Advertisement
E-Paper

হার্দিক নেমেছেন ম্যারাথনে

এ ছেলে কি অরবিন্দ কেজরীবালের থেকেও এক পা এগিয়ে? নাকি তাঁকে সামনে রেখে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন অন্য কেউ? কেজরীবাল তবু দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে খানিকটা হলেও সময় নিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৯
নয়াদিল্লিতে গুজ্জরদের সংবর্ধনা সভায় হার্দিক পটেল। ছবি: পিটিআই।

নয়াদিল্লিতে গুজ্জরদের সংবর্ধনা সভায় হার্দিক পটেল। ছবি: পিটিআই।

এ ছেলে কি অরবিন্দ কেজরীবালের থেকেও এক পা এগিয়ে? নাকি তাঁকে সামনে রেখে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন অন্য কেউ?

কেজরীবাল তবু দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে খানিকটা হলেও সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু গুজরাতে পটেল সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের বয়স মেরেকেটে দু’মাসও হয়নি! এর মধ্যেই সংরক্ষণের দাবিকে আজ দিল্লির দরবারে এনে ফেললেন পটেল সমাজের নতুন প্রজন্মের নেতা।

হার্দিক পটেল। বয়স মাত্র বাইশ বছর। অথচ দিল্লি এসেই দাপটের সঙ্গে বৈঠক করলেন হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ আর রাজস্থানের প্রবীণ গুজ্জর নেতার সঙ্গে। তার পরই সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, পটেলদের সংরক্ষণের দাবিতে এ বার জাতীয় স্তরে আন্দোলনে নামবেন তিনি। সেই মতো আগামী কাল মধ্যপ্রদেশে সংরক্ষণের দাবিতে পটেল সমাজের সভা হবে। পরে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে একটি মহা সমাবেশের আয়োজন করা হবে। তার পরই দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসবেন তাঁরা। হার্দিক আজ হুমকি দিয়ে এ-ও বলেছেন, ‘‘এটা কিন্তু একশো মিটারের দৌড় নয়। ম্যারাথন। সংরক্ষণের দাবিতে দরকার হলে জাতীয় সড়ক স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।’’

আজ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের সুর শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গলায়। রেডিওর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘গুজরাতে দিন কয়েক আগে যে তাণ্ডব হয়েছে, তাতে সবাই বিচলিত। গাঁধী ও সর্দার পটেলের ভূমিতে এমন অশান্তি হলে সেটাই স্বাভাবিক।’’

হার্দিক এত দিন বলে এসেছেন, হয় পটেল সমাজকে অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় আনা হোক, নইলে সংরক্ষণ ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়া হোক। আজ কিন্তু সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া নিয়ে একটা শব্দও খরচ করেননি তিনি। আসলে এখন জাঠ আর গুজ্জরদের দলে টানতে চাইছেন হার্দিক। আর এই দুই সম্প্রদায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা না তুলে উল্টে তার সুবিধা পাওয়ার পক্ষে। আর তাই যৌথ মঞ্চে বসে হার্দিককে আজ বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পটেল সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণই চাইছি আমরা। গুজরাতের পটেল, হরিয়ানা-মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান-উত্তরপ্রদেশের জাঠ-গুজ্জর সবই এক। বিহারের কুর্মি ও অন্ধ্রের রেড্ডিরাও তাই।’’ সেই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হার্দিক আজ এ-ও বলেছেন, ‘‘সংরক্ষণ ব্যবস্থার জন্য গত ষাট বছরে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’ অর্থাৎ পরোক্ষে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

তবে দিল্লিতেই আজ সন্ধেয় গুজ্জরদের এক সংবর্ধনা সভায় গিয়ে হেনস্থা হতে হয়েছে হার্দিককে। রাজেন্দ্র মাওই নামে এক গুজ্জর নেতার দাবি, জাঠদেরও এই একই আন্দোলনে সামিল করাটা ঠিক হচ্ছে না। খানিক কথা কাটাকাটির পরে রাজেন্দ্রকে অবশ্য সভা স্থল থেকে বার করে দেওয়া হয়। তবে হার্দিকের আন্দোলন নিয়ে গুজ্জররা যে দ্বিধাবিভক্ত, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট।

তবে হার্দিক আজ যে ভাবে দিল্লি এসে বৈঠক করেছেন, তাতে অনেকেরই ধারণা, একটা বাইশ বছরের ছেলের কাজ এটা নয়। হার্দিকের দিল্লি সফরের আয়োজনে সমাজবাদী পার্টির কিছু গুজ্জর নেতাকে দেখা গিয়েছে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের মদত রয়েছে তাঁর পিছনে। সঙ্ঘ পরিবার জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে। তারা অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণের কথা বলে। কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেছেন, ‘‘পটেল, জাঠ, গুজ্জর একসঙ্গে সংরক্ষণের দাবিতে নামলে একটা অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হতে পারে সেই বিতর্কের প্রেক্ষাপটেই জাতি ভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতম করার ধুয়ো তুলবে সঙ্ঘ পরিবার।’’ যদিও ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপির এক নেতা এই মতবাদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা সবই বিজেপি শাসিত রাজ্য। তাঁর প্রশ্ন, সেখানে অস্থিরতা তৈরি করে বিজেপির কী লাভ? বরং পটেলদের উপর যে ভাবে লাঠি চলেছে তার গুণাগার দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তিনি এটা স্বীকার করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে এখনই হার্দিকদের নিরস্ত করতে না পারলে গোটা দেশে এই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Hardik Patel India-wide Delhi RSS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy