Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
AC

প্রযুক্তি ও প্রকৃতির দ্বন্দ্বে ইতিহাসের আখ্যান  

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৫
Share: Save:

দিল্লির এক মহল্লায় সমীক্ষায় গিয়েছিলেন নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চাকারী এক ইতিহাসবিদ। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে বাতানুকূল যন্ত্র কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে গৃহস্থ উত্তর দিয়েছিলেন, “এই যন্ত্র বসানোর পর জীবনে শান্তিতে ঘুমোচ্ছি।” গরম শহরে ওই একটি যন্ত্র জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছিল কিন্তু উল্টো দিকে এটাও ঠিক কম দামি এসি মেশিনে যে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন থাকে তা উষ্ণায়নের মাত্রা বাড়ায়। প্রযুক্তি এবং প্রকৃতির এই পরস্পরবিরোধিতাই উঠে এসেছে ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর বক্তৃতায়।

শুধু এই একটি উদাহরণ নয়, বিংশ শতক থেকেই যে ভাবে

মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রকৃতিকে ‘জয়’ করতে চেয়েছে তার নানা রূপ ও প্রভাবের সূত্র ধরেই শুক্রবার স্কটিশ চার্চ কলেজ আয়োজিত এ বছরের আলেকজ়ান্ডার ডাফ স্মারক বক্তৃতার সুর বেঁধেছেন প্রবীণ এই ইতিহাসবিদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্ব থেকে ঠান্ডা যুদ্ধ এবং বর্তমান অতিমারি, ছত্রে ছত্রে প্রকৃতি ও প্রযুক্তির দ্বন্দ্বে মানব সভ্যতার ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন তিনি। যেখানে প্রকৃতির পরিবর্তনে মানুষকে দীপেশবাবু উল্লেখ করেছেন একটি ‘ভূ-প্রাকৃতিক শক্তি’ হিসেবে অর্থাৎ যে শক্তি পৃথিবী এবং প্রকৃতির চেহারা বদলে দেয়।

পঞ্চাশ-ষাটের দশকে কলকাতায় বেড়ে উঠেছেন দীপেশবাবু। তাঁর নিজের স্মৃতিতে যেমন খাদ্য সঙ্কট ধরা পড়েছে, তেমনই রয়েছে সবুজ বিপ্লবের কথাও। এবং অবশ্যই রয়েছে বিশ্বায়নের প্রসঙ্গও। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বায়নের প্রভাব নিয়ে পৃথিবীর সর্বত্র আলোচনা বিদ্যমান। সেই প্রসঙ্গ এ দিন উঠে এসেছে বক্তৃতায়।

দীপেশবাবুর মতে, বিশ্বায়নের বিশ্ব আদতে মানবসৃষ্ট। অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে আমেরিকা এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে যে প্রযুক্তির হাত ধরে পৃথিবী জয়ের লড়াই শুরু হয়েছিল তাতেই ক্রমশ নিজের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা বাড়িয়েছে মানুষ এবং ততই বেড়েছে বিশ্বের পরিধি। প্রকৃতির পরিধি তার থেকে অনেক আলাদা। এবং সেই সূত্রেই ক্রমশ প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে খবরদারি শুরু হয়। এই প্রসঙ্গেই এ দেশের বেআইনি খনি, বালি খাদানের কথাও বলেছেন ইতিহাসবিদ। আবার এ কথাও অস্বীকার করা চলে না, প্রযুক্তি বহু মানুষের জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে, নিম্নবর্গ বা প্রান্তিক মানুষের কাছে যা সুখানুভূতি।

সুখানুভূতি ও লোভের মধ্যে যে ফারাক তা-ও তুলে ধরা পড়েছে দীপেশবাবুর বক্তৃতায়। যে ভাবে ক্রমশ মানব সমাজ অরণ্য ধ্বংস করছে, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে প্রযুক্তিকে উন্নততর করছে তাতে প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারা বাধা

পাচ্ছে। তাতে জীব যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনই বাড়ছে পশু থেকে মানবদেহে বাসা বাঁধা পরজীবীবাহিত রোগ। কোভিডের প্রসঙ্গেও সেই আশঙ্কা দূর করা যায় না।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই বিশ্বায়নসৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপদের থেকে থেকে রক্ষা পাবে কি মানুষ? সেখানেও তো প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতাই তৈরি হচ্ছে। মৌমাছি কমে যাচ্ছে বলে পরাগমিলনের জন্য রোবট-মৌমাছি তৈরি হচ্ছে। তা হলে কি ভবিষ্যতে এমনই প্রযুক্তিনির্ভর মানব সভ্যতা থাকবে? নাকি প্রকৃতির পরিশোধে সভ্যতার সঙ্কট তৈরি হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AC Environment Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE