Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Hathras Gang Rape

নির্ভয়ার ধর্ষকদের আইনজীবীই সওয়াল করবেন হাথরসের অভিযুক্তদের হয়ে

হাথরসের অভিযুক্তদের হয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়েও সেই এ পি সিংহের ভূমিকা নজরে থাকবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

এ পি সিংহ। ফাইল চিত্র।

এ পি সিংহ। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

হাথরস গণধর্ষণ-খুনের ঘটনা সামনে আসতেই দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ড ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। নৃশংসতায় নির্ভয়া-কাণ্ডের চেয়ে কিছু কম নয় হাথরস, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। এ বার এজলাসেও হতে চলেছে নির্ভয়া-কাণ্ডের ‘পুনরাবৃত্তি’। নির্ভয়ার ধর্ষক-খুনিদের হয়ে সওয়াল করা সেই আইনজীবী এ পি সিংহ এ বার আদালতে দাঁড়াতে চলেছেন হাথরসের অভিযুক্তদের পক্ষে। সোমবার প্রেস বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের উচ্চবর্ণের সংগঠন অখিল ভারতীয় ক্ষত্রিয় মহাসভা। আইনজীবীর পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ জোগাড় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহাসভার সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজা মানবেন্দ্র সিংহ।

যদিও এখনও এ পি সিংহের তরফে সদর্থক বা নেতিবাচক কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মহাসভার নেতারা আইনজীবী এ পি সিংহর সঙ্গে কথা বলেই এই ঘোষণা করেছেন। নির্ভয়া-কাণ্ডে নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দোষীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার পদ্ধতিতে বার বার যে ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী এ পি সিংহ, হাথরস-কাণ্ডেও তেমন পটভূমি তিনি তৈরি করছেন বলে আইনজীবী মহলের একাংশের ধারণা।

মহাসভার তরফে সোমবার একটি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘এই মামলায় (হাথরস গণধর্ষণ-খুন) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে অভিযুক্তদের হয়ে আদালতে সওয়াল করবেন আইনজীবী এ পি সিংহ।’’ হাথরস গণধর্ষণ-খুনে গোড়া থেকেই অভিযুক্তদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন ঠাকুর সম্প্রদায় তথা উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা। অভিযুক্তদের সমর্থনে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন তাঁরা। বিক্ষোভ-জমায়েত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেওয়া, শাসানোরও। নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা এফআইআর দায়ের করার আর্জিতে সরব হয়েছিলেন তাঁরা। সোমবার মহাসভার প্রেস রিলিজেও একই সুর। বলা হয়েছে, ‘‘রাজপুত সম্প্রদায়কে কলুষিত করতে অপব্যবহার করা হচ্ছে দলিতদের।’’

আরও পড়ুন: পুলিশও শেষে বলল ‘হ্যাটস অফ ম্যাডাম’, ভাঙা গলায় জানালেন প্রতিমা

২০১২ সালে ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়া নির্ভয়াকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচার করে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় মোট ৬ অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। তার মধ্যে এক জন আদালতে নাবালক প্রমাণিত হওয়ায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তাঁকে সর্বোচ্চ ৩ বছর জুভেনাইিল আশ্রমে থাকার নির্দেশ দেয়। বিচার চলাকালীন জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত রাম সিংহ। বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা উল্লেখ করে বাকি চার জনের ফাঁসির নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত। সেই নির্দেশ বহাল রাখে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও। এ বছরের ২০ মার্চ দিল্লির তিহাড় জেলে শেষ পর্যন্ত নির্ভয়ার চার ধর্ষকের ফাঁসি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য পার হয়ে গিয়েছে সাড়ে সাত বছর। এই সাড় সাত বছর যে ধর্ষকরা জীবিত ছিলেন, তার অনেকটাই ‘কৃতিত্ব’ আইনজীবী এ পি সিংহর। কৃতিত্ব অবশ্যই ধর্ষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দিক থেকে। সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দেওয়ার পরে আর কোনও আইনি পথ খোলা নেই এবং এ বার ফাঁসি হবে বলে যখন দেশবাসী প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই বার বার সিআরপিসি-র এক একটা নতুন ধারা, উপধারা বার করে এনেছেন এ পি সিংহ। কখনও রায় পুনর্বিবেচনা, কখনও রায় সংশোধনের (কিউরেটিভ পিটিশন), কখনও অপরাধী নাবালক— এমন সব নানা আইনি যুক্তি খাড়া করেছেন। ধর্ষকরা জীবিত থাকা পর্যন্ত একে একে প্রয়োগ করেছেন আইনের সমস্ত এবং শেষ বিকল্প। তা-ও আবার সব অভিযুক্তের হয়ে এক বারে নয়, সুকৌশলে এক জনের আর্জি খারিজ হওয়ার পর দ্বিতীয়, তার পর তৃতীয়, চতুর্থ— এই ভাবে। তার জেরে চার বার পিছিয়েছে ফাঁসির দিন। অযথা আইনি প্রক্রিয়া বিলম্বিত এবং ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে নানা মহল থেকে। যদিও শীর্ষ আদালত তাঁর কোনও আর্জিই পত্রপাঠ খারিজ করতে পারেনি, বরং বলেছে, ‘কেউ দোষী হলেও আইনের শেষ বিকল্প ব্যবহার করার অধিকার তার আছে’।

আরও পড়ুন: ‘যোগী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’, হাথরস নিয়ে দাবি পুলিশের

সব পেশাতেই অনেক সময় শুধুমাত্র পেশাগত বাধ্যবাধকতার কারণেই এমন অনেক কাজ করতে হয়, যাতে মন সায় দেয় না। অথবা অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। নির্ভয়া-কাণ্ডে যেমন এ পি সিংহ, ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হানায় প্রায় একই কাজ করেছিলেন আব্বাস কাজমি। মুম্বই হামলায় জীবিত ধরা পড়া একমাত্র পাকিস্তানি জঙ্গি আজমল কাসভের হয়ে লড়তে চাননি দেশের কোনও আইনজীবী। কিন্তু আদালত বলেছিল, সন্ত্রাসবাদীরও আইনের সব রকম সাহায্য পাওয়ার অধিকার আছে। কাজমিকে আদালতই কাসভের আইনজীবী নিয়োগ করে এবং তিনি পেশাদার আইনজীবীর মতো কাসভের হয়ে লড়াইও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নির্ভয়া-কাণ্ডের মতোই কাসভের ফাঁসি আটকাতে পারেননি কাজমি।

ফৌজদারী আইনজীবী এ পি সিংহকে ঘিরে অবশ্য বিতর্কও কম নেই। এজলাস থেকে আদালত চত্বর, বা তার বাইরে নানা সময়ে বহু বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য শিরোনামে উঠে এসেছেন। এক সময় বলেছিলেন, ধর্ষণ বন্ধ করতে গেলে দেশে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-র মতো উৎসব পালন করা উচিত নয়। কারণ পশ্চিমি ওই সংস্কৃতি ভারতবর্ষের মতো দেশে মানায় না। ‘অনার কিলিং’-এর পক্ষে এক বার বলেছিলেন, তাঁর নিজের মেয়ে যদি বিয়ের আগে কোনও সম্পর্ক করে, তা হলে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেবেন। হাথরসের অভিযুক্তদের হয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়েও সেই এ পি সিংহের ভূমিকা নজরে থাকবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Gang Rape Nirbhaya Rape Case A P Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE