বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে পুণের একটি জমি। আর তা নিয়েই সরগরম মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। মুন্ধওয়ায় একটি সরকারি জমি বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিনেছে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারের পুত্র পার্থ পওয়ারের সংস্থা। বিরোধীদের কটাক্ষের মাঝেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। যদিও বেআইনি ভাবে সরকারি জমি বিক্রি নিয়ে যে এফআইআর হয়েছে, তাতে নামই নেই পার্থের। পার্থের বাবা অজিত জানিয়েছেন, তাঁর পুত্র জানতেন না, যে জমিটা তাঁর সংস্থা কিনেছে, তা আদতে সরকারের।
নাগপুরে ফডণবীস বলেন, ‘‘যাঁরা জানেনই না এফআইআর আসলে কী, তাঁরাই ভিত্তিহীন অভিযোগ করে চলেছেন। এফআইআর যখন রুজু হয়, তখন যে সব পক্ষ জড়িত থাকে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে হয়। এই মামলায় সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করা হয়েছে।’’
শিবসেনা (ইউবিটি) এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, পুণেতে যে জমি বিক্রি করা হয়েছে, তার মূল্য প্রায় ১,৮০০ কোটি টাকা। খাতায়কলমে তা কম করে দেখানো হয়েছে। পার্থের সংস্থা আমেডিয়া এন্টারপ্রাইজ়কে মাত্র ৩০০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ২১ কোটি টাকার স্ট্যাম্প ডিউটিও মকুব করার অভিযোগ উঠেছে।
এফআইআরে কার নাম?
পার্থের ব্যবসায়ী অংশীদার দিগ্বিজয় পাটিলের নাম রয়েছে এফআইআরে। আমেডিয়া সংস্থায় যেখানে পার্থের ৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, সেখানে দিগ্বিজয়ের শেয়ার রয়েছে এক শতাংশ। বেআইনি চুক্তি এবং স্ট্যাম্প ডিউটি না দেওয়ার অভিযোগে দু’টি এফআইআরে নাম রয়েছে দিগ্বিজয়ের। তাঁর পাশাপাশি এফআইআরে নাম রয়েছে শীতল তেজওয়ানি নামে এক ব্যক্তির। তিনি বিক্রেতাদের হয়ে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে রেখেছিলেন। রাজস্ব দফতরের দুই আধিকারিকেরও নামে রয়েছে, যাঁদের ইতিমধ্যে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সাব-রেজিস্ট্রার রবীন্দ্র তারু এবং পুণের তহশিলদার সূর্যকান্ত ইয়েওয়ালে। রবীন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্ট্যাম্প ডিউটি না নিয়েই রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। সূর্যকান্ত নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি পক্ষকে মালিকানার অধিকার দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তা ছাড়াও ২৭২ জনের নাম রয়েছে এফআইআরে।
অজিত পওয়ারের এনসিপি এবং একনাথ শিন্দের শিবসেনা (শিন্দেসেনা)-র সঙ্গে জোট গড়ে মহারাষ্ট্রে সরকারে রয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস বলেন, ‘‘তদন্তের সূত্রে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে বলে জানা গেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন যে এফআইআর হয়েছে, তাতে কাউকে রেয়াত করা হয়নি। অনুসন্ধানের রিপোর্ট এলে যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হবেন, সকলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’ এফআইআরে কেন নাম নেই অজিত-পুত্রের, সেই নিয়ে সরব বিরোধীরা। এএনআইকে ফডণবীস বলেন, ‘‘যখন এফআইআর রুজু হয়, তখন মামলায় যাঁরা জড়িত থাকেন, তাঁদের সকলের নাম থাকে। যাঁরা নথি সই করেছেন, যাঁরা বিক্রি করেছেন, যাঁরা বেআইনি ভাবে নথিভুক্তকরণ করেছেন, যাঁরা বদল করেছেন, সকলের নাম।’’ কেন পার্থের নাম নেই, সেই প্রশ্নে অজিত বলেন, ‘‘যাঁরা রেজিস্ট্রেশনের নথিতে সই করেছিলেন, একমাত্র তাঁদের নামই রয়েছে এফআইআরে।’’ তাঁর আরও দাবি, পার্থ জানতেনই না জমিটি বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কেন বিতর্ক?
পুনের মুন্ধওয়ায় ৪০ একর জমি বেআইনি ভাবে হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। ২৭২টি ছোট জমির সমষ্টি সেই ‘মাহার ওয়াতান’ ২০২৫ সালের ১৯ মে বেআইনি ভাবে হস্তান্তর হয় বলে অভিযোগ। অজিত পওয়ারের দাবি, কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। তাই চুক্তি বাতিল হয়ে গিয়েছে।
মাহার সম্প্রদায় (এখন তফসিলি জাতি)-কে নিজেদের রীতি পালনের ওই জমি দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে সেই জমি সরকারের হাতে চলে আসে। বলা হয়, সরকারের অনুমতি ছাড়া ওই জমি বিক্রি বা হস্তান্তর চলবে না। অভিযোগ, তা-ই ঘটেছে পুণেতে। ২৭২ জন জমির মালিক বেশ কয়েক বছর আগে প্যারামাউন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামে একটি সংস্থাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন। সেই সংস্থা আইটি পার্ক করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। অভিযোগ, নিয়ম না মেনে ওই সংস্থার স্ট্যাম্প ডিউটি ছাড়ের আবেদনও সরকার মেনে নিয়েছে বলে অভিযোগ। ৬ নভেম্বর এই নিয়ে এফআইআর দায়ের হয়। তার পরেই দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তারও আগে গত মে মাসে চুক্তি হওয়ার কয়েক দিন পরে ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর)-কে চিঠি লিখে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন এক সমাজকর্মী।