Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রীক্ষেত্রে বৃষ্টিধারা যেন ভক্তের আনন্দাশ্রু

ভক্তদের আবেগের কাছে হার মানল রথ ঘিরে পুলিশি ব্যবস্থা। কেউ, কেউ তখন রথে উঠে পড়েন। কেউ বা জড়িয়ে ধরেন জগন্নাথদেবের বিগ্রহ।

সমাগম: পুরীর রথের রশিতে টান। ঢল নেমেছে ভক্ত-দর্শনার্থীদের। শনিবার। পিটিআই

সমাগম: পুরীর রথের রশিতে টান। ঢল নেমেছে ভক্ত-দর্শনার্থীদের। শনিবার। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৩
Share: Save:

দুপুরের আগে প্রবল রোদেও পুলিশি ঘেরাটোপ সরিয়ে ঢুকে পড়েছিল বিহ্বল ভক্তের দল। শুক্রবার দুপুরে জগন্নাথদেব যখন ‘পাহুন্ডি বিজে’র অনুষ্ঠান শেষে তাঁর রথ নন্দীঘোষে আসীন হচ্ছেন।

কাছেই প্রশাসনের নির্দিষ্ট ছাদে বসে রয়েছেন বিশিষ্ট অতিথিকুল। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ম মন্ত্রী তথা ওড়িশার বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান প্রমুখ। ভক্তেরা কেউ রথ চলার সময়ে তা স্পর্শ করতে পারবে না-বলে সরকারি কর্তাদের নিদান তখন আর ধোপে টিকল না। বা বলা ভাল, ভক্তদের আবেগের কাছে হার মানল রথ ঘিরে পুলিশি ব্যবস্থা। কেউ, কেউ তখন রথে উঠে পড়েন। কেউ বা জড়িয়ে ধরেন জগন্নাথদেবের বিগ্রহ। পরে মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তথা রথের সময়ে জগন্নাথদেবের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা দয়িতাপতি পান্ডাদের অন্যতম মনিটর বা বড়গ্রাহী রামচন্দ্র দয়িতাপতি মৃদু ক্ষোভের সুরে বললেন, ‘‘পুলিশপ্রহরা আরও মজবুত হওয়া উচিত ছিল।’’

তবে দিনের শেষে মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক, আইএএস-কর্তা প্রদীপ্তকুমার মহাপাত্র নিশ্চিন্তির হাসি হেসে বললেন, ‘‘প্রভু উতরে দিয়েছেন!’’ শনিবার বলে কথা! তাই প্রশাসনের আন্দাজমাফিক ভিড়টা অন্য বারের থেকে কিছুটা বেশি, ১৫-২০ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলেছিল। সকালের খর রোদে অসুস্থও হয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন ভক্ত। কিন্তু দুপুরে রথ টানা শুরুর আগেই আকাশ কালো করে আবহাওয়া আচমকাই স্নিগ্ধ হয়ে উঠল।

সকালে পাহুন্ডি বিজে-র অনুষ্ঠানে সুভদ্রা, বলরাম, জগন্নাথের গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে দয়িতাপতি পান্ডাদের কাঁধে কাঁধে রথে ওঠেন। ওড়িশার লোকনৃত্য গোটিপুয়ার
শিল্পী নারীবেশি পুরুষের দল, শ্রীক্ষেত্রে হাজির হনুমানবেশী ভক্তেরা তখন আসর মাতিয়ে রেখেছেন। দুপুরে আবহাওয়া পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠল। তখনই পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী রথে উঠে জগন্নাথ দর্শন করেন। এর পরেই পাল্কি করে হাজির হন পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব। শুরু হয় সোনার ঝাড়ু হাতে প্রভুর পথ পরিষ্কারের রীতি ‘ছেরা পহরা’র অনুষ্ঠান।

অন্য বারের তুলনায় কিছুটা আগে-আগেই একে একে তিনটি রথ চলতে শুরু করেছিল এ দিন। প্রথমে জগন্নাথের বড়দা বলভদ্রের রথ ৪৪ ফুট উঁচু তালধ্বজের ১৪টি চাকা গড়াতে শুরু করে। এর পরে ১২ চাকার ৪৩ ফুট উচ্চতার রথ সুভদ্রার ‘দর্পদলন’-এর পালা। জগন্নাথের রথ নন্দীঘোষ ৪৫ ফুট উঁচু। তার ১৬টি প্রকাণ্ড চাকা। কোনও কোনও বার সব আচার-অনুষ্ঠান মিটিয়ে নন্দীঘোষ চলা শুরু করতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। এ দিন কিন্তু বিকেল সাড়ে তিনটের মধ্যেই জগন্নাথের রথও যাত্রা শুরু করে। তত ক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়েছে শ্রীক্ষেত্রে। রথের রশির স্পর্শ পেতে উন্মুক্ত ভক্তেরা মেতেছেন আনন্দস্নানে।

রামচন্দ্র দয়িতাপতি বলছিলেন, অন্ধকার করে ঝেঁপে বৃষ্টি এল বলে রথ একটু থেমে থেমে চলছিল। সন্ধ্যার মুখেই সুভদ্রা, বলরামের রথ তিন কিলোমিটার দূরে গন্তব্য গুন্ডিচা মন্দিরে পৌঁছে যায়। জগন্নাথের রথও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। সন্ধ্যার পরে রীতিমাফিক রথের আর এগোনর নিয়ম নেই। জগন্নাথের রথের বাকি যাত্রাটুকু আজ, শনিবার সকালে সম্পন্ন হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rath Rath Yatra 2018 Puri Jagannath Temple Devotees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy