Advertisement
E-Paper

দেশভক্তি বাড়াতে সিনেমার আগে জনগণমন

নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ এবং দেশভক্তি ছড়িয়ে দিতে সমস্ত সিনেমা হল এবং মাল্টিপ্লেক্সে ছবি শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর নিদান দিল সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ এবং দেশভক্তি ছড়িয়ে দিতে সমস্ত সিনেমা হল এবং মাল্টিপ্লেক্সে ছবি শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর নিদান দিল সর্বোচ্চ আদালত।

বুধবার সু্প্রিম কোর্টে জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক একটি জনস্বার্থ মামলার সূত্রে বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ বলেছে, ‘‘জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান দেখালে মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা দেখানো হয়।’’ তাই প্রেক্ষাগৃহে যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজবে, পর্দায় দেখানো হবে জাতীয় পতাকার ছবি। সেই সময় দর্শকদের উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক। এ ভাবেই ‘দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদের প্রতি দায়বদ্ধতা দেশবাসীর মধ্যে চারিয়ে দেওয়া’ যাবে বলে মনে করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

এমনিতে দেশের আইনে অবশ্য কোথাও বলা নেই, জাতীয় সঙ্গীতের সময় দাঁড়িয়ে থাকা বাধ্যতামূলক। না দাঁড়ালে তার জন্য কোনও শাস্তিও ধার্য করা হয়নি। জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে উঠে দাঁড়ানোকে রীতি ও কর্তব্য বলেই ধরা হয়। গত বছর অসহিষ্ণুতা বিতর্কে দেশ যখন উত্তাল, তখনই ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি ভিডিও। যাতে দেখা যায়, মুম্বইয়ের একটি সিনেমা হল-এ জাতীয় সঙ্গীত চলার সময় না দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ কয়েক জনকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। প্রবল আপত্তি ওঠার পরে ভিডিওটি সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৩ সাল থেকে মহারাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো বাধ্যতামূলক রয়েছে।

কিন্তু ওই ভিডিওটি ‘ভাইরাল’ হওয়ার পরে এই বিতর্কই উঠেছিল যে, জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান করার জন্য কাউকে বাধ্য করা যায় কি না। সে সময় আইনকানুন দেখিয়েই বলা হয়েছিল, বিষয়টা বাধ্যতামূলক নয়। কেরলে আশির দশকে তিন খুদেকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তারা উঠে দাঁড়ালেও গান গায়নি। তখন সুপ্রিম কোর্টেরই পর্যবেক্ষণ ছিল: আইনে এমন কোথাও বলা নেই যে কাউকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করা যেতে পারে। কেউ যদি জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন না গেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাতেও অবমাননা হয় না। ১৯৭১ সালের ‘প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনর অ্যাক্ট’-এ দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে কিছু বলা নেই।

তা হলে সুপ্রিম কোর্ট আজ এমন নির্দেশ কী ভাবে দিল? প্রশ্নটা তুলছেন কেউ কেউ। অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি যেমন এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েও বলছেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করার প্রয়োজন কী? তাতে কি দেশপ্রেম বাড়বে?’’

সুপ্রিম কোর্টের মত অবশ্য স্পষ্ট, ‘‘স্বাধীনতা নিয়ে ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার কচকচি অনেক হয়েছে!’’ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি-কংগ্রেস সহ বেশির ভাগ দলই। স্বাগত জানিয়েছে বলিউডও।

ঘটনা হল, ষাট-সত্তর দশকেও ছবি শেষ হওয়ার পরে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হতো। ১৯৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধের পর থেকে চলটা শুরু হয়। কিন্তু ছবি শেষ হতেই বেশির ভাগ দর্শক হল ছেড়ে চলে যেতেন বলে কালেদিনে রেওয়াজটা উঠেও যায়। এ বারে ছবির আগেই জাতীয় সঙ্গীত বাজবে। জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ ও প্রস্থানের দরজা বন্ধ রাখতে হবে। যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে।

জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বাণিজ্যিক অপব্যবহারও চলবে না বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। জাতীয় সঙ্গীতের কোনও অংশ বা গোটা গানটি কোনও আপত্তিকর জায়গায় ছাপা যাবে না বলেও জানিয়েছে বিচারপতিদের বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতে উপস্থিত কেন্দ্রের প্রতিনিধি অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতাগি জানান, সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিবের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এই নির্দেশ। দশ দিনে তা কার্যকরও করা হবে। চলতি মামলার পরবর্তী শুনানি ২০১৮-র ১৪ ফেব্রুয়ারি।

ভারত ভাগ্যবিধাতা

• ছবি শুরুর আগে সব প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় সঙ্গীত

• সব দর্শকের উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক

• পর্দায় দেখাতে হবে জাতীয় পতাকার ছবি

• জাতীয় সঙ্গীতের বাণিজ্যিক অপব্যবহার নয়

• ১০ দিনের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে হবে

Patriotism film national anthem
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy