তিনি সামজমাধ্যমে খুবই সক্রিয়। সেখানে নানা ধরনের জ্ঞান বিতরণ করেন। এলাকায় এবং নেটাগরিকদের কাছে তিনি ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসাবেই বেশ পরিচিত। কী ভাবে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা যায়, কী ভাবে অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা যায়— মূলত এই বিষয়েই সমাজমাধ্যমে নানা রকম বার্তা দিতেন। অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার বার্তা দেওয়া সেই ব্যক্তিই যে অপরাধে শামিল, তা কারও কল্পনাতেই আসেনি।
দিনে ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসাবে নিজেকে সমাজমাধ্যমে তুলে ধরতেন। আর রাতে হয়ে উঠতেন ডাকাত! সম্প্রতি একটি ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হতেই আসল রূপ প্রকাশ্যে আসে। তিনি মনোজ কুমার সিংহ। ওড়িশার ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার তাঁকে ভরতপুরে ২০ লক্ষ টাকা একটি ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার করতেই এলাকায় এবং সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুগামীরা হতভম্ব হয়ে যান।
পুলিশ কমিশনার এস দেবদত্ত সিংহ বলেন, ‘‘ইউটিউবার হিসাবে পরিচিত ওই যুবক যে অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা কেউ আন্দাজ করতে পারেননি। একটি ডাকাতির মামলায় তদন্ত শুরু হতেই ইউটিউবারের নাম প্রকাশ্যে আসে। ১৪ অগস্টে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। একটি বাড়ি থেকে ২০ লক্ষ টাকার গয়না এবং নগদ এক লক্ষ টাকা ডাকাতি হয়। সেই ঘটনায় ইউটিউবার মনোজ সিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ কমিশনার আরও জানিয়েছেন, এটি সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। যে ব্যক্তি অপরাধের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে জ্ঞান বিতরণ করেন, সেই ব্যক্তি নিজেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত! তাঁর এই দ্বৈত রূপ সকলকে চমকে দিয়েছে।
মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন মনোজ। তার পর অপরাধের দুনিয়ায় প্রবেশ। ২০১০-১১ সাল থেকে ছোটখাটো চুরি দিয়ে হাত পাকানো শুরু হয় তাঁর। কটকের বৈদেশ্বরের বাসিন্দা মনোজ নয়াগড় জেলায় স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভুবনেশ্বর এবং নয়াগড়ে জেলায় ১১টি চুরি এবং ডাকাতির মামলা রয়েছে। তার পর জামিনে জেল থেকে মুক্তি পান। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপরাধমূলক কাজ বন্ধ রাখেন। কিন্তু ২০২৪ থেকে আবার পুরনো ‘পেশায়’ ফিরে যান। কিন্তু এ বার খুব সতর্ক ভাবেই অপরাধমূলক কাজ করা শুরু করেন। পুলিশ বা এলাকার কেউ যাতে ঘুণাক্ষরেও টের না পান, তার জন্য ঢাল হিসাবে সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করা শুরু করেন। নিজেকে ইউটিউবার হিসাবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। কী ভাবে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে হবে, তা নিয়ে নানা রকম বার্তা দেওয়া শুরু করেন। দিনে মূলত এই কাজটাই করতেন। আর রাত হলেই তাঁর দ্বিতীয় রূপ প্রকট হত।