কারও সঙ্গে আলিঙ্গন, কারও সঙ্গে আবার করমর্দন করলেন, আবার কারও কারও পিঠ চাপড়ে দিলেন। চিনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে এমন নানা মেজাজে ধরা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনেকের মতে, তাঁর কথার মতো তাঁর ব্যবহার ও শরীরী ভাষা স্পষ্ট করে দিয়েছে, কে তাঁর বন্ধু, আর কে শত্রু!
এসসিও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চাঁদের হাট বসেছিল চিনের তিয়ানজিনে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করার পর এই প্রথম এক মঞ্চে এত জন রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখা গেল। সেই মঞ্চে মোদীর উপস্থিতি এবং রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তাঁর ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ব্যবহার ভারতের জন্য অনেক বড় বার্তা বলেও মনে করছেন অনেকে। আবার সেই সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে মোদীর প্রায় ‘সম্পূর্ণ উপেক্ষা’ করে যাওয়ার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।
ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে মোদীর চিন সফর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের দিকে নজর ছিল সকলের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে সংঘাতের পুরনো ইতিহাস ভুলে কাছাকাছি এসেছে ভারত-চিন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই পড়শি দেশের সম্পর্ক মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একমত হয়েছেন মোদী এবং জিনপিং দু’জনেই। চিনে ভারত এবং চিনের সঙ্গী হয়েছে নয়াদিল্লির পুরনো বন্ধু রাশিয়াও। অনেকের মতে ট্রাম্পকে প্রতিরোধ করতে এক অদৃশ্য ‘ত্রিদেশীয় অক্ষ’ গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সেই মঞ্চে আমেরিকাকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের নিশানা ছিল পাকিস্তানও।
এসসিও সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। তাঁকে দেখে এগিয়ে এসেছেন জিংপিংও। করমর্দন করে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীর সমস্যা থেকে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার আবহে ভারত-বিরোধী অবস্থান নেওয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগানের সঙ্গে মোদীর ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ব্যবহারও নজর কেড়েছে। পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ এর্ডোগানের পিঠ চাপড়ে দিলেও শাহবাজ়কে এড়িয়ে গেলেন মোদী। তাঁর দিকে ফিরেও তাকাননি তিনি। সম্মেলনের ফাঁকে মোদী এবং পুতিন যখন কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহবাজ়। কিন্তু দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কেউই ফিরেও তাকাননি শাহবাজ়ের দিকে। এসসিও সম্মেলনের সেই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) হতেই শোরগোল শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন:
চিনে এসসিও সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়েও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হন মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদে মদত নিয়ে কঠোর বার্তা দিলেন তিনি। আল কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনের নামও করেন। সাফ জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে কোনও দ্বিচারিতা থাকতে পারে না। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাহবাজ় জানান, সকল প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পাকিস্তান স্বাভাবিক, সুসম্পর্ক চায়। পাকিস্তানকে ‘শান্তিপ্রিয়’ দেশ বলে দাবি করেন তিনি। তবে তার পরেও ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে সন্দিহান অনেকে।