গভীর রাতে গাড়ি পাননি। অগত্যা হৃদ্রোগে আক্রান্ত স্বামীকে বাইকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছিলেন স্ত্রী। কিন্তু ফিরিয়ে দেয় সেই হাসপাতাল। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে তার পর আর একটি হাসপাতালে ছোটেন স্ত্রী। কিন্তু ভর্তি নেয়নি তারাও। এর পর আরও একটি হাসপাতালে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দম্পতি। ভরা রাস্তায় হাতজোড় করে সাহায্য প্রার্থনা করেন যুবতী। সাড়া মিলল না। রাস্তায় পড়ে থাকা দুই যুবক-যুবতীর পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে টেম্পো, মালগাড়ি, ক্যাব। একই সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুরবস্থা এবং ব্যস্ত শহরের অমানবিক ছবি তুলে ধরল দেশের ‘সিলিকন ভ্যালি’ বেঙ্গালুরু!
দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর বালাজিনগরে বাড়ি পেশায় মেকানিক বেঙ্কটরমণনের। সোমবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ বুকে ব্যথা অনুভব করেন ৩৪ বছরের ওই যুবক। কোনও রকমে স্ত্রীকে ডাকেন। স্বামীকে দেখে চমকে যান স্ত্রী। দেখেন, গোটা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে। স্বামীকে হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাপচালিত ক্যাব বুক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আর ঝুঁকি নেননি। স্বামীকে বাইকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন তিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হাসপাতালে পৌঁছে যান। কিন্তু রোগীকে দেখার পর সেই হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়ে দেন ওই মুহূর্তে এমন রোগীকে দেখার জন্য কোনও চিকিৎসক নেই।
দেরি না করে স্বামীকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান স্ত্রী। আবার বাইকে স্টার্ট দেন। কয়েক মিনিটে আরও একটি হাসপাতাল। সেখানে ইসিজি হয় বেঙ্কটরমণনের। জানা যায়, মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাঁর। কিন্তু ওই হাসপাতালও জানিয়ে দেয়, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। এমনকি, রোগীকে তারা আপদকালীন পরিষেবাও দিতেও অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের লোকজনকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন যুবতী। কর্ণপাত করেননি কোনও কর্মী। বরং পরামর্শ আসে, সময় নষ্ট না করে যে ভাবে এসেছেন, ওই ভাবে শিগ্গির পাশের হাসপাতালে চলে যান।
তা-ই করেছিলেন বেঙ্কটারামানণের স্ত্রী। কিন্তু বাইক নিয়ে কিছুটা যাওয়ার পরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তাঁরা!
রাস্তায় উল্টে আছে বাইক। দুই আরোহী গড়াচ্ছেন রাস্তায়। তাঁদের মধ্যে এক মহিলা উঠে হাতজোড় করে চিৎকার করছেন। সাহায্য চাইছেন— এই দৃশ্য দেখার পরেও ব্যস্ত রাজপথের কোনও গাড়িচালকের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অভিযোগ, একের পর এক গাড়ি তাঁদের পাশ দিয়ে চলে যায়। কোনও কোনও গাড়ি থেকে চালকের ভর্ৎসনাও ভেসে আসে। ওই ভাবে মিনিট ১৫ কেটে যায়। শেষমেশ একটি ক্যাবচালক থামে। তাঁকে সংক্ষেপে পুরো ঘটনার জানিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন যুবতী।
আরও পড়ুন:
কয়েক মিনিটের মধ্যে দম্পতিকে একটি হাসপাতালে পৌঁছে দেন সেই ক্যাবচালক। তবে দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসক জানান, বেঙ্কটরমণন আর বেঁচে নেই!
স্মার্ট সিটিতে বাস করেও স্বামীকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপে কেঁদেই চলেছেন সদ্য বিধবা। তিনি জানিয়েছেন, রাস্তা বা হাসপাতালে কেউ একজন যদি একটু আগে তাঁদের সাহায্য করতেন...।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে হয় বেঙ্কটরমণনের। সংসারে স্ত্রী ছাড়া আছে পাঁচ বছরের পুত্র, দেড় বছরের কন্যা এবং বৃদ্ধা মা। দুই খুদে হারাল বাবাকে। যুবতী হারালেন স্বামীকে। আর বৃদ্ধা মা হারালেন একমাত্র পুত্রকে। এর আগে তাঁর পাঁচ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
বেঙ্কটরমণনের পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ চায়নি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেনি। উল্টে মৃত বেঙ্কটরমণনের দুটো চোখ তারা দান করে দিয়েছে। ব্যস্ত বেঙ্গালুরুতে যদি কারও দৃষ্টিশক্তি ফেরে!