Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
India-China Clash

তিন দিনে তিন বার, লাদাখে ভারতীয় সেনাচৌকি দখলের চেষ্টা

গালওয়ানে গত জুনে ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে সামরিক এবং রাজনৈতিক স্তরে উভয় দেশ আলোচনার টেবিলে বসলেও উত্তেজনা প্রশমন হয়নি।

পূর্ব লাদাখ সীমান্তে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তৈরি রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ছবি: পিটিআই।

পূর্ব লাদাখ সীমান্তে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তৈরি রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ছবি: পিটিআই।

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৭
Share: Save:

পূর্ব লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। গত কয়েক দিনে ওই এলাকায় চিনা সেনার তৎপরতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, গত তিন দিনে তিন বার প্যাংগং লেকের কাছে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সেনার চৌকি দখলের চেষ্টা করে চিনা সেনা। ভারতীয় সেনা সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবে বসে নেই পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সেনা বাড়ানোর পাশাপাশি, সমরসজ্জাও বাড়াচ্ছে তারা। ওই এলাকায় যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তৈরি রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীও।

গালওয়ানে গত জুনে ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে সামরিক এবং রাজনৈতিক স্তরে উভয় দেশ আলোচনার টেবিলে বসলেও উত্তেজনা প্রশমন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে পিএলএ-র তৎপরতা জারি রয়েছে। সেনাবাহিনীর এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, দক্ষিণ প্যাংগং লেকের কাছে গুরুং হিল এবং রজাং লা হিলের মাঝামাঝি এলাকায় ভারতীয় সেনার চৌকি রয়েছে। চিন ওই চৌকিটি দখলের চেষ্টা করেছিল। ওই সেনা অফিসারের কথায়, ‘‘চৌকিটি দখলের প্রথম চেষ্টা হয়েছিল শুক্রবার। রবিবার ও সোমবার বিকেলে চিনা সেনা ফের ওই চৌকি দখলের চেষ্টা করে।’’ তিনি জানান, পিএলএ-র ওই এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সেনাদের বার্তা দিতে ‘ওয়ার্নিং শট’ (শূন্যে গুলি ছোড়া) করেছিল। সম্ভবত ওই চৌকিটি দখলের জন্যই সেনাদের একজোট করেছিল পিএলএ। ওই সেনা অফিসার বলেন, ‘‘ওই চৌকিটি যদি পিএলএ দখল করে নিত, তা হলে চিনের দিকে থাকা প্যাংগং লেকের অংশটির পুরো নিয়ন্ত্রণই বেজিংয়ের হাতে যেত।’’ চিনা সেনাচৌকি দখলের চেষ্টা ভারতীয় বাহিনী ব্যর্থ করেছে।

পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দু’দেশের সেনা কার্যত চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক সেনা অফিসার বলেন, ‘‘উভয় সেনাবাহিনীর মনোভাব অত্যন্ত আগ্রাসী। যে সব সেনা চৌকিগুলি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি আমরা কোনও ভাবেই দখল করতে দেব না।’’ ওই সেনা অফিসার জানিয়েছেন, গত তিন সপ্তাহে চুশুলের উচ্চ এলাকায় ভারতীয় সেনা বেশ কয়েকটি চৌকি তৈরি করেছে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘ওই সুউচ্চ জায়গাগুলিতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হওয়ায়, সেখান থেকে চিনের গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটির উপর নজর রাখতে সুবিধা হবে।’’ পূর্ব লাদাখ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে চিনের হোটান বায়ুসেনা ঘাঁটি। ওই সেনা অফিসার জানিয়েছেন, হোটান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে চিন জে-২০ যুদ্ধবিমান-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করছে। তিনি বলেন, ‘‘সুখোই-৩০ এমকেআই, জাগুয়ার ও মিরাজ ২০০০-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলিকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’’ সেনাবাহিনীর এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিন ধরে চুশুল সেক্টরে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর ভারতে থাকা সেনার বিভিন্ন বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চিনের যে কোনও তৎপরতার মোকাবিলা করতেই এই প্রস্তুতি।’’

আরও পড়ুন: পাহাড় চুড়ো খুইয়ে যুদ্ধের হুমকি চিনের, ফের গুলি নিয়ন্ত্রণরেখায়

শ্রীনগর এবং অবন্তিপোরায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতেও গত কাল রাত থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়ক দিয়েও সমরসরঞ্জাম পৌঁছচ্ছে সীমান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE