Advertisement
E-Paper

সারোগেসির দালাল-চক্র ভাঙা যাবে কি?

বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ফিসফিস শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে দুশ্চিন্তায়। সরানো হচ্ছে ফাইলপত্র। ক্লিনিকের রেজিস্টার খুঁটিয়ে দেখে ‘বেঁফাস’ কোনও তথ্য রয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছেন অনেকেই। সাবধানের মার নেই।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪২

বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ফিসফিস শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে দুশ্চিন্তায়। সরানো হচ্ছে ফাইলপত্র। ক্লিনিকের রেজিস্টার খুঁটিয়ে দেখে ‘বেঁফাস’ কোনও তথ্য রয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছেন অনেকেই। সাবধানের মার নেই।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সারোগেসি বিল-এ সম্মতি জানানোর পরে শুধু গুজরাত নয়, কিছুটা ফাঁপরে পড়েছেন এ রাজ্যের চিকিৎসকদের একাংশও। বিভিন্ন জেলায় এঁদের এজেন্ট ছড়ানো রয়েছে। সেই এজেন্টরাই সারোগেট মাদার হওয়ার জন্য মহিলাদের খুঁজে বার করেন। কিন্তু নয়া বিলে বলা হয়েছে, নিকটাত্মীয়দের মধ্যে থেকেই সারোগেট খুঁজে আনবেন দম্পতিরা।

অথচ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এত দিন ডাক্তাররাই ছিলেন সারোগেসি প্রক্রিয়ার মূল কান্ডারি। সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নামও। কলকাতার ভবানীপুর, বেহালা, শ্যামবাজার, সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের নাম এই ব্যাপারে সামনে এসেছে।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন, ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গায়নোকোলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (ফগসি)-র শীর্ষ কর্তারা মানছেন, বাণিজ্যিক সারোগেসি-র সঙ্গে ডাক্তারদের একাংশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছেন। যে টাকা দম্পতির কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে, তার একটা বড় অংশই যাচ্ছে তাঁদের পকেটে।

নতুন বিল পাশ হলে ডাক্তাররা যেমন এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকতে পারবেন না, তেমনই চিকিৎসার খরচ ছাড়া সারোগেট মাদারও কোনও অর্থ পাবেন না। এটার বাস্তবায়ন কত দূর সম্ভব? বহু সারোগেট শিশুর জন্ম দিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার এমন এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও তো আইন রয়েছে। অঙ্গ কেনাবেচা তা হলে রমরম করে চলছে কী করে?’’

১৯৯৫ সালে এ রাজ্যে প্রথম সারোগেট মাদারের সাহায্যে নিজেদের সন্তানকে পৃথিবীতে এনেছিলেন ধানবাদের এক দম্পতি। ২০০৫ সালে এশিয়ার প্রথম একক পিতার সন্তানও জন্ম নেয় সারোগেসির মাধ্যমেই। কলকাতার যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ওই শিশুদের জন্ম হয়েছিল, সেই সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের কথায়, ‘‘ডাক্তার যখনই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ছেন, তখনই সর্বনাশ।’’ প্রবীণ চিকিৎসক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অনৈতিক কাজের জন্য তো সুভাষ মুখোপাধ্যায় আইভিএফ চালু করেননি। এ ব্যাপারে তাই সরকারি নজরদারিটা খুব জরুরি।’’

সারোগেসির জন্য টাকা নেওয়া বন্ধ হবে শুনে কিন্তু বিদ্রুপের হাসিই হাসলেন গড়িয়াহাট এলাকার এক অবাঙালি তরুণী। ইতিমধ্যেই দু’বার সারোগেট হয়েছেন। বললেন, ‘‘ক’টা পরিবারে আত্মীয়রা এগিয়ে আসবে সারোগেট মাদার হতে? আমাদের চাহিদা কমার কোনও ভয় নেই।’’ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘আত্মীয় রাজি না হলে কাউকে আত্মীয় সাজাতে হবে। সে সব গোপন রাখতে গিয়ে লাইসেন্সবিহীন নার্সিংহোমে প্রসব বেড়ে যাবে না তো!’’ ফগসি-র সদস্যা সনিয়া মালিক কিংবা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়েরও আশঙ্কা এটাই। তাঁদের কথায়, ‘‘দত্তক আইনে এখনও নানা জটিলতা। সারোগেসিও জটিল হলে সন্তানের জন্য আকুল দম্পতিরা আতান্তরে পড়বেন।’’

বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দাবি করেছেন, বাণিজ্যিক সারোগেসি বন্ধ করা হচ্ছে মেয়েদের শোষণ ঠেকানোর জন্যই। এতে শোষণ কি কমবে? তা নিয়েও আছে ভিন্ন মত। নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বললেন, ‘‘দরিদ্র মানুষ কত কাজই করেন। এই কাজে সমস্যা কোথায়? বরং লুকোচুরিতে় শোষণ বাড়বে।’’ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ও একমত। লুকোচুরি না রেখে অনাত্মীয়দেরও আইনি ছাড়পত্র থাকা উচিত বলে মনে করছেন তিনিও।

commercial surrogacy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy