E-Paper

পাকিস্তান বাড়াবাড়ি করলে এ বার আরও বড় প্রত্যাঘাত

বৃহস্পতিবার লাহোরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ধ্বংস করেছে ভারত। এটা করতে পাকিস্তান বাধ্য করেছে ভারতকে।

অরুণ রায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৮:১৯
এস ৪০০ ট্রায়াম্ফ। ভারতের আকাশের অতন্দ্র প্রহরী।

এস ৪০০ ট্রায়াম্ফ। ভারতের আকাশের অতন্দ্র প্রহরী। ছবি: সংগৃহীত।

শুধু নয়টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়েই ‘বদলা’র শেষ, তেমনটা নয়। বরং শত্রুকে পুরোপুরি শেষ করার জন্য ভারতকে ইজ়রায়েল হতে হবে। ওই দেশের মতো ভারতকে তাদের নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। অন্যরা কী ভাবছে তা দেখতে গেলে চলবে না। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়ে সেই মনোভাব ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে।

তার পরে বৃহস্পতিবার লাহোরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ধ্বংস করেছে ভারত। এটা করতে পাকিস্তান বাধ্য করেছে ভারতকে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে ছিল, সন্ত্রাসবাদীদের
পরিকাঠামোই শুধু মাত্র লক্ষ্য করে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান কী করল? ৭ মে রাত থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় ভারতের একাধিক সেনা শিবিরকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা করল, বেশ কিছু এলাকায় গোলাবর্ষণের ফলে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু
হয়েছে। এটার কোনও প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি না। ভারতীয় সেনা তো পাকিস্তানের সেনা শিবির লক্ষ্য করে কিছু করেনি। কিন্তু তারা যখন এমন আচরণ করল, তখন ভারত তো প্রত্যাঘাত করবেই। পাকিস্তান বাড়াবাড়ি করলে, আরও বড় প্রত্যাঘাতের জন্য ওদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

যদিও অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা এখন চলছে, তাতে ‘হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স’ (স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গোয়েন্দা সূত্র তৈরি করা)-এ ফাঁক তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি ও সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখা অনেক সুবিধাজনক ঠিকই। কিন্তু মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের আলাদা গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সেটা যথাযথ ভাবে না থাকার জন্য এখনও পর্যন্ত বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালানো জঙ্গিদের নাগাল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমার মতে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে
প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আগের মতো বৃদ্ধি করতে হবে।

অতীতে কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের থেকে সরাসরি খবর মিলত। সেই তথ্য ঠিক কি না নিশ্চিত করতে আরও বেশ কিছু লোকজনকে কাজে লাগানো হত। কিন্তু এক সময়ে বিশেষ কারণে সাধারণ মানুষের থেকে আর খবর পাওয়া সম্ভব হল না। পরে ‘ইকওয়ান’ নামে গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল। যারা টাকার বিনিময়ে খবর দিত। কিন্তু কিছু সময় পরে দেখা গেল একই তথ্য সেনা থেকে আইবি, সিআরপিএফ, স্থানীয় পুলিশ সকলকেই দিচ্ছে ওই গোষ্ঠীর সদস্যেরা। তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে বেশি। তখন ওই গোষ্ঠীরও অবলুপ্তি ঘটল। এর পরে সেই ফাঁক তেমন ভাবে পূরণ হয়নি।

নিয়ন্ত্রণ রেখার এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যে সারা বছর গোলাগুলির লড়াই চলে। ভারত সব সময়েই প্রত্যাঘাত করছে তা কিন্তু নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন? আসলে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলি সাধারণ জনজীবনের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। আর, ভারত কখনওই বদলা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে মারবে না। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে শেষ পাঁচ-দশ বছরে ভারতের ‘স্ট্যান্ড অফ ওয়েপন’ (বহু দূর থেকে বিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র) অনেক উন্নত হয়েছে। সেখানে, প্রথমে ক্ষেপণাস্ত্রটি কোন অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে পাঠানো হবে সেটি স্থির করেই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সেই জায়গার ছবি তুলে নেওয়া হয়। সেই তথ্য বা ছবি চলে যায় ওই ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে। তাতে ক্ষেপণাস্ত্রের চোখ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির হয়ে যায়, যেটাকে বলা হয় ‘লক অন’। এর পরে ওই ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানে। ঠিক এমন ভাবেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ৯টি জঙ্গিঘাঁটি গুড়িয়ে দিয়েছে ভারত।

অরুণ রায়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, সেনাবাহিনী

অনুলিখন: শান্তনু ঘোষ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India Pakistan Clash India Pakistan Conflct

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy