Advertisement
E-Paper

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক লড়াই তুঙ্গে

ইসলামাবাদের ইটের বদলে পাটকেল ছোড়া ছাড়া আর গত্যন্তর রইল না মোদী সরকারের। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক বন্দুকবাজি আজ এমনই ছিলা টানটান পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিশামুখ এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ২১:৫২

ইসলামাবাদের ইটের বদলে পাটকেল ছোড়া ছাড়া আর গত্যন্তর রইল না মোদী সরকারের।

কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক বন্দুকবাজি আজ এমনই ছিলা টানটান পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিশামুখ এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। পাকিস্তান রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের কাছে কাশ্মীর নিয়ে নালিশ জানানোর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর তীব্র ভাষায় মুখ খুলল সাউথ ব্লক। এক দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চ, অন্য দিকে দিল্লির জওহরলাল ভবন— এই দু’জায়গা থেকেই আক্রমণ করা হল ইসলামাবাদকে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কারও নাক গলানো আদৌ বরদাস্ত করা হবে না, এ কথা সাফ জানিয়ে আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান শুধুমাত্র কাশ্মীরে জঙ্গি ঢুকিয়েই ক্ষান্ত দিচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। উপত্যকায় বিক্ষোভ তৈরি করিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সাহায্য করাটাও তাদের কৌশলের মধ্যে পড়ে। সন্ত্রাস এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।’’ অন্য দিকে, বিদেশমন্ত্রকের প্রাক্তন মুখপাত্র তথা রাষ্ট্রপুঞ্জের ভারতীয় প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিনও একই ভাবে খড়্গহস্ত হয়েছেন পাক-অভিযোগ খণ্ডন করতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের তৈরি করা মঞ্চের অপব্যবহার করছে পাকিস্তান। অথচ এই পাকিস্তানই সন্ত্রাসকে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি বানিয়ে ছেড়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় থাকা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। অন্যের এলাকায় আগ্রাসন ঘটিয়েছে।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো পর্যায়ে ভারতের এই অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার বিষয়টিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। সাউথ ব্লকের এক কর্তার মতে, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে ইসলামাবাদ যে ভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে তার থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল তারা পিছনের সেতুটি পুড়িয়ে ভারতের সঙ্গে পাঞ্জা কষতে চলেছে। এই মুহূর্তে সে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এমনই যে পাক প্রধানমন্ত্রী তথা রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা খুবই সীমিত। অস্ত্রোপচারের পর নওয়াজ এমনিতেই দুর্বল। এখন কার্যত তাঁর কানে বন্দুক ঠেকিয়ে ভারত-নীতি নির্ধারণ করা হচ্ছে পাক সেনার সদর দফতর থেকে। ফলে আমাদেরও প্রতি-আক্রমণের রাস্তায় হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।’’ সেই ‘প্রতি আক্রমণ’-এর পথে হেঁটে আজ একদিকে আকবরউদ্দিন বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলেই সদস্যপদ পায়নি এই পাকিস্তান। এমনই তাদের ট্র্যাক রেকর্ড!’’ অন্য দিকে বিকাশ স্বরূপের বক্তব্য, ‘‘গোটা বিশ্ব জানে যে আমাদের অঞ্চলে কোন দেশ সন্ত্রাসবাদের কারখানা খুলে বসেছে। কারা অন্য দেশে জঙ্গি পাচার করে!’’

বিদেশমন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দু’দিন আগে ইসলামাবাদ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর নিয়ে নালিশ করার পর চটজলদি কোনও প্রতিক্রিয়া কিন্তু দেয়নি নয়াদিল্লি। বরং অপেক্ষা করা হচ্ছিল, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন কাশ্মীরে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ আরোপ করার পরামর্শ দেওয়ার পর পরিস্থিতির গুরুত্ব এক লাফে অনেকটাই বাড়ে। উৎসাহিত পাকিস্তান এর পর প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তার পর ইসলামি রাষ্ট্রগুলির সংগঠন (ওআইসি)— একের পর এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর নিয়ে প্রচার উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে থাকে। এর পরেই সাউথ ব্লক সিদ্ধান্ত নেয় যে আর চুপ করে থাকা ঠিক হবে না। কারণ তা হলে ভুল বার্তা যেতে পারে।

অথচ দিল্লির তখতে বসার পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তির পায়রা ওড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা সে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরের দিনই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে প্রস্তুতিহীন বৈঠকই হোক, বা কার্যত বিনা নিমন্ত্রণে নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে লাহৌরে তাঁর বাড়ি চলে যাওয়া। কিন্তু এই প্রবল প্রয়াস সত্ত্বেও ক্রমশ এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে মোদী অথবা নওয়াজ (এক জন ব্যবসায়ী হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার প্রশ্নে গোড়ায় যথেষ্ট উৎসাহিত ছিলেন শরিফও) যতই চেষ্টা করুন, বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে শান্তি প্রয়াস। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করে গিয়েছেন। তিনি মনে করতেন নিরাপত্তার প্রশ্নেই পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে সদাসর্বদা বসিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তি প্রক্রিয়া তিনিও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। শেষ কথা বলেছে পাক সেনা এবং আইএসআই।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানকে তীব্র প্রত্যাঘাত ভারতের, তপ্ত সাধারণ সভা

নওয়াজের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ‘ব্যক্তিগত রসায়ন’ তৈরির চেষ্টা করলেও তাঁর পাক-নীতি কিন্তু বিরোধী শিবিরে এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে বার বার সমালোচনার মুখে পড়েছে। অভিযোগ, গোড়া থেকেই পাক প্রসঙ্গে কিছুটা হিসাবি এবং সাবধান হয়ে এগোনো উচিত ছিল তাঁর। কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বার বার অভিযোগ তুলেছেন, বর্তমান সরকারের পাক-নীতির কোনও ধারাবাহিকতা নেই। গত বছর দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে সামগ্রিক আলোচনা ফের শুরু হবে বলে সব স্থির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলিয়ে রাখা হল, হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূতের বৈঠক করার অপরাধে। কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বিষয়টিকে আরও বাস্তবসম্মত ভাবে মিটিয়ে রাজনৈতিক আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সে সময় কাম্য ছিল। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সংযোগ জোরদার করা। উনি অনেক আউট অব দ্য বক্স আইডিয়া দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। আইএসআই মাথা চাড়া দেওয়ার আগেই নওয়াজের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক সামগ্রিক আলোচনা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’’

আগামী নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন। তার আগে অগস্ট মাসে সে দেশে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রাজনাথ সিংহের যাওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, রাজনাথ সিংহের যাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।’’

Kashimr India Pakistan Diplometic Struggle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy