Advertisement
E-Paper

৩ মৃত্যুর বদলা, ভারতীয় সেনার পাল্টা হানায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হত ২০

ঘটনার সূত্রপাত গত কাল সন্ধ্যায়। ভারতীয় সেনার বক্তব্য, জম্মুর কাঠুয়ায় মনইয়ারি-চোরগলি এলাকা লক্ষ্য করে পাক রেঞ্জার্স মর্টার ছুড়লে আহত হন সাদিক আলি নামে এক ব্যক্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০৬
সেনার বক্তব্য, ভারতের গোলাবর্ষণে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা অন্তত তিনটি পাক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। পাক সেনা ও জঙ্গি মিলিয়ে নিহত অন্তত কুড়ি। ছবি: রয়টার্স

সেনার বক্তব্য, ভারতের গোলাবর্ষণে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা অন্তত তিনটি পাক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। পাক সেনা ও জঙ্গি মিলিয়ে নিহত অন্তত কুড়ি। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের জবাব দিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাল্টা গোলাবর্ষণ করল ভারত। তংধার সেক্টরে পাক হামলায় নিহত হন দুই সেনা ও এক গ্রামবাসী। সেনার বক্তব্য, ভারতের গোলাবর্ষণে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা অন্তত তিনটি পাক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। পাক সেনা ও জঙ্গি মিলিয়ে নিহত অন্তত কুড়ি।

এর আগে উরির সেনা ঘাঁটি এবং পুলওয়ামায় আধাসেনার উপরে হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারত। এ বার জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে সেনা। অন্য দিকে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোটের ঠিক এক দিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-আরজেডির মতো বিরোধী দলগুলি।

ঘটনার সূত্রপাত গত কাল সন্ধ্যায়। ভারতীয় সেনার বক্তব্য, জম্মুর কাঠুয়ায় মনইয়ারি-চোরগলি এলাকা লক্ষ্য করে পাক রেঞ্জার্স মর্টার ছুড়লে আহত হন সাদিক আলি নামে এক ব্যক্তি। এর পরে আজ ভোর রাত থেকেই কুপওয়ারার তংধার সেক্টরে বিনা প্ররোচনায় গুলি-গোলা চালাতে শুরু করে পাকিস্তান। সেনার সন্দেহ, সম্ভবত জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটাতেই ওই হামলা চালানো হয়। পাক হামলায় নিহত হন পদমবাহাদুর শ্রেষ্ঠ ও জামিলকুমার শ্রেষ্ঠ নামে দুই সেনা। পদমবাহাদুর অসমের গোলাঘাট জেলার বরপথারের বাসিন্দা। জামিলকুমারের বাড়ি নেপালের পাল্পায়। মৃত্যু হয় মহম্মদ সিদিক নামে তংধার এলাকার এক গ্রামবাসীরও। জবাবে তংধারের উল্টো দিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় থাকা জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় সেনা। মর্টারের পাশাপাশি বফর্সের মতো কামানও ব্যবহার করে ভারত। এ ক্ষেত্রে বফর্সের ব্যবহার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন প্রাক্তন মেজর জেনারেল পি কে সহগল। প্রাক্তন সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই জঙ্গি ঘাঁটিগুলি অস্থায়ী। প্রয়োজনে এগুলিকে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে নিয়ে আসে পাক সেনা। আবার প্রয়োজনে সরিয়ে নিয়েও যায়।’’

পাক মর্টার হামলায় বিধ্বস্ত জম্মুর মনইয়ারি এলাকা পরিদর্শনে সরকারি আধিকারিকেরা। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

সন্ধ্যায় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত বলেন, ‘‘জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতেই কামান ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাথমিক যে-তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে তিনটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে আর একটির। ৬-১০ জন পাক সেনা ও সমসংখ্যক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।’’ যে-ভাবে গোলাবর্ষণের পর থেকে জঙ্গি শিবিরগুলিতে রেডিয়ো নীরব হয়ে রয়েছে, তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সেনাপ্রধান।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পর থেকেই হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। পরিসংখ্যানই বলছে, তার পর থেকে ৬০০ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক বাহিনী।

প্রাক্তন মেজর জেনারেল পি কে সেহগলের বক্তব্য, ‘‘পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওরা চাইছে বরফ পড়ার আগে কাশ্মীরে বড় ধরনের জঙ্গি অনুপ্রবেশ করাতে।’’

ভারতের বক্তব্য
• শনিবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষবিরতি ভেঙে কাশ্মীরের তংধার ও জম্মুর কাঠুয়ায় হামলা চালায় পাকিস্তান।
• মর্টার ও গুলিবর্ষণ করে পাক বাহিনী।
• পাক হামলায় নিহত হন দুই সেনা ও এক স্থানীয় বাসিন্দা। তংধার ও কাঠুয়ায় আহত হন চার স্থানীয় বাসিন্দা।
• জবাবে রবিবার পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে চারটি জঙ্গি লঞ্চপ্যাড লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে ভারত।
• তাতে নিহত পাক সেনা ও জঙ্গি মিলিয়ে ২০ জন।

পাকিস্তানের বক্তব্য
• শনিবার সংঘর্ষবিরতি ভেঙে জুরা, শাহকোট ও নৌসেরি সেক্টরে গোলাবর্ষণ করে ভারত।
• নিহত হন এক সেনা ও পাঁচ স্থানীয় বাসিন্দা।
• পাক জবাবে ন’জন ভারতীয় সেনা নিহত।

সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ মূলত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় জুরা, অঠমুকাম ও কুন্ডালসাহি-তে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এতে লস্কর ই তইবা, জইশ ই মহম্মদ জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ সকালে তংধার সেক্টর লক্ষ্য করে পাকিস্তানের যে বাঙ্কার থেকে হামলা চালানো হয়েছিল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেটিও। অন্য দিকে পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বক্তব্য, ‘‘ভারতের ওই হামলায় এক পাক সেনা ও পাঁচ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় বন্দুক আপাতত শান্ত। পাকিস্তানের কড়া জবাবের পরে এখন ভারতীয় সেনা সাদা পতাকা উড়িয়ে নিজেদের নিহতদের দেহ ও আহতদের সরিয়ে নিচ্ছে। ভারতের ৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। দু’টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়েছে।’’

ঘটনার ‘প্রতিবাদ’ জানাতে আজ ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার গৌরব অহলুওয়ালিয়াকে ডেকে পাঠায় সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক। পাশাপাশি ভারতের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি কতটা ‘ভিত্তিহীন’ তা প্রমাণে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ইমরান সরকার।

এ দিকে সেনা প্রত্যাঘাতে বিজেপি শিবির উল্লসিত হলেও, আগামিকাল নির্বাচনের ঠিক আগে এই ঘটনার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা অখিলেশ সিংহের কথায়, ‘‘যখনই বড় কোনও নির্বাচন আসে তখনই যুদ্ধের জিগির ওঠে। অতীতেও দেখা দিয়েছে। কাল দু’রাজ্যে নির্বাচন। তার আগে আবার সেই একই চিত্র দেখা গেল।’’ আরজেডি নেতা মনোজ ঝা’র কথায়, ‘‘প্রশ্ন সময় নিয়েই। কেন ঠিক ভোটের আগেই যুদ্ধ হয়, সেটাই আশ্চর্যের!’’

India Pakistan PoK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy