‘ভাড়াটে খুনি’রা যদি রাজাকে খুন করতে ব্যর্থ হতেন, তা হলেও তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিকল্প উপায় ভেবে রেখেছিলেন সোনম। কী ছিল সেই প্ল্যান ‘বি’? তদন্তকারীরা জেরায় সেই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন।
সূত্রের খবর, বিয়ের পর ১৫ মে বাপের বাড়িতে চলে আসেন সোনম। চার দিনের মধ্যে রাজাকে খুনের পরিকল্পনা করেন। তাঁর ‘প্রেমিক’ রাজ এবং তাঁর তিন বন্ধুকে ডেকে নেন সোনম। তার পর একটি ক্যাফেতে বসে রাজাকে খুনের ‘ব্লুপ্রিন্ট’ও তৈরি করেছিলেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ক্যাফেতে বসেই ঠিক হয়েছিল রাজাকে খুনের প্রথম পরিকল্পনা যদি কোনও কারণে ভেস্তে যায়, তা হলে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোনম স্থির করেছিলেন, যদি তাঁর ‘প্রেমিক’-এর বন্ধুরা (যাঁদের ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে খুনের সুপারি দেওয়া হয়েছিল), খুন করতে না পারেন, তা হলে নিজস্বী তোলার বাহানায় রাজাকে পাহাড়ের ধারে নিয়ে গিয়ে ঠেলে ফেলে দেবেন। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, রাজা যাতে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে না পারেন, তার জন্যই ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর তাঁকে খুনের সুযোগও পাওয়া যাবে। এই পরিকল্পনা করেই রাজাকে বুঝিয়ে গুয়াহাটিতে নিয়ে যান সোনম।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজার মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটি ১০ টাকার নোটের নম্বর মিলেছে। কেন তাঁর মোবাইলে ওই নোটের নম্বর রয়েছে, তার উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তার পর তাঁর দেহ শিলঙের গভীর খাদে ফেলে দিয়েছিলেন। শিলং পুলিশ লাগাতার জেরা করছে সোনমকে। তবে যে বিষয়টি পুলিশকে স্তম্ভিত করছে সেটি হল, রাজাকে খুনের পর ইনদওরে গিয়েছিলেন সোনম। রাজের সঙ্গে দেখাও করেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুরে সোনম তা হলে গেলেন কী ভাবে? ইনদওর থেকেই কি সেখানে গিয়েছিলেন? ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই কি এই পরিকল্পনা করেছিলেন? পুলিশ মনে করছে, পুরোটাই সাজানো ঘটনা। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই এই ছক। যদিও সোনম বার বার দাবি করে চলেছেন, রাজাকে তিনি খুন করেননি। তবে তাঁর চার সঙ্গী খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি সোনমের নির্দেশেই যে রাজাকে খুন করা হয়েছে, পুলিশকে সে কথাও জানিয়েছেন ধৃতেরা।
গত ১১ মে রাজা এবং সোনমের বিয়ে হয়। ১৯ মে তাঁরা মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় যান। ২৩ মে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান রাজা এবং সোনম। গত ২ জুন রাজার দেহ উদ্ধার হয় সোহরার (চেরাপুঞ্জি) কাছে। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরেও সোনমের কোনও খোঁজ মিলছিল না। শিলম পুলিশ বেশ কয়েকটি দল গঠন করে তল্লাশি চালাচ্ছিল। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও সোনমের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এই তল্লাশি অভিযান চলাকালীন রাজাদের শেষ অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ।তাঁরা ২৩ মে মাওয়াখিয়াত গ্রাম থেকে নোংরিয়াতে যান। স্থানীয় এক গাইডের বয়ান জোগাড় করে পুলিশ। অ্যালবার্ট পেড নামে ওই গাইড জানান, সোনমদের সঙ্গে তিন জন হিন্দিভাষী পর্যটক ছিলেন। আর এখান থেকেই পুলিশের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। তার পরই তিন জনের খোঁজ শুরু হয়। সেই সূত্র ধরেই ৮ জুন উত্তরপ্রদেশের ইনদওর এবং মধ্যপ্রদেশের সাগর থেকে তিন ‘ভাড়াটে খুনি’ তথা রাজের বন্ধু বিশাল, আকাশ এবং আনন্দ গ্রেফতার হন। তার পর গ্রেফতার হন রাজ। ৯ জুন উত্তরপ্রদেশেরে গাজ়িপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সোনমকেও।