Advertisement
২৯ জানুয়ারি ২০২৫

ডুবছে পিএফ-পেনশনের ২০ হাজার কোটি, অবসরের পাওনা অনিশ্চিত ১৪ লক্ষ কর্মীর

সঠিক হিসেব জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টাকার অঙ্ক ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি। ফলে ওই সব সংস্থার অবসরকালীন পাওনা-গণ্ডা আদৌ মেটানো যাবে কি না, বা গেলেও কতটা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:৪০
Share: Save:

বিপুল সংখ্যক আম জনতার প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশনের টাকা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার মেঘ। মধ্যবিত্তের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা এমন সংস্থায় খাটানো হয়েছে, যারা কার্যত গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে রয়েছে। ফলে অবসরকালীন পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন প্রায় ১৪ লক্ষ চাকুরিজীবী। তাঁদের পেনশন ও ভবিষ্যনিধি তহবিল থেকে খোয়া যেতে পারে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। এই আশঙ্কা থেকেই এ বার ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে পিটিশন ফাইল করেছে একাধিক সংস্থা।

সঙ্কটের সূত্রপাত কোথায়? মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীর পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলঅ্যান্ডএফএস)-কে। মুম্বইয়ের এই আর্থিক সংস্থার মূল এবং সহযোগী সংস্থাগুলি মিলিয়ে বর্তমানে বাজারে মোট দেনার পরিমাণ প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। আর এই সংস্থাতেই বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রভিডেন্ট ফান্ড-পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ঋণ, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে।

সঠিক হিসেব জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টাকার অঙ্ক ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি। ফলে ওই সব সংস্থার অবসরকালীন পাওনা-গণ্ডা আদৌ মেটানো যাবে কি না, বা গেলেও কতটা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিনিয়োগ ব্যাঙ্কের কর্ণধার জানিয়েছেন, আইএলঅ্যান্ডএফএস-এর ৪০ শতাংশ বন্ডই পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের। ফলে শঙ্কার মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে।

আরও পড়ুন: এ বার জোট গড়ে ভোটের ঘোষণা

আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তা ঘুরছিল কর্পোরেট শিবিরেও। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত সরাসরি পিটিশন দাখিল করল সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে অন্তত দশটি সংস্থা। তালিকায় রয়েছে এমএমটিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল, সিডকো, হাডকো, আইডিবিআই, এসবিআই এবং গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশ ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। বেসরকারি ক্ষেত্রে মামলায় অংশ নিয়েছে হিন্দুস্থান ইউনিলিভার এবং এশিয়ান পেইন্টস।

তবে এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। কারণ আর্জি জানানোর শেষ সময়সীমা রয়েছে ১২ই মার্চ পর্যন্ত। ফলে ওই পিটিশনে আরও অনেক সংস্থাই যুক্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতীয় কোম্পানি ল ট্রাইবুনালের ওই পিটিশনে উদ্বেগের কথা জানিয়ে সংস্থাকে দেউলিয়া আইনে পাওনা মেটানোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাগুলি।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের তরফে আইএলঅ্যান্ডএফএস-এর মুখপাত্র শরদ গোয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: রাফাল নিয়ে সিএজি রিপোর্ট মোদীকে ঢাল দিলেও তরোয়াল দিল বিপক্ষকে

তবে সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের শাখা ও সহযোগী সংস্থাগুলিকে তিন ভাগে মূল্যায়ন করা হয়েছে— সবুজ, হলুদ এবং লাল। জানানো হয়েছে, ৩০২টি সহযোগী ও শাখা সংস্থার মাধ্যমে ১৬৯টি ভারতীয়। এর মধ্যে ২২টি সবুজ তালিকায় রয়েছে, অর্থাৎবিপন্মুক্ত। ১০টি হলুদ, অর্থাৎ বিপদসীমার কাছাকাছি। শুধুমাত্র সুরক্ষিত গ্রাহকরাই (ব্যাঙ্ক) এই সংস্থাগুলি থেকে টাকা ফেরত পেতে পারেন। বাকিদের ক্ষেত্রে কোনও নিশ্চয়তা নেই। ৩৮টি সংস্থা লাল তালিকায় রয়েছে। এগুলি থেকে কোনও রকম বিনিয়োগই ফেরত পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে। বাকি ১০০টি সংস্থার মূল্যায়ন এখনও করা হয়নি। তবে এর মধ্যেও সিংহভাগ সংস্থায় বিপদ সঙ্কেত রয়েছে বলেই মনে করছেন কর্পোরেট বিশেষজ্ঞরা।

অথচ এই আইএলঅ্যান্ডএফএস-কেই প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশনের টাকা বিনিয়োগের সুরক্ষিত হিসেবে দেখতেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ এই সংস্থার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এসবিআই, এলআইসি-র মতো প্রতিষ্ঠান। আবার এই ভরাডুবির আগে পর্যন্ত এই সংস্থাকেই ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলি ‘ট্রিপল এ’ তালিকাভুক্ত করে রেখেছিল। যার অর্থ, দারুণ রিটার্ন দিতে সক্ষম এই সংস্থার বন্ড, ডিবেঞ্চার বা ভবিষ্যনিধি ও পেনশন ফান্ডগুলি।

অন্য বিষয়গুলি:

Provident Fund Pension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy