মানিক পাল।
ছোটবেলায় জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর বাবার। প্রবল দারিদ্র্যে দিন কাটত। জীবন-সংগ্রামে জিততে জিমন্যাস্টিক, নাচ আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। কোনও প্রশিক্ষকের কাছে তা শেখার সঙ্গতি ছিল না বলে বাড়িতেই দড়ি ঝুলিয়ে চলত কসরত।
অবশেষে মিলল স্বীকৃতি। সর্বভারতীয় বিনোদন চ্যানেলের জনপ্রিয় ‘ট্যালেন্ট শো’তে বিচারক শিল্পী, পরিচালক, অভিনেতা, পরিচালকদের তাক লাগিয়ে অসমের বরপেটার ২১ বছরের মানিক পাল জিতে নিলেন সেরা প্রতিভার শিরোপা। গত রাতে প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণার পর থেকেই উচ্ছ্বাস ছড়াল বরপেটায়। বরপেটা রোডের হরতকিতলার বাসিন্দা মানিক হারু পাল ও গীতাদেবীর দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৯৯ সালে জঙ্গিহানায় নিহত হন হারুবাবু। ৫ বছরের মানিকের তখনও কিছু বোঝার বয়স হয়নি। অভাবের সঙ্গে গাঁটছড়া তখন থেকেই। কোনও মতে সন্তানদের প্রতিপালন করতে থাকেন গীতাদেবী। তিনি জানান, ছোট থেকেই নাচতে ভালবাসতেন মানিক। কিন্তু, বরপেটায় নাচ শেখার স্কুলই বা কোথায়, টাকাই বা কে দেবে? তাই নিজের চেষ্টায়, টিভি দেখে বাড়িতেই নাচ শিখতেন মাণিক। পরে দড়ির খেলা, জিমন্যাস্টিকও শুরু করেন। সংসারের অভাব মেটাতে কাজের খোঁজে প্রথমে কলকাতায় যান মানিক। সেখান থেকে মুম্বই।
বলিউডি সিনেমায় যে ভাবে একঝাঁক অপরিচিত তরুণ-তরুণী নাচের মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা দেখেছিলেন মানিকও। সেই রাস্তা ধরেই এগোচ্ছিলেন। শেষে মিলল সাফল্য। ওই অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে হাজির পরিচালক রেমো ডি’সুজা তাঁর পরের ছবিতে মানিককে কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। চূড়ান্ত পর্বে মানিকের প্রতিপক্ষ ছিলেন জিমন্যাস্ট যোগেশ্বরী মিস্ত্রী, ফিউশন গায়ক হরমনপ্রীত কৌর ও প্যারি জি, ছায়াচিত্র শিল্পী প্রহ্লাদ আচার্য, দু’টি নাচের দল। সকলকে পিছনে ৫০ লক্ষ টাকার চেক ও একটি গাড়ি জিতলেন মানিকই। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি এত জন সেরা শিল্পীকে হারাতে পারব। ফাইনালে ওঠাই আমার কাছে স্বপ্ন ছিল। ৫ বছর বয়স থেকে মায়ের দাঁতে-দাঁত চেপে লড়াই দেখেছি। দেখেছি কী ভাবে কষ্টকে, না পাওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হয়। এ বার মাকে একটু বিশ্রাম দিতে চাই।’’ গীতাদেবীকে মঞ্চে ডেকে, তাঁর হাতেই চেক তুলে দেন মানিক। তিনি জানান, পুরস্কারের টাকায় একটি বাড়ি গড়বেন। তৈরি করবেন গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য একটি জিমন্যাস্ট ইনস্টিটিউট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy