Advertisement
E-Paper

রসদ ফুরিয়ে গিয়েছিল! তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত অবস্থাতেও মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই বাহিনীর, কী ভাবে অভিযান

ওড়িশা এবং ছত্তীসগঢ়ের সীমানায় গরিয়াবন্দে কী ভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এক সংবাদমাধ্যমকে বর্ণনা দিয়েছেন রায়পুরের ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইজি) অমরেশ মিশ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০১
মাওবাদীদমন অভিযানে নিরাপত্তাবিহনী। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মাওবাদীদমন অভিযানে নিরাপত্তাবিহনী। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিরাপত্তাবাহিনী ভেবেছিল দেড় দিনেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সংঘর্ষ যে মাওবাদীরা তিন দিন ধরে টানবেন, এমনটা আঁচ করতে পারেনি বাহিনী। অভিযানের প্রথম বাধা ছিল দুর্গম এলাকা। দ্বিতীয় বাধা হয়ে ওঠে রসদ। দেড় দিনের মতো রসদ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ যত দীর্ঘ হয়েছে, রসদ তত কমেছে। একটা সময় তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই লড়াই চালাতে হয় বাহিনীকে। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েনি তারা। বরং আরও সুচারু ভাবে এবং সুকৌশলে মাওবাদীদের কোণঠাসা করেছিল।

ওড়িশা এবং ছত্তীসগঢ়ের সীমানায় গরিয়াবন্দে কী ভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এক সংবাদমাধ্যমকে বর্ণনা দিয়েছেন রায়পুরের ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইজি) অমরেশ মিশ্র। গত মঙ্গলবার গরিয়াবন্দে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৬ মাওবাদী নিহত হয়েছেন। সেই অভিযান কতটা দুঃসাহসিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তা সত্ত্বেও কী ভাবে পরিকল্পনামাফিক এবং পুরো প্রস্তুতি নিয়ে মাওবাদীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছিল, সেই বিবরণই দিয়েছেন আইজি।

তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার রাতে গোয়েন্দা সূত্রে খবর আসে কুলহাড়িঘাটে ওড়িশা এবং ছত্তীসগঢ় ক্যাডারের ২৫-৩০ জন মাওবাদীর একটি দল জড়ো হয়েছে। সেই দলে শীর্ষ নেতৃত্বও রয়েছেন। এমন কয়েক জন নেতা রয়েছেন, যাঁদের মাথার দাম কয়েক কোটি টাকা।’’ কী ভাবে টাকা তোলা হবে, কোথায় কোথায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া যাবে, পঞ্চায়েত নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার জন্য গরিয়াবন্দের জঙ্গলে হাজির হয়েছিলেন মাওবাদীরা।

আইজি জানিয়েছেন, তিন পর্বে অভিযানকে ভাগ করা হয়েছিল। পরিকল্পনা, কৌশল এবং নজরদারি। ই-৩০, কোবরা ২০৭, সিআরপিএফের ৬৫, ২১১ ব্যাটেলিয়ন এবং ওড়িশার স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) একসঙ্গে অভিযান শুরু করে। কুলহাড়িঘাটে পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যেতেই শুরু হয় সংঘর্ষ। মাওবাদীরা বাহিনীর গতিবিধি জানার জন্য ড্রোন ব্যবহার করছিলেন। কিন্তু সেই ড্রোনের নজরদারি এড়িয়ে মাওবাদীদের দিকে এগোচ্ছিল বাহিনী। তিন দিক থেকে মাওবাদীদের দলটিকে ঘিরে ফেলে যৌথবাহিনী। মাওবাদীদের পালানোর সব পথ আটকে দিয়েছিল ওড়িশার এসওজি। অন্য দিকে ছত্তীসগঢ়ের নিরাপত্তাবাহিনী বাকি বিষয়গুলিতে নজরদারি চালাচ্ছিল।

আইজি জানিয়েছেন, কুলহাড়িঘাট আদিবাসী প্রভাবিত এলাকা। ৭৫ কিলোমিটার জুড়ে পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা সাতটি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে এই এলাকা। এটি ‘নো-নেটওয়ার্ক জ়োন’। ১৫০০ মানুষ থাকেন এই কুলহাড়িঘাটে। সাতটি গ্রামের মধ্যে চারটি গ্রাম আবার পাহাড়ের উপরের দিকে। যা অত্যন্ত দুর্গম। এই এলাকাকেই নিজেদের গড় বানিয়েছিলেন ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদীরা। পাহাড়, ঘন জঙ্গল এবং দুর্গম পথকে ঢাল করে চলপতির মতো মাওবাদী শীর্ষনেতাদের অবাধ বিচরণ ছিল এই এলাকা। গ্রামবাসীরা খুব একটা লোকালয়ে আসেন না। সপ্তাহে এক বার রেশন সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ফলে প্রায় বিচ্ছিন্ন কুলহাড়িঘাটের এই সাত গ্রাম, বিশেষ করে পাহাড়ের উপরের চারটি গ্রামকে নিজেদের ডেরা বানিয়ে তুলেছিলেন মাওবাদীরা।

এই অভিযানে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চলপতি-সহ ১৬ মাওবাদী নিহত হয়েছেন। চলপতির মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকা। এ ছাড়াও আরও কয়েক জন শীর্ষনেতা ছিলেন ওই দলে, যাঁদের কয়েক জনের একসঙ্গে মাথার দাম পাঁচ কোটি টাকা। পুলিশের দাবি, ১৬ জন নয়, আরও বেশি মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে এই অভিযানে। তাঁদের দেহ নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন মাওবাদীরা।

Maoists Encounter Chhattisgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy