কোথাও ভূমিধস, কোথাও হড়পা বান— সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে অবৈধ ভাবে গাছ কাটা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসাবে কেন্দ্র এবং চার রাজ্যকে নোটিস দিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ।
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রকাশ্যে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা নজিরবিহীন বৃষ্টি এবং বন্যার সাক্ষী রইলাম। আমরা পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে নোটিস দিয়েছি। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সেখানে অবৈধ ভাবে গাছ কাটা হচ্ছে।” একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিল যে, হিমাচলের নদীগুলিতে বহু কাঠের গুঁড়ি ভাসছে। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার জন্যই গুঁড়িগুলো নদীতে এসেছিল কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্র এবং চার রাজ্যের সরকারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের উত্তর দিতে হবে।
প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “উন্নয়ন আর পরিবেশের সুরক্ষার মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা উচিত।” শুনানির সময় সলিসিটর জেনারেল বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা প্রকৃতিকে নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছি। এখন সে তার শোধ তুলছে।” উত্তর ভারতের পাহাড়ে ঘেরা রাজ্যগুলিতে এ বার দীর্ঘ বর্ষা দেখা যাচ্ছে। অবিরাম টানা বর্ষণে হড়পা বান, মেঘভাঙা বৃষ্টি কিংবা ভূমিধসের মতো দুর্যোগ ঘটছে। ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম অগস্ট মাসে হিমাচল প্রদেশে এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই রাজ্যে পরিকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে তো বটেই, প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪০ জন।
উত্তরাখণ্ডে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা, অলকানন্দা, মন্দাকিনী। এই বর্ষায় সে রাজ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। কয়েক দিন আগেই জম্মুও কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার রাস্তায় ধস নামে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয় রামবন এবং রিয়াসি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। অন্য দিকে, গত চার দশকে কখনও এই বছরের মতো ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়নি পঞ্জাব। সে রাজ্যে প্লাবিত হয়েছে ১৪০০টি গ্রাম, বিস্তীর্ণ চাষের জমি।