Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনে সুর চড়াল দিল্লি

আজ এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, কৃষ্ণাঘাঁটি এবং সুন্দেরবানি এলাকাকে বেছে নিয়ে বুধবার লাগাতার গোলাবর্ষণ করেছে পাক বাহিনী।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

মঙ্গলবারের পরে বুধবারও। জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরির নৌশেরা এবং সুন্দেরবানি সেক্টরে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে দিনভর গুলি চালাল পাকিস্তানি সেনা। ছোড়া হয় মর্টারও। সেনা পোস্টের পাশাপাশি পাক বাহিনীর নিশানায় ছিল অসামরিক এলাকাগুলিও। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারত। দু’দেশের এই গুলিযুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবারও নৌশেরা এবং কৃষ্ণাঘাঁটি সেক্টরে দেদার গোলাগুলি চালিয়েছিল পাকিস্তান। বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযানের পর থেকেই পাকিস্তান লাগাতার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ দিল্লির।

আজ এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, কৃষ্ণাঘাঁটি এবং সুন্দেরবানি এলাকাকে বেছে নিয়ে বুধবার লাগাতার গোলাবর্ষণ করেছে পাক বাহিনী। তবে পাক গোলায় এখনও পর্যন্ত হতাহতের খবর নেই। নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর কড়া নজরদারি জারি রেখেছে ভারতীয় সেনা। ফের কোনও বড় হামলা হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে সেনা। সেনার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনী এখনও পর্যন্ত যে অভিযান করেছে, তা সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গি পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে। জনবসতি থেকে দূরেই এই অভিযান করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়।’

ভারতীয় সেনা ‘আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে, এমন কোনও ভুয়ো খবর যাতে পাকিস্তান ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই বিবৃতি দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক এবং সামরিক ভাবে ভারত বোঝাতে চাইছে, তাদের লড়াই পাকিস্তান নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এবং সেই লড়াই বজায় থাকবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর ফলে দু’টি উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে চাইছে ভারত। প্রথমত, আন্তর্জাতিক শিবিরকে বারবার এই বার্তা দেওয়া যে, পাক সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো এখনও চাঙ্গা এবং তাদের ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ চলছেই। দ্বিতীয়ত, আসন্ন নির্বাচনের আগে চড়া সুর বজায় রেখে সরকারের শক্তিশালী চেহারাকে তুলে ধরা।

এর মধ্যেই আজ মুখ খুলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উইং কমান্ডার অভিনন্দন যে মিগ-২১ বাইসন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নামিয়েছিলেন, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে আমরা বলেই দিয়েছি, পাক এফ-১৬ বিমানটি নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে গিয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে অভিনন্দনের ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও তৈরি করা হয়েছে। আমরা বারবার বলছি, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে ওঁর কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। কেউ যেন ওই সব অ্যাকাউন্ট ফলো না-করেন, সেগুলিতে ম্যালওয়্যার থাকতে পারে।’ ভারতীয় নৌসেনার তরফেও আজ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, উত্তর আরব সাগরে ইরানের একটি মাছ-ধরা নৌকাকে সাহায্য করেছে রণতরী আইএনএস খঞ্জর। নৌকাটির এক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাহায্যের বার্তা এসেছিল সেটি থেকে। এই বিবৃতির মধ্যেও পাকিস্তানের উদ্দেশে প্রচ্ছন্ন বার্তা দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, উত্তর আরব সাগর মানে এলাকাটি পাকিস্তানের কাছেই। আর পাকিস্তানের সঙ্গে যে ইরানের মনোমালিন্য লেগেই থাকে, সেই দেশের নৌকাকে সাহায্য করার কথা খোলাখুলিই লিখছে নৌবাহিনী। অর্থাৎ, বকলমে তিন বাহিনীই জানান দিয়েছে, সজাগ রয়েছে তারা।

১৩ মার্চ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রস্তাব পাশ হওয়ার কথা। বিষয়টি নিয়ে তুমুল কূটনৈতিক ‘লবিং’ চলছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির মধ্যে। চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী এই মুহূর্তে ইসলামাবাদে। ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে তিনি কথা বলছেন ইমরান খানের সরকারের সঙ্গে। তাঁর ভারতে আসারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর। আজহারকে বাঁচানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদে শেষ মুহূর্তে বেজিং ফের বিরোধিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা ।

গত কালই মাসুদের ছেলে ও তার ভাইকে আটক করেছে পাক সরকার। তবে ভারতের মতে, এর আগে যখনই মাসুদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের দিকে আঙুল উঠেছে, তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গিয়ে ‘আটক’ করার কথা বলেছে পাকিস্তান। এ বারেও তা-ই করেছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ceasefire Kashmir Indian Army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE