Advertisement
E-Paper

বাবা সরকারি চাকুরে, চিকিৎসক মেয়ে বিবাহবিচ্ছেদের পর নাম লেখান জইশ-এ! ধৃত শাহীন কাজ করতেন মাসুদের বোনের নির্দেশে

শাহীন সিদ্দীকীর গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল। বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে থাকা মহিলা চিকিৎসকের সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে ‘চমকপ্রদ’ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:২৭
Dr Shaheen Saeed And Delhi Blast

চিকিৎসক থেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মাথা! শাহীন সিদ্দীকী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দিল্লির লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরণের ঠিক আগের দিন লখনউ থেকে গ্রেফতার হন এক মহিলা চিকিৎসক। নাম শাহীন সিদ্দীকী। তাঁর গাড়ি থেকে মেলে আগ্নেয়াস্ত্র। শাহিন এবং তাঁর সঙ্গী, চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিলের সঙ্গে দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের সরাসরি যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরের কন্যা, পেশায় চিকিৎসক কী ভাবে জইশ-ই-মহম্মদের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মহিলা শাখার ‘অন্যতম প্রধান’ হলেন, তা-ই নিয়ে কৌতূহলী তদন্তকারীরাও।

গত সোমবার জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাসদমন শাখার (এটিএস) যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হন শাহীন। তার আগে ফরিদাবাদে একটি বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। উদ্ধার হয় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক এবং বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। ২০টি বোমার টাইমার, রিমোট এবং ওয়াকিটকিও ছিল ওই বিস্ফোরকের সঙ্গে। সেখান থেকে উঠে আসে ওই মহিলা চিকিৎসকের নাম। তাঁর গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল। বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে থাকা মহিলা চিকিৎসকের সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে ‘চমকপ্রদ’ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, একদা কানপুরের জেএসভিএম মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করতেন শাহীন। তবে চাকরি করতে করতেই ২০১৩ সালে আচমকা উধাও হয়ে যান। এর প্রায় ৮ বছর পর ২০২১ সালে চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, শাহীনের ডাক্তারি পড়াশোনা ইলাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) থেকে। বছর ২৫ আগে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পান। কর্মস্থল ছিল কানপুরের জেএসভিএম মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু ২০২১ সালে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২০০৯-’১০ সালে এক বার কনৌজের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে বদলি হয়েছিলেন শাহীন। ২০১৩ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়েই ছুটিতে চলে যান শাহীন। তার পর আর তাঁকে কলেজের কেউ দেখেননি।

শাহীনদের আদি বাড়ি লখনউয়ের খন্দারী বাজারে। বাবা সঈদ আনসারি বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। শাহীন বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। তাঁর দুই ভাই এবং এক বোন। মহারাষ্ট্রে জাফর হায়াত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই চিকিৎসকের। কিন্তু দাম্পত্য সুখের হয়নি। ২০১৫ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। কানপুরের চাকরি ছেড়ে ফরিদাবাদ চলে গিয়েছিলেন শাহীন। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিছু দিন তিনি লখনউয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু সেখান থেকেও হঠাৎ উধাও হয়ে যান। মনে করা হচ্ছে, ওই সময়েই সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ওই চিকিৎসকের। শাহীনের প্রাক্তন স্বামীও পেশায় চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, প্রাক্তন স্ত্রী চেয়েছিলেন পাকাপাকি ভাবে বিদেশে থাকতে। স্বামী-সন্তান নিয়ে বিদেশে সংসার করতে চাইতেন। এ নিয়ে তাঁদের মনোমালিন্য হয়। হায়াতের কথায়, ‘‘আমাদের বিয়ে হয়েছিল দেখাশোনা করে। অনেক দিন হল ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। ও কিন্তু কখনওই আধ্যাত্মিক ছিল না। খুবই ধর্মনিরপেক্ষ। তবে আমাদের মতপার্থক্যের কারণ ছিল ওর বিদেশে থিতু হওয়ার ইচ্ছা। আমাদের দুই সন্তান। তারা বা আমি, কেউই অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ যেতে চাইনি। এখন দুই সন্তান আমার কাছেই থাকে।’’ তিনি এ-ও জানান, শাহীন পালমোনোলজি-র অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি ডাক্তারি ডিগ্রি পান।

তদন্তে উঠে এসেছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা জামাত-উল-মোমিনীনের ভারতের প্রধান করা হয় ওই চিকিৎসককে। তিনি কাজ করতেন মাসুদ আজ়হারের বোন সাদিয়া আজ়হারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে। লখনউয়ে যে বাড়িতে শাহীন থাকতেন, সেখান থেকে তাঁর ভাই পরভেজ আনসারিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পরভেজও পেশায় চিকিৎসক। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর সন্দেহজনক নথি, হার্ড ডিস্ক এবং কয়েকটি মোাইল।

জাতীয় তন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এই মামলার তদন্ত করছে। তারা শাহীনের অ্যাকাডেমিক রেকর্ড থেকে সমাজমাধ্যমের প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্ট এবং বিদেশি-যোগের খোঁজখবর করছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, মূলত সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন শাহীন।

অন্য দিকে, সন্তানদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগ রয়েছে, এ কথা বিশ্বাসই হচ্ছে না শাহিন-পরভেজের বাবার। তিনি জানিয়েছেন, বছর দেড়েক ধরে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের কাছ থেকে ওর গ্রেফতারির খবর পাই। বিশ্বাস হচ্ছে না যে, মেয়ে এত পড়াশোনা করে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হতে চেয়েছিল ও। মানুষের সেবা করা ছিল ওর লক্ষ্য। ডাক্তার হয়ে সে মেয়েই কিনা মানুষ-হত্যার কাজে নাম লেখাল? বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ প্রৌঢ় এ-ও জানান, বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন মেয়ে। ক্রমশ পরিবারের সকলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

Delhi Blast arrest JeM Masood Azhar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy