খড়্গপুর আজ যা ভাবে, পরশু তা-ই ভাবে বিশ্ব।
সুন্দর পিচাই গুগ্ল-এর কর্ণধার হওয়ার পর এমন দাবি করতেই পারে খড়্গপুর আইআইটি। গত রবিবারই ২০১৫ সালের কৃতী প্রাক্তনী (‘ডিস্টিংগুইশড অ্যালামনাস’) সম্মান দেওয়া হয় খড়গপুর আইআইটিতে। ১১ জন কৃতীর সেই তালিকায় সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন সুন্দর। তখনও তিনি গুগ্ল-এর সিইও নন, বরং ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড প্রোডাক্ট চিফ’। পুরস্কার নিতে আসতে পারেননি সে দিনের অনুষ্ঠানে। তার ৪৮ ঘণ্টা পর, মঙ্গলবার বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট সার্চ ই়ঞ্জিন গুগল্-এর সর্বোচ্চ পদে সুন্দর পিচাইকে দেখে আপ্লুত আইআইটি-র ছাত্র ও শিক্ষকরা।
তামিলনাডুর বাসিন্দা সুন্দর ১৯৮৯-১৯৯৩ খড়্গপুর আইআইটি-র মেটালার্জিক্যাল অ্যান্ড মেটিরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। যাঁরা তাঁর শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জন কল্যাণকুমার রায়। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে প্রবীণ মানুষটি বললেন, ‘‘শিক্ষকজীবনে আমার দেখা অন্যতম ভাল ছাত্র সুন্দর। ভীষণ ভাল উত্তর লিখত। একেবারে ঝরঝরে। এখনও খুঁজলে হয়তো ওর পরীক্ষার খাতা পেয়ে যাব।’’ কল্যাণবাবু আরও জানালেন, বাংলা বলতে না পারলেও দিব্যি বুঝতেন সুন্দর। প্রচুর বাঙালি বন্ধুও ছিল।
সুন্দরের অমায়িক স্বভাবের কথাও মনে পড়ছে কল্যাণবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘অসম্ভব মিশুকে ছিল ও। অপিরিচিত লোকের সঙ্গেও অনায়াসে মিশে যেত। আর সব সময় হাসিমুখ।’’ নিজের ব্যাচে সুন্দরই ছিলেন বরাবর সেরা। ১৯৯৩ সালে খড়্গপুর আইআইটি থেকেই বি টেক পাশ করে স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে হোয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ।
এ দিন আইআইটি-তে গিয়ে দেখা গেল, বর্তমান পড়ুয়ারা সুন্দরকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি গুগল্-এর সিইও হয়েছেন খবরটা পেয়েই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফেসবুকে খড়্গপুর আইআইটি-র পেজ থেকে সুন্দরকে অভিনন্দন জানানোর জন্য একটি ‘ইভেন্ট ক্রিয়েট’ করা হয়েছে। তাতে সুন্দরকে দিনভর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আইআইটি-র ছাত্র-প্রাক্তনীরা। পেজে বলা হয়েছে, সব শুভেচ্ছাবার্তাই সুন্দরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া আয়ুষ গৌতম, প্রিয়া মেটা-রা বলেন, “উনি আমাদের অনুপ্রেরণা। ধাতুবিদ্যা নিয়ে পড়েও সুন্দর যে ভাবে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন, তা অভাবনীয়।” সুন্দর যে হস্টেলে থাকতেন, সেই নেহরু হলের বর্তমান আবাসিকরাও তাঁকে নিয়ে গর্বিত।
রবিবারের অনুষ্ঠানে আর এক ‘ডিস্টিংগুইশড অ্যালামনি’ নাসা-র বিজ্ঞানী তথা চিত্রপরিচালক বেদব্রত পাইন সম্মান নিতে খড়গপুরে এসে ছিলেন। সুন্দরের কৃতিত্বে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ার শীর্ষে ওঠার মতো মেধা যে আমাদের দেশেই রয়েছে, সুন্দর তা আবার প্রমাণ করলেন।’’ আলাপ না থাকলেও দু’দিন আগেই সুন্দরের সঙ্গে পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় থাকায় বেদব্রত গর্বিত। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাপারটা কাকতালীয়। কিন্তু এটা ভেবে গর্ব হচ্ছে যে আমাদের প্রতিষ্ঠানেরই এক জন বিশ্বের এমন শীর্ষ পদে গিয়েছেন।’’ সুন্দর গত বছর খড়গপুরে ‘গ্লোবাল অন্ত্রপ্রেনর সামিট’-এ আসতে পারেননি। তবে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সামিটের উদ্বোধনী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। প্রাক্তনী বিভাগের ডিন সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার যখন কৃতী প্রাক্তনীর পুরস্কারের কথা বলা হল, সুন্দর জানালেন, ‘এখন যেতে পারছি না। সুযোগ পেলেই যাব।’’
এখন সেই সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছে খড়্গপুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy