিচার্জের দোকানে তিন যুবক, ফাটাশিল-ধীরেণপাড়া এলাকার ঠিকানা জানতে চায়। জানায় তারা শিলং থেকে এসেছে। তার পরই দোকান মালিক তাদের জঙ্গি ভেবে সংবাদমাধ্যম ও পুলিশকে ফোন করে। পুলিশ অবশ্য তেমন কোনও প্রমাণ পায়নি। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
পাশাপাশি খবর রটে, এনআইএ অসমে ঢুকে পড়া বাংলাদেশি জঙ্গিদের ছবি ও নাম প্রকাশ করেছে। কিন্তু এনআইএর তরফে জানানো হয়, তাদের ওয়েবসাইটে সন্দেহভাজন জামাতুল মুজাহিদিনদের সদস্যদের ছবি থাকলেও, তারা অসমে ঢুকেছে বলে নির্দিষ্ট কোনও খবর নেই। অবশ্য এনআইএ সূত্রে খবর, বর্ধমান বিস্ফোরণের পর পলাতক বরপেটার জহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশের নাগরিক রফিকুলের স্কেচ আঁকানো হয়েছে। ছবি প্রকাশ করা হয়েছে বরপেটার সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্য সাহিদুল ইসলামেরও।
গুলশন-কাণ্ডের পরে সাহিদুলের খোঁজে তার বরপেটা তরাবাড়ির বাড়িতে বার বার হানা দিচ্ছে পুলিশ। তাঁর বাবা এই ঘটনায় শয্যাশায়ী। পরিবার জানায়, ২০১২ সাল থেকেই বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নেই সহিদুলের। অবশ্য জহিদুলকে বরপেটার বাসিন্দা বলে এনআইএ জানালেও আইজি বিষ্ণোই জানান, সম্ভবত সে বাংলাদেশের বাসিন্দা। কারণ বরপেটায় তার স্কেচ দেখে এখনও কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। তিনি জানান, সহিদুলও বর্ধমান বিস্ফোরণের পর থেকে বরপেটা আসেনি। তবে, বরপেটা থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবি অসম মডিউলের অন্যতম মাথা শাহনূর তার বাড়িতে এসে ধর্মালোচনা করেছিল। শাহনূরই সাহিদুলকে বর্ধমানে নিয়ে যায়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী— গত এক বছরে বাক্সা, চিরাং, কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁও, গোয়ালপাড়া জেলা থেকে ৪৮ জন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে চারটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পুলিশ ও এনআইএর সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে মাত্র তিন জনকে গ্রেফতার করা বাকি। তারা সম্ভবত বাংলাদেশে পালিয়েছে।