Advertisement
E-Paper

কমলা বেচেন তিরন্দাজ, তলব সর্বানন্দের

দিনের মতো সংসারের জোয়াল টানার টাকা জুটলে ফেরেন বাড়িতে। ঘরের কাজ মিটলে একরত্তি দুই বাচ্চাকে শেখান ধনুকে ছিলা পরানোর রীতিনীতি। এটাই রোজনামচা নামনি অসমের চিরাংয়ের বুলি বসুমাতারির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০১
মেডেল হাতে।

মেডেল হাতে।

জাতীয় সড়কের পাশে বসে কমলালেবু বেচেন দেশের চ্যাম্পিয়ন তিরন্দাজ!

দিনের মতো সংসারের জোয়াল টানার টাকা জুটলে ফেরেন বাড়িতে। ঘরের কাজ মিটলে একরত্তি দুই বাচ্চাকে শেখান ধনুকে ছিলা পরানোর রীতিনীতি। এটাই রোজনামচা নামনি অসমের চিরাংয়ের বুলি বসুমাতারির। জুনিয়র ও সিনিয়র পর্যায়ে তিনি এক সময়ের জাতীয় তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়ন।

সেই রোজনামচা এ বার বদলানোর আশায় রয়েছেন বসুমাতারি পরিবার। কারণ বুলির দুর্দশার কথা জেনে তাঁকে দিসপুরে তলব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। আগামী কাল দেখা করার সময় দিয়েছেন সর্বা। ভাল কোনও খবরের আশায় বুক বেঁধেছেন বুলিদেবী।

ছোট থেকেই লক্ষ্যভেদের নেশায় মেতেছিলেন বুলিদেবী। স্কুল পর্যায়ে তিরন্দাজিতে তাঁর প্রতিভা দেখে গুয়াহাটির ‘স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’য় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। ২০০৫ সালে অজমেরে জাতীয় সাব জুনিয়র পর্যায়ে দু’টি সোনা ও একটি রুপোর পদক জেতেন তিনি। পরের বছর মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে জাতীয় স্কুল গেমস প্রতিযোগিতায় তাঁর ঝুলিতে আসে একটি সোনা, একটি রুপো। জামশেদপুরে জাতীয় সিনিয়র তিরন্দাজির আসরে ৫০ মিটার বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন বুলিদেবী। দলগত বিভাগে পান রুপো।

এর পরই আচমকা ঘটে ছন্দপতন।

কমলার পসরা নিয়ে বুলি।

২০১০ সালে চোটের কারণে খেলাধুলো থেকে সরে আসতে হয় তাঁকে। আঘাত সারিয়ে ফেরার মতো রসদ বা সাহায্য পাননি কারও থেকে। আধা সেনায় চাকরির চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ভাল প্রশিক্ষক রাখা, ভাল তির-ধনুক কেনার পয়সা ছিল না। অগত্যা পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন বুলিদেবী। তিরন্দাজির স্বপ্নও কার্যত সেখানেই শেষ হয়।

শীতের সময় ভারত-ভুটান সীমান্তের কাছে সামথাইবাড়ি এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে কমলালেবুর পসরা নিয়ে বসেন বুলিদেবী। বছরের অন্য সময় অন্য কিছু। না হলে দিনমজুরি। এত কাজের মধ্যে দুই সন্তানের মা বুলিদেবী একেবারে কাছছাড়া করেননি তীর-ধনুককে। স্থানীয় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে চার জন ছাত্র জুটেছে তাঁর। অবসর সময় তাদের প্রশিক্ষণ দেন প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন। বুলিদেবীর দুর্দশার কথা জানতে কয়েক দিন আগে জানতে পারেন বড়ো নেত্রী তথা বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম। তিনি বুলিদেবীকে চাকরির আশ্বাস দেন। বিষয়টি জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। এক সময় চুটিয়ে খেলাধুলো করতেন সর্বানন্দ সোনোয়াল। ছিলেন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী। রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিভা তুলে ধরতে সব সময়ই চেষ্টা করেন তিনি। বুলিদেবীর কথা জানতে পেরে জেলাশাসককে জরুরি বার্তা পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে জানান, সোমবার বুলিদেবীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান। দ্রুত সেই খবর পৌঁছয় তিরন্দাজের বাড়িতে।

তবে আগেভাগে কোনও স্বপ্ন দেখতে চান না বুলিদেবী। তাঁর ইচ্ছা— কোথাও কাজ জুটলেও তাঁর সঙ্গে তির-ধনুকের যোগ যেন থাকে!

(ছবি: প্রীতম ব্রহ্মচৌধুরী।)

Buli Basumatary Archery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy