দ্রাসের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে তাঁর দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের সূচনায় কার্গিল বিজয় দিবস কর্মসূচিতে নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের সময় তিনি কার্গিলেই ছিলেন! শুক্রবার প্রধানমন্ত্রিত্বের তৃতীয় মেয়াদে, ২৫তম কার্গিল বিজয় দিবসে মোদী সরাসরি কার্গিল যুদ্ধের শহিদ এবং বীর সেনানীদের অবমাননার অভিযোগ তুললেন পূর্বতন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে!
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের অন্তর্গত কার্গিলের অদূরে দ্রাস সেক্টরের যুদ্ধ স্মারকে (ওয়ার মেমোরিয়াল) গিয়ে শুক্রবার সকালে শহিদ সেনানীদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান মোদী। এর পর সরকারি সভায় পাকিস্তানি হানাদারদের পাশাপাশি নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহের সরকারকে। মোদী বলেন, ‘‘এর আগে যাঁরা কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিলেন, কার্গিলের সেনানীদের স্মৃতিতে কোনও স্মারক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেননি। শহিদদের প্রতি সম্মান দেখাননি।’’
কংগ্রেসের প্রতি জাতীয় নিরাপত্তায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে আমাদের সেনাকে দুর্বল করা হয়েছে। আমাদের বায়ুসেনার চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘তেজস’ যুদ্ধবিমান প্রকল্পকে হিমঘরে পাঠানো হয়েছিল। এরাই ‘ওয়ান র্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন’ নিয়ে মিথ্যাচার করেছিল।’’ অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা প্রসঙ্গেও বিরোধীদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।’’
কার্গিল যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘জাতির জন্য তাঁদের আত্মত্যাগ অমর হয়ে থাকবে। কার্গিল বিজয় দিবসে সর্বদা স্মরণ করা হবে তাঁদের।’’ পাশাপাশি, আড়াই দশক আগে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পার হয়ে হামলাকারী পাকিস্তানকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তান যখনই কোনও বেপরোয়া কাজ করেছে, তখনই পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে। তারা ইতিহাস থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি।’’ সফল হবে না জেনেও পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে নিরন্তর ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শুক্রবার দ্রাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিনখুন লা সুড়ঙ্গের নির্মাণের কাজের সূচনাও করেন মোদী।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে কার্গিল বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মোদী বলেছিলেন, ‘‘২০১৪ সালে শপথ নেওয়ার (প্রধানমন্ত্রী হিসাবে) পরে কার্গিল যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। যদিও কুড়ি বছর আগে যুদ্ধ যখন চরমে, তখন আমিও কার্গিলে গিয়েছিলাম। শত্রু (পাক সেনা) পাহাড়ের উপরে বসে নিজেদের খেলা খেলছিল। মৃত্যু সামনে ছিল। তবু আমাদের জওয়ান তেরঙ্গা নিয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রচেষ্টা করছিলেন। এক জন সাধারণ নাগরিকের মতো আমি সেনাবাহিনীতে থাকা সেনার শৌর্যকে প্রণাম করেছিলাম। কার্গিলের বিজয়স্থল আমার কাছে তীর্থস্থল।’’
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় মোদী ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এর দু’বছর পরে তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এক জন রাজনৈতিক পদাধিকারী হিসাবে যুদ্ধ চলাকালীন তিনি কী ভাবে কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্রে গেলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল সে সময়। এর পরে কার্গিলে সেনাদের সঙ্গে ১৯৯৯ সালে তোলা তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন মোদী। জানিয়েছিলেন, সেই সময়ে তিনি দলের তরফে কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। কার্গিল যুদ্ধের সময়ে সেখানে গিয়েছিলেন সেনাদের উৎসাহ দিতে। হাসপাতালে গিয়ে আহত সেনাদের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy