রেকর্ড হয়েছে এক ঘটনা। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য বলছে অন্য কথা। শুক্রবার হরিয়ানার রোহতকের চলন্ত বাসে কেন তিন যুবককে মারধর করেন দুই বোন? কেউ বলছেন, যুবকেরা নির্দোষ। মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে তাঁদের। আবার কেউ বলছেন নেহাতই বসার জায়গা নিয়ে বচসা গড়িয়েছে হাতাহাতি অবধি। সব মিলিয়ে ঘোর ধন্দে পুলিশ। যার জেরে দুই বোনকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখল হরিয়ানা সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এমএল খাট্টার জানালেন, পুলিশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরস্কৃত করা হবে না আরতি এবং পুজা কুমারকে।
ঘটনাটি ২৮ নভেম্বরের। রোহতক থেকে সোনেপতগামী চলন্ত বাসে তিন যুবকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান আরতি এবং পুজা। অভিযোগ, দুই বোনকে সব যাত্রীদের সামনে হেনস্থা করছিল তারা। কেবল তিরস্কারে আটকে না থেকে রীতিমত হাত চালিয়ে ধরাশায়ী করেন ‘লড়াকু’ মেয়েরা। সেই ভিডিওই মোবাইলে রেকর্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। ঠিক তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আর একটা ভিডিও। যেখানে একই কায়দায় পার্কে এক ইভটিজারকে ঘায়েল করছেন ওই দু’জনই। বাস কাণ্ডে তিন অভিযুক্ত মোহিত, কুলদীপ এবং দীপককে প্রথমে গ্রেফতার করলেও পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। দুই বোনকে ৩১ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে হরিয়ানা সরকার।
কিন্তু সময় যত এগোয়, ততই অন্য মোড় নেয় ঘটনা। গত কালই এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবারের ঘটনার কেন্দ্রে ছিল বসার জায়গা নিয়ে বচসা। এমনকী অভিযুক্তরা কেউ আগ বাড়িয়ে কোনও কটুক্তি করেনি পুজা বা আরতিকে। যদিও বাস কন্ডাকটার জানিয়েছেন, দুই বোনকে বিরক্ত না করার জন্য তিনি ওই তিন যুবককে হুঁশিয়ার করেন তিনি। রোহতকের ডিএসপি যশপাল খাটনা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। জনসমক্ষে হেনস্থার বিরুদ্ধে এভাবে রুখে দাঁড়ানোয় দুই বোনকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে হরিয়ানা সরকার। যদিও বাসের বাকি যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য কথা জানতে পারে পুলিশ।
যেমন বিমলা নামে এক যাত্রী পুলিশকে জানান, তিন জন নয়, আদতে কুলদীপ নামে এক জনের সঙ্গেই ঝামেলা হয় আরতি এবং পুজার। বিমলাই কুলদীপকে বলেন রোহতক বাসস্ট্যান্ড থেকে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য টিকিট কিনে দিতে। কিন্তু বাসে উঠে দেখা যায় অসুস্থদের জন্য বরাদ্দ আসনে আগে থেকেই বসে রয়েছেন আরতি ও পুজা। তাঁদের উঠে যেতে বললে তাঁরা রাজি হন নি। বরং অন্তঃসত্বা মহিলাকে অন্যত্র বসতে বলেন। তখনই বেঁধে যায় বচসা। দুই বোন মারমুখী হয়ে ওঠেন। সে সময় গোটা ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করেন এক যাত্রী। বিমলা আরও বলেছেন, “বাসটির গতি কমালে লাফ দিয়ে নেমে যায় কুলদীপ। দুই বোন পিছু ধাওয়া করে। পুলিশ এলে তারা পুলিশের কাছে কুলদীপের পাশাপাশি মোহিত ও দীপক নামে দুই যুবকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে। অথচ ঘটনাস্থলে ছিল মাত্র এক জন।”
আরও অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাচ্ছে না পুলিশ। যে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বাসের ঘটনাটি রেকর্ড করেছিলেন বলে দাবি, তাঁর আর পরে কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকী, পার্কে ইভটিজারদের মারার ঘটনাটি রেকর্ড করেছেন যিনি তাঁরও সন্ধান পায়নি পুলিশ। সব সময়ই ওই দুই বোনের ‘অ্যাকশন’ রেকর্ড করার জন্য কেউ না কেউ কী ভাবে হাজির, সেই প্রশ্নেরও জবাব পায়নি পুলিশ। দুই বোনের দাবি, অন্য যাত্রীদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য এ ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাঁদের উপর। বৃহস্পতিবার ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy