Advertisement
E-Paper

বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন দলিতেরা

বিজেপি-র প্রতি দলিত সম্প্রদায়ের ঘৃণার যে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তাকে কাজে লাগাতে আপাতত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা বঢরা।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৩১
হাথরসের নির্যাতিতার স্মরণে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

হাথরসের নির্যাতিতার স্মরণে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

‘তোমরা হুকুম তামিল ছাড়া আর কি-ই বা করবে! বাড়িতে মা বিটির কাছেও তো জবাব দেওয়ার নেই। তোমরা তো ঠাকুর। যোগীর হুকুম তো মানতেই হবে!’

হাথরসের বুল গড়হী গ্রামের ঢোকার কাঁচা-পাকা রাস্তা যেখানে শুরু হচ্ছে, সেখানেই ব্যারিকেড দিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রশাসনের প্রাচীর তৈরি হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা হল। সশস্ত্র রাইফেলধারীদের রক্তচক্ষু-- উপস্থিত মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতি। ভিতরে ঢুকতে না-পারলেও, আশপাশের দলিত গ্রাম থেকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন ক্ষয়াটে চেহারার ম্লান মুখ। পুলিশ এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ ভাবেই শাপশাপান্ত এবং বিষোদ্গার করছেন। গত কাল বিকেলের দিকে এই ভিড়কে শান্ত করতে লাঠিও চালাল পুলিশ।

না, এঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী নন। নির্যাতিতা তরুণীর লাশ নিয়ে রাজনীতি করতেও আসেননি। এঁরা উত্তরপ্রদেশের দলিত সম্প্রদায়েরই অংশ, যাঁরা দৃশ্যতই গত কয়েক বছরে পীড়িত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন বিজেপি-র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ পর্যন্ত হাথরস শুধু একটা মানব-ট্রাজেডি বা রোগী আদিত্যনাথের সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়। এই ঘটনা চোখে আহুল দিয়ে তুলে ধরছে, উত্তরপ্রদেশ তথা গোটা দেশে বিজেপি-র রাজনৈতিক ব্যর্থতাকেও।

আরও পড়ুন: নীরব কেন প্রধানমন্ত্রী, প্রশ্ন যন্তর মন্তরের

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বাইশের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে, হাথরস একটি প্রতীক হয়ে উঠতে পারবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু বিজেপি-র প্রতি দলিত সম্প্রদায়ের ঘৃণার যে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তাকে কাজে লাগাতে আপাতত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা বঢরা। গত কাল গ্রেটার নয়ডায় যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে রাহুলের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধ্বস্তির পর আজ প্রিয়ঙ্কাকে দেখা গিয়েছে দিল্লিতে প্রাচীন ভগবান বাল্মিকী মন্দিরে গিয়ে হাথরসের নির্যাতিতার জন্য প্রার্থনা করতে। প্রার্থনাসভায় বসেই তিনি নারী এবং দলিত— এই দুই অস্ত্রে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “ওই দলিত পরিবারের উপর প্রবল অন্যায় হয়েছে। সরকারের কোনও সহায়তাই নেই, তারা অসহায়। আমি এসেছি তাঁদের জন্য প্রার্থনা করতে। দেশের প্রতিটি নারীর উচিত সরকারের উপর চাপ তৈরি করা।“

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘বিজেপি মুসলিমদের উপরে নিপীড়ন করলে ভোটের অঙ্কে তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু দলিত নিপীড়নের ঘটনায় তাদের রাজনৈতিক লোকসানই বেশি। হাথরস-সহ পরপর দলিত নারী নির্যাতনের ঘটনার দায় তারা আড়াল করার চেষ্টা করছে। এর ফল মোদী-জোগীকে ভুগতে হবে। আমরা ছাড়ব না, লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে।‘

আরও পড়ুন: দাহের ৪৮ ঘণ্টা পরেও নিভে যাওয়া চিতায় পড়ে রয়েছে নির্যাতিতার অস্থি

জাতপাত নির্বিশেষে দলিত, পিছড়ে বর্গ, জনজাতি-সহ সমস্ত বর্ণের হিন্দুকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার যে কৌশল নিয়েছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব, তাতে ফাটল ধরেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। আর এই ফাটলের জন্য ঘরোয়া ভাবে উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্ত মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই আঙুল উঠছে। শুধু দলিত নয় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদেরও বেজায় চটিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর এনকাউন্টারের নিশানায় ব্রাহ্মণেরা— এই অভিযোগ উঠছে। পরিস্থিতি এমনই যে, স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক, নেতারাও ঠারেঠোরে হাথরস কাণ্ডের জন্য যোগী সরকারকেই দোষ দিচ্ছেন। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্বও যোগীর ঠাকুর পরিচয়কে বেশি করে তুলে ধরার জন্য তাঁর পুরনো নাম অজয় সিংহ বিস্ত বলে ডাকতে কসুর করছেন না।

অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরে দলিতদের উপরে শুধু যে নির্যাতন বেড়েছে তা নয়, সমস্ত প্রশাসনিক এবং সামাজিক গোষ্ঠীতেও তারা কোণঠাসা হয়েছে। সুযোগসুবিধা অনেক বেশি পেয়েছে ঠাকুরেরা।

পাশাপাশি, হাথরসের ঘটনার পরে একদা দলিতদের মসিহা মায়াবতী অথবা এসপি-র অখিলেশ সিংহ যাদবের মতো বিরোধী নেতাদের কিন্তু সক্রিয় ভাবে ওই গ্রামের ধারে কাছে দেখা যায়নি। বিএসপি নেতারা তো আজ পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই ঘেঁষেননি (শুধু মায়াবতী ঠান্ডা ঘরে বসে যোগী-বিরোধী একটি বিবৃতি দিয়েছেন)। এসপি-র যে সব নেতা ধর্নায় বসেছেন, তাঁরা গুরুত্বের বিচারে দলে একবারেই নগণ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রক্তচক্ষুর কারণেই মায়াবতী-অখিলেশরা এ ভাবে গুটিয়ে রয়েছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের দুই বিরোধী দলের এই সক্রিয়তার অভাবেই মৌরসীপাট্টা গড়ে তুলতে পেরেছে বিজেপি।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বস্তরের হিন্দুকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার তে প্রয়াস বিজেপি করছিল, তাতে ফাটল ধরা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। ভোটের তাগিদে নরেন্দ্র মোদী যতই দলিত-পিছড়ে বর্গদের কাছে টানার চেষ্টা করুন, যতই অম্বেডকরকে নিজের আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করুন, তাঁর দল চিরকালই ব্রাহ্মণ-বানিয়ার, উচ্চবর্ণের, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তের। রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা থেকে উনা-কাণ্ড, গত কয়েক বছরে বহু বার প্রমাণ হয়েছে, বিজেপির কাছে নিম্নবর্গের গুরুত্ব ভোটের চেয়ে বেশি নয়। আবার এটাও বলা হচ্ছে যে, আরএসএস দলিতদের তার বৃহৎ হিন্দুত্বের অংশ হিসেবেই দেখতে বা দেখাতে চায় ঠিকই, মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের দলে টানতেও চায়। কিন্তু যেখানে দলিত রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে মনুবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, সেখানে আরএসএস-এর মতো আন্তরিক ভাবে মনুবাদী দলে তাদের মিশ খাওয়ার সম্ভাবনাও দীর্ঘমেয়াদি ভাবে অসম্ভব।

Hathras Gangrape Uttar Pradesh BJP Dalits Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy