Advertisement
E-Paper

ধরিয়ে দিল বোতলের ছিপি, একপাটি চপ্পল, কালো গাড়ি! প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে খুনই করেছেন স্ত্রী, তাঁর প্রেমিক

ওই মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই ধরেছিল পুলিশ। হঠাৎ একটি সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাথায় এল ইনস্পেক্টর বিকে প্রকাশ এবং সাব-ইনস্পেক্টর সাহানা পাতিলের। সেখান থেকেই মোড় ঘুরে গেল তদন্তের।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ২০:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

কয়েক ফুট দূরে কালো গাড়ি দাঁড় করানো। গাড়ির মালিকের দেহ সামনের রাস্তায় পড়ে আছে। পাশে পড়ে রয়েছে একটি বিষের খালি বোতল। পুলিশ যখন অকুস্থলে পৌঁছোয়, তখন দেহের পাশে বসে চিৎকার করে কাঁদছেন স্ত্রী। নিথর দেহের উদ্দেশে বার বার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, ‘‘কেন এই কাজ করলে? কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে?’’

প্রাথমিক ভাবে ওই মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই ধরেছিল পুলিশ। হঠাৎ একটি সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাথায় এল ইনস্পেক্টর বিকে প্রকাশ এবং সাব-ইনস্পেক্টর সাহানা পাতিলের। সেখান থেকেই মোড় ঘুরে গেল গোটা তদন্তের। স্বামীকে বিষ খাইয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন স্ত্রী এবং তাঁর প্রেমিক। বেঙ্গালুরু দক্ষিণ জেলার ঘটনা।

মৃতের নাম লোকেশ কুমার। বয়স ৪৫ বছর। কৃষ্ণপুরাদোদ্দির ওই বাসিন্দার একটি মাংসের দোকান ছিল। তা ছাড়াও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তিনি। এলাকায় পরিচিতি ছিল। স্ত্রী চন্দ্রকলা আবার বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা।

গত ২৩ জুন স্বামীর অকস্মাৎ ‘আত্মহত্যার’ পরের দিন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন পঞ্চায়েত সদস্যা চন্দ্রকলা। ওই বৈঠকে স্বামীর মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে তিনি এত কান্নাকাটি করেন যে, কয়েক জন সাংবাদিকের চোখেও জল চলে আসে। মানসিক কারণে ব্যবসায়ী তথা রাজনীতিকের আত্মহত্যার খবর ফলাও করে ছাপা হয় দৈনিকে। ওই ভাবে আরও কয়েক দিন যায়। তত দিনে লোকেশের আত্মহত্যার ‘তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন স্ত্রী চন্দ্রকলা।

কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর কয়েক দিনের মধ্যে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা অবাক করে দেয় প্রতিবেশীদের। পুলিশের কানে ওই কথা তোলেন কয়েক জন। তার পরেই আত্মহত্যার মামলা ঘুরে যায় খুনের দিকে! তদন্তকারী ইনস্পেক্টর এবং সাব-ইনস্পেক্টরের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘‘যদি গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে থাকেন লোকেশ, তা হলে বিষের বোতলের ছিপিটা কোথায় গেল?’’

ছিপিটি মেলেনি। তার মধ্যে আরও একটি খটকা লাগে তদন্তকারীদের। মৃতের এক পায়ে কেন চপ্পল ছিল? আর এক পায়ে চপ্পল পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার পর বিষ খেয়ে বোতলের ছিপি দূরে ছুড়ে ফেলে কে আত্মহত্যা করেন?

তক্কে তক্কে ছিলেন তদন্তকারীরা। তার মধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পান তাঁরা। মৃত্যুর কারণ হিসাবে বিষপানের কথাই লেখা ছিল রিপোর্টে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, কেউ বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলে তরলটি সরাসরি যকৃতে যাবে। কিন্তু লোকেশের ক্ষেত্রে বিষের কিছু অংশ আটকেছে বুকে। সন্দেহ গাঢ় হয় পুলিশের। লোকেশের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হয়। তাতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষজ্ঞেরা জানান, হয় লোকেশকে বিষ খেতে বাধ্য করা হয়েছিল নয়তো পুরো বিষের বোতল উপুড় করে তিনি গিলে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় সম্ভাবনা জোরালো বলে মনে হয়নি তাঁদের।

মৃত্যুর ঘটনার পুনর্তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তাতে আরও একটি তথ্য উঠে আসে। লোকেশের দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয় তার অদূরে একটি কালো রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। ওই মৃত্যুর রাতে স্থানীয় একটি হোটেল এবং পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করে পুলিশ। তাতেও ওই কালো রঙের গাড়িটির ছবি দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রলেখার ফোনের কল রেকর্ড বার করা হয়। তাতে আরও একটি তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, যোগেশ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রায়শই ফোনালাপ হয় লোকেশের স্ত্রীর। যোগেশ স্থানীয় পোস্ট অফিসে চাকরি করেন। ওই যুবকের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা যায় লোকেশের মৃত্যুর রাতে তিনিও ছিলেন অকুস্থলে! সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রকলা এবং যোগেশকে থানায় ডাকে পুলিশ। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় গোটা ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, লোকেশের স্ত্রী চন্দ্রকলার পরকীয়া রয়েছে যোগেশের সঙ্গে। দু’জনের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিলেন লোকেশ। অপমান, অশান্তির ভয়ে চন্দ্রকলা ঠিক করেন স্বামীকে খুন করবেন। তিনি সাহায্য চান যোগেশের। প্রেমিকাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পোস্ট অফিসের ওই কর্মী।

গত ২৩ জুন রাতে দোকান বন্ধ করে নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন লোকেশ। সদ্য কেনা একটি কালো গাড়িতে তিন সঙ্গীকে নিয়ে পিছু নেন যোগেশ। একটি নির্জন জায়গায় ইচ্ছাকৃত ভাবে লোকেশের গাড়িতে আলতো করে ধাক্কা দেন যোগেশ। গাড়ি থামিয়ে দেন লোকেশ। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হল কি না, দেখার জন্য তিনি গাড়ি থেকে নেমে আসেন। ঠিক তখনই চার জন মিলে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে গাড়িতে ফেলে মুখ খুলে গলায় ঢেলে দেন বিষ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটান অভিযুক্তেরা। তাই উত্তেজনার বশে বিষের শিশির ছিপিটা কোথাও ছুড়ে ফেলেছিলেন। আর ধস্তাধস্তির সময় লোকেশের এক পায়ের চপ্পল খুলে যায় রাস্তায়।

কিছু ক্ষণ পরে লোকেশের মৃত্যু হলে গাড়ি থেকে খানিক দূরে তাঁর দেহ শুইয়ে দেন অভিযুক্তেরা। পাশে ফেলে রাখেন ছিপিবিহীন বিষের শিশি। আত্মহত্যা করেছেন লোকেশ, এটা সকলকে বোঝানোর জন্য চেষ্টার খামতি রাখেননি অভিযুক্তেরা। তবে দুটো ভুলে ধরা পড়ে গেলেন সকলে। ইতিমধ্যে লোকেশ খুনে গ্রেফতার হয়েছেন স্ত্রী চন্দ্রকলা এবং তাঁর প্রেমিক যোগেশ। খুনে সাহায্যের জন্য সন্তরাজু, সি আনন্দ, জি শিব এবং আর চন্দন কুমার পাকড়াও করেছে পুলিশ।

Crime Bengaluru Murder Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy