E-Paper

মাঠ তো ছাড়িনি, লড়ে যাব, বলছেন মানিক

বছরের পর বছর ধরে ত্রিপুরার সিপিএমের মুখ বলতে গোটা দেশ মানিক সরকারকেই জানে। তিনি এ বারের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন।

 সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪০
Picture of manik sarkar.

মানিক সরকার। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী

খেলা শুরুর আগে ‘ক্যাপ্টেন’ই তো সরে গিয়েছে! ম্যাচটা তার মানে ওরা হারবে, বুঝেই গিয়েছে! বলে চলেছে শাসক বিজেপি। প্রায় অনুরূপ বক্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসেরও।

ত্রিপুরার সিপিএমের টিম কি না ‘ক্যাপ্টেন’কেই বাদ দিয়ে নামতে গেল মাঠে! বিস্ময়ভরা প্রতিক্রিয়া আসছে গোটা দেশ থেকে।

বছরের পর বছর ধরে ত্রিপুরার সিপিএমের মুখ বলতে গোটা দেশ তাঁকেই জানে। সেই তিনি এ বারের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন। গুঞ্জন তৈরি হয়েছে রাজনীতিতে, হাতিয়ার পেয়েছে বাম-বিরোধীরা। ময়দানে না থেকেও তাই প্রবল চর্চায় মানিক সরকার!

প্রচারে রাজ্যের এ-মুড়ো থেকে ও-মুড়ো অবশ্য চষে বেড়িয়েছেন। গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য কেন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা, ব্যাখ্যা করেছেন। নিজের কেন্দ্র ধনপুরের মানুষের কাছে দলের নতুন প্রার্থীকে নিয়ে গিয়ে নবাগতকে জায়গা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। মাঠের বাইরের এই ঝোড়ো ইনিংসের মাঝে ধরা গেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘একে কি সরে দাঁড়ানো বলে? ভোটে দলের কাজে আছি, প্রচারে গিয়েছি। মাঠেই আছি আমি, খেলার শেষ পর্যন্ত! শুধু ত্রিপুরা নয়, দেশেও বিজেপির সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য সব রকম লড়াই চলবে।’’

কিন্তু মাঠের ভিতরে তো নেই! প্রার্থী তালিকায় এই প্রথম বার তাঁর নাম দেখা যাচ্ছে না। মানিকবাবু বলছেন, ‘‘সংসদীয় রাজনীতিতে অনেক দিন হল। সেই ১৯৭৯ সালে শুরু হয়েছিল। প্রথমে মুখ্য সচেতক। তার পরে ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রী। তারও পরে আবার বিরোধী দলনেতা। কোথাও না থামলে পরবর্তী নেতৃত্বকে জায়গা দেওয়া যাবে কী করে? এই যুক্তি দল মেনে নিয়েছে।’’

মেনে হয়তো নিয়েছে। কিন্তু ভোটের ত্রিপুরায় সিপিএম তথা বাম শিবিরে হঠাৎ একটা শূন্যতাও তৈরি হয়েছে। বাংলার উদাহরণ দিয়ে বললে, জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে এবং সরকারের মুখ হিসেবে যখন সরে গিয়েছিলেন, তত দিন্ উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জনমানসে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। ত্রিপুরায় ভোটের মাসখানেক আগে মানিকবাবুর অবসরের সিদ্ধান্তে সিলমোহরে সেই সুযোগ তৈরি হয়নি।

স্বয়ং মানিক অবশ্য এই নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ভোটেই নজর দিচ্ছেন। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় ত্রিপুরার মানুষের কাছে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, নির্বিঘ্নে গিয়ে ভোটটা দেওয়া যাবে কি না। মানিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্র বাঁচাতে গেলে এবং অধিকার ফিরে পেতে গেলে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। আর মুক্তি আসতে পারে ভোট দিলে তবেই। সুতরাং, নিজের বাঁচার স্বার্থেই ভোটটা আপনাকে দিতে হবে। এই কথাটাই বারবার মানুষকে বলছি। সিদ্ধান্ত তাঁদেরই নিতে হবে।’’

নিজের ভোট সেরে এসে নির্বাচনের দিন দলের রাজ্য দফতরে বসে নজরদারি চালাবেন মানিকবাবু। কিন্তু ফলাফলের দিন যত এগিয়ে আসবে, তৈরি হবে আর এক সঙ্কট। রাজ্যে ২০ বছর ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য ২৫ বছর কিন্তু এই শহরে মানিকবাবুর ব্যক্তিগত কোনও ঠিকানা নেই! মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারি আবাসনে থাকতেন। গত বার ফল বেরোনোর পরে ইস্তফা দিয়ে এসে কিছু দিন দলের দফতর সংলগ্ন ভবনের অতিথি-ঘরে থাকতেন সস্ত্রীক। বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে আবার সরকারি আবাস। এ বার ভোটেই দাঁড়াননি। মাথার উপরে ছাদ থাকবে তো? চেনা মেজাজে মানিকবাবু বলছেন, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টিতে এসেছিলাম কাজ করার জন্য। বাড়ি-সম্পত্তির জন্য নয়! ভোটের পরে কোথায় থাকব, তখন না হয় দেখা যাবে!’’

ঠিকানার ঠিক নেই। তবে রাজনীতির মাঠটা সত্যিই ছাড়েননি ত্রিপুরা সিপিএমের ‘ক্যাপ্টেন’!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Manik Sarkar Tripura CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy